প্রিয়াংকাকে নিয়ে ভারত জুড়ে ঝড়

’দুসরা ইন্দিরা গান্ধী আয়ি হ্যায়’

আন্তর্জাতিকঃ
উত্তর প্রদেশে স্লোগান শোনা যাচ্ছে, দুসরা ইন্দিরা গান্ধী আয়ি হ্যায়। এখনো তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে পা রাখেননি। শুধু ঘোষণা হয়েছে। কংগ্রেসের পদাধিকারী (এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক) করা হয়েছে ছোট্ট এক বিবৃতির মাধ্যমে। দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পূর্ব-উত্তর প্রদেশের। আর তারপর থেকেই রাজনীতিতে ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

প্রিয়াঙ্কাকে সবচেয়ে বেশি আলোচনার শিরোনাম করে তুলেছেন বিজেপি নেতারা। খোদ প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিজেপির ছোট-বড় নেতারা মন্তব্য করেছেন প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে। প্রিয়াঙ্কার চোখে-মুখে, হাসিতে, ব্যক্তিত্বে ইন্দিরা গান্ধীর সাদৃশ্য নিয়ে বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি নেতা সুশীল মোদি কিংবা মন্ত্রী বিনোদ নালরায়ণ ঝা রূপ নিয়ে যতই কটাক্ষ করুন না কেন, দেশের আম-জনতা প্রিয়াঙ্কাকেই ইন্দিরার উত্তরসূরি হিসেবে দেখতে চান।

আবার গান্ধী-নেহরু পরিবারের ১১তম প্রতিনিধি হিসেবে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দিতে যাওয়া ৪৭ বছরের প্রিয়াঙ্কাকে বিজেপির কাছ থেকে পরিবারতন্ত্রের আক্রমণও শুনতে হচ্ছে। রাজীব-সোনিয়ার কন্যা প্রিয়াঙ্কা এতদিন সক্রিয় রাজনীতিতে আসতে চাননি সংসারে মনোযোগ দেবেন বলে। তবে নেপথ্য থেকে কংগ্রেস রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন অনেক দিন ধরে। তবে এখন কেন প্রিয়াঙ্কা রাজনীতিতে আসতে রাজি হলেন, সে সম্পর্কে তার দাদা রাহুল গান্ধী বলেছেন, প্রিয়াঙ্কা এত দিন ওর সন্তানদের দিকেই বেশি নজর দিতে চাইত। তবে প্রিয়াঙ্কার দুই ছেলের মধ্যে বড় রাইহান এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া, আর মিরায়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখার পথে। ফলে প্রিয়াঙ্কার এখন দম ফেলার ফুসরত হয়েছে। এখনই তাই রাজনীতিতে যোগ দেয়ার প্রশস্ত সময় ছিল, সেটা বোনের সঙ্গে আগেই যে দাদা রাহুল আলোচনা করেছিলেন, সে কথাও জানিয়েছেন।

তবে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে প্রিয়াঙ্কা নিজে কী বলেন, সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছে সবাই। তবে এটা ঠিক যে, শাড়ি পরার স্টাইল, চুলের ছাঁট, মুখের হাসি, হাত নাড়ানোর ভঙ্গি সবেতেই ঠাকুমা ইন্দিরার ছাপ স্পষ্ট। ইন্দিরাও বলতেন, প্রিয়াঙ্কা অনেটাই আমার মতোই। খুবই সিরিয়াস। প্রিয়াঙ্কা নিজেও ঠাকুরমার সঙ্গে তার সাদৃশ্য অস্বীকার করেন না। একবার এক সাক্ষাৎকারে প্রিয়াঙ্কা নিজেই বলেছিলেন, আমি দেখতে হয়তো অনেকটাই আমার ঠাকুরমার মতো। ছোটবেলায় এমন একটা পরিবারে বড় হয়েছি যে পরিবারের কর্ত্রী ছিলেন তিনি। তাই তার প্রভাব তো আমার ওপর পড়েছেই। আর রাজনীতির সঙ্গে প্রিয়াঙ্কার মাখামাখি বাবা রাজীব গান্ধীর সঙ্গী হিসেবেই। ১৯৮৯ সালে রাজীব গান্ধীর হয়ে লোকসভা নির্বাচনে প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন সতেরো বছরের প্রিয়াঙ্কা। দিল্লির জেসাস অ্যান্ড মেরি কলেজ থেকে সাইকোলজিতে স্নাতক। বিয়ে হয়েছে রবার্ট ভদ্রর সঙ্গে।

তাদের দুই ছেলে। স্বামী রবার্টের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও অনেক চেষ্টাতেও তার আঁচ লাগানো যায়নি প্রিয়াঙ্কার গায়ে। বরং পরিবারের খাস তালুক বলে পরিচিত উত্তর প্র্রদেশে ১৯৯৯ সাল থেকেই প্রচার চালিয়ে আসছেন। গত একদশকে রায়বেরিলি ও আমেথিতে মা ও দাদার হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার পাশাপাশি সারা বছর ধরে সেখানে নানা সামাজিক কাজেও অংশ নিয়েছেন। ২০১৭ সালের উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে দলের নীতি নির্ধারকের ভূমিকায়ও থেকেছেন। আর ২০১৮ সালে কংগ্রেস অধিবেশনে রাহুল গান্ধীকে সভাপতি হিসেবে ঘোষণার সমস্ত প্রেক্ষাপট তৈরির কাজে যুক্ত ছিলেন প্রিয়াঙ্কা। তাই বিরোধীরা প্রিয়াঙ্কার রাজনীতির জ্ঞান নিয়ে বিদ্রুপ করলেও প্রিয়াঙ্কা ইতিমধ্যেই দলের মধ্যে প্রমাণ করে দিয়েছেন সাংগঠনিক ক্ষেত্রে তার দক্ষতা। মা সোনিয়া গান্ধীর অসুস্থতা ও দাদা রাহুলের ব্যস্ততার জন্য তার কাঁধে অলিখিতভাবে অনেক দায়িত্বই এসে পড়েছিল। সেই দায়িত্বের সাফল্যের নিরিখেই রাহুল বোনকে এবার সরাসরি সক্রিয় রাজনীতিতে এনে বিজেপিকে একটা ঝটকা দিয়েছেন। একই সঙ্গে ক্ষয়িষ্ণু দলকে উদ্দীপিত করেছেন। অন্যদিকে কংগ্রেসকে এড়িয়ে চলার জন্য যে বিরোধী নেতারা তৎপরতা শুরু করেছেন তাদেরও বার্তা দিয়েছেন, কংগ্রেস আবার শক্তিশালী হয়ে ওঠার লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি।

অবশ্য তিনটি রাজ্যের সাম্প্রতিক নির্বাচনে কংগ্রেসের সাফল্যই রাহুলকে অনুপ্রাণিত করেছে বোন প্রিয়াঙ্কাকে সক্রিয় রাজনীতিতে নামানোর সঠিক সময় নির্ধারণে। উত্তর প্রদেশের যে অংশে প্রিয়াঙ্কাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেই অংশে তাদের পরিবারের প্রতি আনুগত্যে পরীক্ষিত আমেথি এবং রায়বেরিলি যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী মোদীর বারানসী ও উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের গোরক্ষপুরও। তাই ঠাকুরমার ক্যারিশমার ঝলক প্রিয়াঙ্কা দেখাতে পারেন কি না সেদিকেই থাকবে সবার নজর।

-ডিকে

FacebookTwitter