তথ্য ও প্রযুক্তিঃ
বাংলাদেশের শ্রমিকরা আজ স্মার্ট শ্রমিকে পরিণত হয়েছে, কৃষকরা স্মার্ট কৃষকে পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশের অর্থনীতি হবে কাগজের টাকাবিহীন।
’স্মার্ট বাংলাদেশ ও সাইবার সিকিউরিটি’ শীর্ষক সেমিনারে এসব মন্তব্য করেছেন তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
‘ইনোভেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েটস (আইডিয়া) ফাউন্ডেশন’ ও হপলন লিমিটেড এর যৌথ আয়োজনে বঙ্গবন্ধু মিলিটারি মিউজিয়াম হলে তিনি আরও বলেন, সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিতে চারটি বিষয় প্রয়োজন— সচেতনতা এবং প্রশিক্ষণ, কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক সমন্বয় সাধন।
এছাড়াও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণেও চারটি বিষয় প্রয়োজন: স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সোসাইটি।
তাছাড়া ন্যাশনাল ডিজিটাল আর্কিটেকচার থাকলে এবং সেটি মেনে চললে আর তথ্য চুরির ঘটনা ঘটবে না বলেও জানান পলক।
আইডিয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এবং সাবেক সচিব, বিশ্বব্যাংকের সাবেক বিকল্প নির্বাহী পরিচালক এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)’র সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম. আমিনুল ইসলাম এর সভাপত্ত্বিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক, এমপি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগের সচিব মোঃ সামসুল আরেফিন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টেকনোহেভেন এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল্লাহ এন. করিম।
আলোচকদের মধ্যে সাইবার সিকিউরিটি স্মার্ট সিটিজেনদের জন্য করণীয় বলেন, বেসিস-এর সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআই-এর প্যানেল উপদেষ্টা সৈয়দ সাদাত আলমাস কবির; সাইবার নিরাপত্তা ক্ষমতা বৃদ্ধি ও একাডেমিয়ার ভূমিকা বিষয়ে বলেন, বুয়েট-এর কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ডিপার্ট্মেন্ট হেড, প্রফেসর মাহমুদা নাজনীন; এবং বাংলাদেশে সাইবার সিকিউরিটি কমপ্লায়েন্স: রেগুলেটরের ভূমিকা নিয়ে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালক আবু সাঈদ মো: কামরুজ্জামান, এনডিসি।
সেমিনার সঞ্চালনা করেন আইডিয়া ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও কো-চেয়ারম্যান, স্মার্ট বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক এবং প্রাক্তন মুখ্য সচিব মো: আবুল কালাম আজাদ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইডিয়া ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সদস্য ও সাবেক সিনিয়র সচিব, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ মোহাম্মদ শহিদুল হক।
ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন হপলন লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান সৈয়দ আহসান হাবীব।
মোঃ সামসুল আরেফিন বলেন, “ক্যাশলেস ও পেপারলেস কাঠামোগত উন্নয়নে তিনটি মূল বিষয় হলো ডাটা সেন্টার, সাইবার সিকিউরিটি ও ডিজিটাল সিগনেচার।
এর মধ্যে সাইবার সিকিউরিটি অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ যা রক্ষায় আইসিটি বিভাগ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় পর্যায়েই কাজ করে যাচ্ছে। সরকারী ডাটা সেন্টারগুলোর পাশাপাশি বেসরকারী ডাটা সেন্টারগুলোও বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। সাইবার বুলিং, অপরাধ ও পরামর্শের ৩৩৩৮ এবং ১৩২১৯ থেকে সেবা নেয়া যাবে।”
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে হাবিবুল্লাহ এন. করিম বলেন, বিভিন্ন সময়ে দেশে সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি ছিল এবং এখন যে নেই তা বলা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক, নির্বাচন কমিশন, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাদ যায়নি।
সাইবার আক্রমণের পরিণতি হিসেবে আর্থিক ও সুনাম ক্ষতি, তথ্য প্রকাশ। সাইবার আক্রমণের সাধারণ প্রকার হচ্ছে, ম্যালওয়্যার আক্রমণ, ফিশিং আক্রমণ, ডিনায়াল-অফ-সার্ভিস এবং ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়াল-অফ-সার্ভিস ইত্যাদি।
তিনি সুপারিশ করেন, সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান, সরকারের সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা এবং বেসরকারি খাত একত্রে কাজ করা।
সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সাইবার নিরাপত্তায় বিনিয়োগ করতে হবে গবেষণা ও উন্নয়ন করা।
মো: আবুল কালাম আজাদ বলেন, “আপনার যদি কোন সম্পদ থাকে তার নিরাপত্তার দায়িত্ব আপনার।
ডিজিটাল সম্পদটি যা আমাদের ব্যক্তি জীবন সহ সামাজিক অর্থনৈতিক জীবনের চালিকা শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে তার নিরাপত্তার জন্য আমরা কতটুকু দিয়েছি, কতটুকু দিতে পারি, কতটুকু দেয়া উচিত।
ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। মাঝে মধ্যে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা এবং প্রয়োজনে দু পেক্টর অথনেটিক চালু রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।”
কাজী এম. আমিনুল ইসলাম বলেন, “কোভিড এর আগে কম্পিউটার ব্যবহার কম ছিল এবং পরবর্তীতে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশের গঠনে প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত না করলে কেউ প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করবে না।
এই সচেতনতা বৃদ্ধিতেই আইডিয়া ফাউন্ডেশন কাজ করে যাচ্ছে এবং আমরা সকলে মনে করি দক্ষ ও যোগ্য জনবল নিয়োগের মাধ্যমে এই বিষয়টির উপর গুরুত্বারোপ করা উচিত যাতে করে অন্যান্য দেশের মতো আমাদের নাগরিকদের এই সমস্যা না পোহাতে হয়।”
সম্প্রতি বছরগুলোতে, বাংলাদেশ প্রযুক্তিগত দিক থেকে অগ্রগতি অর্জন করেছে উদ্ভাবন, এবং সংযোগের মাধ্যমে উন্নত দেশ। এই রূপান্তর, একটি পরিকল্পনা বাংলাদেশ উদ্যোগের উপাদান, বিভিন্ন সেক্টরকে অন্তর্ভুক্ত করে কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, সরকার এবং জনসেবা উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশকে আরো সমৃদ্ধশালী করতে তথ্য প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহার দিয়ে আগামী প্রজন্মকে সঠিকভাবে তৈরি করা ও গাইড করার জন্যে সাইবার সিকিউরিটির ভূমিকা নিয়েও মুক্ত আলোচনা পর্বে মতবিনিময় করা হয়।
উল্লেখ্য, ইনোভেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েটস (আইডিয়া) ফাউন্ডেশন’ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের উপর ফোকাস সহ উন্নয়ন সহযোগীদের একটি সংস্থা, স্বাধীন গবেষণা, নীতি বিশ্লেষণ, অ্যাডভোকেসি, উপদেষ্টা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে নিযুক্ত।
শিশির