অর্থনীতিঃ
বর্তমান বিশ্ব চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ শিল্পবিপ্লবের প্রধান নিয়ামক হবে প্রযুক্তি। প্রযুক্তিনির্ভর এ বিপ্লবের সুযোগ নিতে সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে যেসব বিষয় প্রধান নিয়ামকের ভূমিকায় থাকবে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ন্যানো টেকনোলোজি, রোবোটিক্স, ব্লকচেইন, এনার্জি স্টরেজ ও কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের মতো বিষয়।

এ শিল্পবিপ্লবের সুফল পেতে হলে তার জন্য উপযোগী জনবল কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়কে এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। এ কাজে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। একটি প্রতিষ্ঠান অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর অ্যাকাউন্টিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা তেমনিভাবে দেশে ও দেশের বাইরে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন্স সিস্টেমস (এআইএস) বিভাগের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ২৫ বছর ও এআইএসের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে আজ অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অত্যাধুনিক আর্থিক প্রযুক্তি ব্লকচেইন বিষয়ে অ্যাকাউন্টিং বিভাগ যদি কোনো কোর্স চালু করে, তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। একই সঙ্গে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের বৃত্তি তহবিলে নিজ উদ্যোগে অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন মাননীয় অর্থমন্ত্রী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আ হ ম মুস্তফা কামালকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়। বিভাগটির পক্ষ থেকে এই প্রথম কাউকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হলো।

মাননীয় অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, সকলের ভালোবাসায় আজ আমি এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আমার শিক্ষকরা ছিলেন অনেক উদার। তারা আমাকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। তাদের অনেকেই আজ আমাদের মাঝে নেই। আমি তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। আমার শিক্ষাজীবনের প্রথম দিকে অর্থাভাবে পড়ালেখা করা অনেক কষ্টসাধ্য ছিল। সময়মতো স্কুলের বেতন পরিশোধ করতে না পারায় কয়েকবার স্কুল থেকে না কাটা গেছে। আমার গ্রামের মানুষ অর্থসহায়তা দিয়ে আমাক এ পর্যন্ত আসার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনকালে আমি গ্রামের মানুষের জন্য যেসব প্রকল্প নেওয়া হতো সেগুলোকে অগ্রাধিকার দিতাম। কারণ গ্রামের উন্নয়ন না হলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন করা সম্ভব হবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রী হিসেবেও আমার প্রতি আস্থা রেখেছেন। তবে এ দায়িত্বে আমি কতটা সফল হয়েছি, তা মূল্যায়নের সময় এখনো আসেনি। আর এক-দেড় বছর পর মূল্যায়ন করা যাবে, আমি দেশের জন্য কতটা ভূমিকা রাখতে পারলাম। তবে আমি এখানেও ব্যর্থ হবো না ইনশাআল্লাহ।

ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে নিজের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে মাননীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় আমি ক্রিকেট খেলতাম। কিন্তু একবার ব্যথা পাওয়ার পর আর খেলা হয়নি। তবে ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে কাজ করার বিষয়ে প্রতিজ্ঞা ছিল তখন থেকেই। এর ধারাবাহিকতায় পরবর্তীকালে আবাহনীর ক্রিকেট শাখার দায়িত্ব গ্রহণ করি। ২৫ থেকে ৩০ বছর আমি সে দায়িত্বে ছিলাম। পরবর্তী ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হিসেবেও ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার সুযোগ হয়েছিল। একপর্যায়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের সভাপতির দায়িত্ব পেলাম। কিন্তু সেখানে কিছু নীতিবিরুদ্ধ কাজ আমি মেনে নিতে পারিনি। ক্রিকেটের তথাকথিত মোড়লরা কিছু সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছিলেন, যা আমার দেশের ক্রিকেটের স্বার্থবিরোধী। এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারিনি, তাই দেশের সম্মান রক্ষায় পদত্যাগ করেছি। আইসিসির ইতিহাসে আমিই প্রথম অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

দেশের অর্থনীতির অগ্রগতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্বের যেসব দেশ খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ সেসব দেশের তালিকায় প্রথম সারিতে অবস্থান করছে। ১০ বছর আগে আমাদের অর্থনীতির আকার ছিল বিশ্বে ৫৮তম। বর্তমানে আমরা ২৯তম। অচিরেই আমরা মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানের মতো দেশকে পেছনে ফেলতে সক্ষম হব। চলতি বছর যেসব দেশ বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, এমন ২০টি দেশের তালিকা করেছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশ সেই তালিকার অন্যতম দেশ। বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার ৬১ শতাংশই কর্মক্ষম। বিশ্বের আর কোনো দেশ জনমিতিক লভ্যাংশের ক্ষেত্রে এমন সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুযোগ কাজে লাগাতে আমাদের এই তরুণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য দেশের সকল মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন।

-শিশির

FacebookTwitter

About Bangla Daily

একটি পরিপূর্ণ বাংলা অনলাইন পত্রিকা। মাতৃভাষার দেশ বাংলাদেশ থেকে সরাসরি সস্প্রচারিত হচ্ছে।

View all posts by Bangla Daily