ডাকসু’র পর রাজশাহী কলেজে নির্বাচন দাবি

শিক্ষাঃ
ডাকসু-রাকসুর পর এবার রাজশাহী কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি উঠেছে। কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থী, ছাত্রনেতা ও কলেজ সংসদের সাবেক প্রতিনিধিরা চাচ্ছেন শিগগিরই নির্বাচন দেওয়া হোক।

২৭ বছর ধরে নির্বাচন না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা যেমন তাদের ভোটাধিকার হারাচ্ছেন, তেমনি দেশ হারাচ্ছে তরুণ নেতৃত্ব। এ অবস্থা আর চলতে পারে না। তারা বলছেন, নেতৃত্বের বিকাশে ছাত্র সংসদ নির্বাচন এখন সময়ের দাবি।

১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কলেজের অধ্যক্ষ ক্ষমতাবলে ছাত্র সংসদের সভাপতি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ভোটে একজন ভিপি (সহসভাপতি), জিএস (সাধারণ সম্পাদক) ও অন্যান্য পদের জন্য সদস্য নির্বাচিত হবেন। সংসদের মেয়াদ হবে এক বছর এবং প্রতিবছর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে ১৯৯১ সালের পর কলেজে আর কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।

১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রাচীন এই কলেজে অবিভক্ত বাংলার অনেক শীর্ষ নেতা পড়েছেন, করেছেন ছাত্ররাজনীতি। পরে তারা ব্রিটিশ ও পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। অনেকেই ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধে প্রথম সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

স্বাধীনতার পর রাজশাহী কলেজ ছাত্র সংসদের প্রথম ভিপি নির্বাচিত হন বর্তমান নাটোর-৩ আসনের সাংসদ ও সাবেক মন্ত্রী অধ্যাপক আবদুল কুদ্দুস। এর পর আবু বকর সিদ্দিক এহসান ভিপি ও মাসুদুল হক ডুলু জিএস নির্বাচিত হন। মাসুদুল হক ডুলু রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। এর পর জেডএম জগলুল আহমেদ ভিপি ও বাচ্চু জিএস নির্বাচিত হন। এর মধ্যে জেডএম জগলুল আহমেদ রাজশাহী আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে ছিলেন। এর পর দীর্ঘ আট বছর নির্বাচন বন্ধ থাকার পর ১৯৮৮ সালে ফের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় সরিফুল ইসলাম বাবু ভিপি ও আবদুল্লাহীল মাসুদ শিবলী জিএস নির্বাচিত হন। সরিফুল ইসলামের লেখাপড়া শেষ হয়ে যাওয়ায় তার পরিবর্তে হাবিবুর রহমান বাবুকে ভারপ্রাপ্ত ভিপির দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার মেয়াদ শেষ হলে ১৯৮৯ সালের নির্বাচনে হাবিবুর রহমান বাবু ফের ভিপি নির্বাচিত হন। সরিফুল ইসলাম রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নির্বাচিত হন। একই সঙ্গে তিনি নগর আওয়ামী লীগের সদস্য পদেও রয়েছেন। তার জিএস আবদুল্লাহীল মাসুদ শিবলী নগর জাসদের সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। আর হাবিবুর রহমান বাবু নগর আওয়ামী লীগের সদস্য।

১৯৯০ সালের নির্বাচনে সাহিদ হাসান সাহিদ ভিপি ও সাখাওয়াত হোসেন জিএস হন। সাঈদ হাসান পরে নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সাখাওয়াত হোসেন শিবির করতেন। ১৯৯১ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে রাজশাহী কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচনে আবদুল হাদী রনি ভিপি ও মোহাম্মদ মাহাবুব জিএস নির্বাচিত হন।

দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা ছাত্র সংসদ নির্বাচন আবার শুরু করার জন্য দাবি জানাচ্ছেন কলেজটির সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা। রাজশাহী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নুর মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, রাজনৈতিক ধারা সুষ্ঠু রাখার জন্য কলেজ সংসদ নির্বাচন জরুরি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কাজ করবেন। আমরা হয়তো এর সুফল পাব না। তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুফল পাবে। ভবিষ্যতের কথা ভেবে হলেও এ নির্বাচন দেওয়া জরুরি।

কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি মর্ত্তুজা ফামিম বলেন, শিক্ষকরাই ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ করে রেখেছেন। কারণ এতে কলেজ ফান্ডের টাকা শিক্ষকরা ইচ্ছা মতো খরচ করতে পারেন। কোনো জবাবদিহি নেই। ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় এখন আর আগের মতো ছাত্র রাজনীতিও নেই। তিনি বলেন, আমরাও নির্বাচন চাই। তবে জাতীয় নির্বাচন যে প্রক্রিয়ায় হচ্ছে, এখন সে প্রক্রিয়ায় ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে আমরা তাতে অংশ নেব কি-না তা নিয়ে ভাবতে হবে।

রাজশাহী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি সরিফুল ইসলাম বাবু বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়মিত হওয়া উচিত। তা না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা গণতান্ত্রিক চর্চা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আরেক সাবেক ভিপি হাবিবুর রহমান বাবু বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করবেন। নির্বাচিত নেতারা সবসময় লেখাপড়ার মান, ছাত্রদের অধিকার, সমস্যাগুলোর বিষয়ে সর্বাধিক খোঁজ রাখেন। পাশাপাশি তারা দেশের জন্য যোগ্য নেতা হিসেবে গড়ে ওঠেন।

এ বিষয়ে রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক হবিবুর রহমান বলেন, ছাত্র সংসদের কোনো টাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ খরচ করে না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ওই টাকায় আমরা হাত দেই না। এ খাতের অনেক টাকা জমা আছে। আমরা অপেক্ষা করছি, ডাকসু নির্বাচন দেখার। ডাকসুতে হলেই আমরাও নির্বাচন দেব। কারণ ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধসহ যে কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে রাজশাহী কলেজ ছাত্র সংসদের ভূমিকা আছে। নির্বাচন দেওয়ার জন্য শিক্ষকদের সঙ্গে আমরা আলোচনাও করেছি।

ডিকে

FacebookTwitter