‘ডিজিটাল ক্যারিয়ার কনক্লেভ-২০২১‘ উদ্বোধন ঘোষণা

‘ডিজিটাল ক্যারিয়ার কনক্লেভ-২০২১‘ উদ্বোধন ঘোষণা
‘ডিজিটাল ক্যারিয়ার কনক্লেভ-২০২১‘ উদ্বোধন ঘোষণা

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিঃ
দেশের প্রথম অনলাইনভিত্তিক জব মার্কেটপ্লেস ‘দ্য টু আওয়ার জব’ এবং উল্কা গেমস যৌথভাবে ৭ও ৮ ডিসেম্বর ‘ডিজিটাল ক্যারিয়ার কনক্লেভ ২০২১ নামক ওয়েবিনারের একটি সিরিজের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠান করেছে।

দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের পাশাপাশি একই বছর ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্পের সফল বাস্তবায়ন উপলক্ষে ডিজিটাল ক্যারিয়ারের উত্থান, করোনা মহামারীতে বিপর্যস্ত বর্তমান বিশ্বে এর প্রাসঙ্গিকতা এবং প্রতিভাবান তরুণেরা কীভাবে পর্যন্ত নব্য ডিজিটাল কর্মক্ষেত্রে সংযুক্ত হতে পারে, এর চ্যালেঞ্জসমূহ কি ও তা মোকাবেলা করার জন্য দিক নির্দেশনা নিয়ে আলোচনা হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক,এমপি। তিনি স্বাগত বক্তব্যে এ ধরনের উদ্যোগের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন – “স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ রূপায়নের এক অনন্য উচ্চতায় প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশের যে স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল ২০০৮ সালে, সেই স্বপ্ন এখন পুরোপুরি দৃশ্যমান।

শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি শিক্ষার জন্য ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে আরো ৩৫ হাজার আধুনিক শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হবে যার মাধ্যমে কিশোরীরা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে আইসিটি শিক্ষায় নিজেদের দক্ষ করে তুলতে উৎসাহিত হবে।

ইতিমধ্যেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যৌথভাবে প্রায় ৫০ টি গেমস টেস্টিং ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে এবং প্রচুর তরুণ ডিজিটাল এনিমেশনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ, বিজ্ঞান ও অন্যান্য নানা বিষয়ক মোবাইল এপ এবং গেমস তৈরি করছে৷ স্টার্ট আপ বাংলাদেশ এবং আইডিয়া প্রকল্পের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের নানা লোন, গ্র‍্যান্ট এবং ইকুইটি বেজড মেন্টরিং দেয়া হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে কর্মসংস্থান। চাকুরি করার পেছনে নয়, বরং চাকুরী দেয়ার জন্য ছুটছে নতুন প্রজন্ম। “

অন্যান্য সম্মানিত অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জিয়াউল আলম পিএএ, সিনিয়র সচিব, আইসিটি ডিভিশন, আনোয়ারুল ইসলাম, প্রকল্প পরিচালক, জিএডি, আইসিটি ডিভিশন, সামি আহমেদ, পলিসি এডভাইসর, এলআইসিটি, মোঃ আব্দুর রাকিব, প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম সচিব, আইইডিএ, কাজি এম. আহমেদ, প্রেসিডেন্ট, বিওএলডি, অধ্যাপক মোহাম্মদ এ. মোমেন, ডিরেক্টর, আইবিএ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সৈয়দ আলমাস কবির, প্রেসিডেন্ট, বিএএসাইএস, ব্যারিস্টার এ বি এম হামিদুল মিসবাহ, প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বাংলাদেশ আইপি ফোরাম, আরিফ মোহাম্মদ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পরিচালক, টেকনোম্যাজিক লিমিটেড, জামিলুর রশিদ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, উল্কা গেমস লিমিটেড, সানজিদা খন্দকার, প্রতিষ্ঠাতা, দ্য টু আওয়ার জব সহ আরও অনেকে। সোলাইমান সুখন, চিফ পাবলিক এ্যাফেয়ারস অফিসার, নগদ, অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪টি মাইলস্টোন দিয়েছিলেন-প্রথম ২০২১ সালের রূপকল্প ডিজিটাল বাংলাদেশ, দ্বিতীয় ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা, তৃতীয় ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং চতুর্থ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ সালের জন্য। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তরুণ বয়সে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন আর্কিটেক্ট অব ডিজিটাল বাংলাদেশ সজীব ওয়াজেদ জয়।

বিগত ১২ বছরে দেশে একটি শক্তিশালী আইসিটি ব্যাকবোন তৈরি হয়েছে, যা গ্রাম এলাকা পর্যন্ত তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির সম্প্রসারণ ঘটিয়েছে। দেশের ৩ হাজার ৮০০ ইউনিয়ন এখন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কানেক্টিভিটির আওতায়।

২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য ইন্টারনেট নিশ্চিত করা নিয়ে কাজ করছে সরকার। গ্রামে বসেই ফ্রিল্যান্সিং করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন দেশের তরুণরা। প্রসার ঘটছে ই-কমার্সের।

বাড়ছে ডিজিটাল লেনদেন। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রভাবে যখন সবখানে নেমে এসেছিল স্থবিরতা, ঠিক তখনও সরকারি পর্যায়ের প্রায় প্রতিটি কার্যক্রমই ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ চলেছে। এখনো সভা-সেমিনারের মতো বিভিন্ন আয়োজনের বড় একটি অংশই হচ্ছে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে। বলতে গেলে সামগ্রিকভাবে দেশের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এখন ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়া।

করোনার প্রথম পাঁচ মাসে ই-কমার্সে ৫০ শতাংশের বেশি কেনাকাটা বেড়েছে। গেল বছর ৮ হাজার কোটি টাকার মতো লেনদেন হলেও এ বছর লেনদেনের পরিমাণ ১৬ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে দেশের প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল সেবায় এসেছে। ঘরে বসেই গ্রাহক এখন সরকারি সেবা পাচ্ছে।

প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে নিত্য দিনের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ হচ্ছে। ই-নথিতে এসেছে বাংলাদেশ। বেতন-ভাতা দেওয়া হচ্ছে অনলাইনেই।

বাড়ছে ডিজিটাল লেনদেন। অ্যাপ-নির্ভর হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। অ্যাপ ব্যবহার করে পাওয়া যাচ্ছে মেডিসিন সেবাও।

টেলিমেডিসিন, টেলি-এডুকেশন সেবায় প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। সরকার করোনা পোর্টাল, কোভিড ট্রেসার, কোভিড-১৯ ট্র্যাকার, ফুড ফর ন্যাশন ও হেলথ ফর ন্যাশনসহ বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে করোনা মোকাবিলা করছে। এছাড়া, আইসিটি বিভাগের অধীন এটুআই প্রকল্পের সহযোগিতায় ন্যাশনাল ইনফরমেশন সেন্টার, ৩৩৩ স্থাপন এবং বিডিঅ্যাপসকে ন্যাশনাল অ্যাপস্টোর হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে দেশের ডিজিটাল উন্নয়ন অব্যহত রয়েছে।

উল্লেখ্য যে, ‘দ্য টু আওয়ার জব’ এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে নারীরা ঘরে বসেই উপার্জন করতে পারবেন। প্রযুক্তি বিপ্লবের কারনে বর্তমানে চাকরির ক্ষেত্রে শারিরীকভাবে উপস্থিত থেকে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা আগের চেয়ে অনেক কমে গিয়েছে।

বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশেও এই বিলিয়ন ডলারের বাজার ধরতে শতাধিক গেমিং কোম্পানি গড়ে উঠেছে। এর মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন কর্মসংস্থান; আসছে বিদেশী বিনিয়োগ। দেশীয় উদ্যোক্তা ও গেমস নির্মাতা জামিলুর রাশীদ ২০১৮ সালে মোবাইল গেমস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান উল্কা গেমস লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁরই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালে ভারতের প্রথম সারির মোবাইল গেমস নির্মাতা কোম্পানি মুনফ্রগ ল্যাবস বাংলাদেশের এই মোবাইল গেমস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান উল্কা গেমস লিমিটেডে বিনিয়োগ করে।

ইতোমধ্যে মুনফ্রগ ল্যাবস ও উল্কা গেমস লিমিটেডের লুডো ক্লাব, তিন পাত্তি গোল্ড, আড্ডা, ক্যারম ইত্যাদি মোবাইল গেমস বিশ্বব্যাপী বেশ জনপ্রিয় হয়েছে এবং সব মিলিয়ে বিশ্বজুড়ে ১৮ কোটির ও বেশি ডাউনলোড হয়েছে। দেশীয় তালিকাভুক্ত গেমিং কোম্পানিগুলো তাদের এই আয় থেকে সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দেয়।

২০১৯-২০ অর্থবছরে শুধু মাত্র উল্কা গেমস লিমিটেড ই বাংলাদেশ সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স বাবদ মোট ৪.৯৮ কোটি টাকা দিয়েছে; ২০২০-২১ অর্থবছরে তা ১১ কোটি ছোঁয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সঠিক পরিচর্যা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরো অনেক গেমিং স্টুডিও এ খাতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও সরকারের রাজস্ব আয়ে অবদান রাখতে পারবে।

সামি আহমেদ, এল আইসিটি এর পলিসি বিষয়ক উপদেষ্টা, এর মতে, “আন্তর্জাতিক বাজার এ বাঙালী তরুণেরা প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছে, এসব নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও, আমি গেমিং সেক্টরে ফোকাস করতে চাই। এই সেক্টরে আমাদের আয় ও অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

মিলিয়ন ডলারের এই বাজারে যুক্ত হওয়ার জন্য আমাদের এই খাতে দক্ষ কর্মী নির্মান এবং কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে।”

ব্যারিস্টার এ বি এম হামিদুল মিসবাহ, বাংলাদেশ আইপি ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, “এই আয়োজনের অংশ হতে পেরে আমি রোমাঞ্চিত। ডিজিটাল ক্যারিয়ারের ধারণা চাকরির বাজারের নিরন্তর পরিবর্তনশীল ল্যান্ডস্কেপে মূল্য যোগ করছে। আমাদেরকে সঠিক অবস্থানে সঠিক ধারণা রাখতে হবে, উদ্ভাবনী উপায়ে ও গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে হবে। আমরা বাংলাদেশ আইপি ফোরাম থেকে তরুণ প্রজন্মকে দিকনির্দেশনা দিতে এবং সমর্থন করতে সবসময় প্রস্তুত।“

সানজিদা খন্দকার বলেন, ‘দ্য টু আওয়ার জব’ বিশ্বাস করে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দক্ষ নারীর জন্য ঘরে বসেই চাকরির সুযোগ তৈরি করে দিবে। সেইসঙ্গে সাশ্রয়ী পারিশ্রমিকে পেশাদার কর্মী পেতে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকেও সাহায্য করবে। একজন নারী তাঁর সময়, সুযোগ-সুবিধামতো সংসারের পাশাপাশি চাকরি করবে, ক্যারিয়ার গড়বে, নিজ যোগ্যতায় আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। সংসার জীবনে অন্যের উপর নির্ভর না করে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করবে।

জামিলুর রশিদ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, উল্কা গেমস লিমিটেড বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের তৈরি গেমস বিশ্বব্যাপী বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। সব মিলিয়ে বিশ্বজুড়ে ১৮ কোটির ও বেশি ডাউনলোড হয়েছে। খন অনলাইন ও অফলাইন ডিস্ট্রিবিউশনের মাধ্যমে আয় হচ্ছে। মূলত গেমের অ্যাড, সাবস্ক্রিপশন ও ইন-অ্যাপ পারচেজ থেকে এই আয় হয়ে থাকে। আমরা সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দেই। ২০১৯-২০ অর্থবছরে শুধু মাত্র উল্কা গেমস লিমিটেড ই বাংলাদেশ সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স বাবদ মোট ৪.৯৮ কোটি টাকা দিয়েছে; ২০২০-২১ অর্থবছরে তা ১১ কোটি ছোঁয়ার আশা করি। সঠিক পরিচর্যা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরো অনেক গেমিং স্টুডিও এ খাতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও সরকারের রাজস্ব আয়ে অবদান রাখবে।“

-শিশির

FacebookTwitter