টি-২০ সিরিজও টাইগারদের

স্পোর্টস ডেস্কঃ

তিন ম্যাচ সিরিজে সমতা এসেছিল রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের পর। অলিখিত ফাইনালে রূপ নেয়া তৃতীয় ও শেষ টি-টুয়েন্টি ম্যাচ বৃষ্টি-আইনে ১৯ রানে জিতে সিরিজ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ওয়ানডের পর টি-টুয়েন্টি সিরিজও ২-১ ব্যবধানে জিতলো টাইগাররা।

সোমবার ফ্লোরিডার লডারহিলে সিরিজের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের দেয়া ১৮৫ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৭.১ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৩৫ রান তোলার পর শুরু হয় বৃষ্টি। ডাক ওয়ার্থ ও লুইস মেথডে তখন ১৯ রানে পিছিয়ে ক্যারিবীয়রা।

মোস্তাফিজুর রহমান একাই নেন তিন উইকেট। একটি করে উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান, রুবেল হোসেন, আবু হায়দার রনি ও সৌম্য সরকার।

যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ফ্লোরিডার মাঠে প্রচুর প্রবাসী বাংলাদেশি দর্শকের সমাগম হয়েছিল। তাদের হতাশ করেনি সাকিব আল হাসানের দল। ম্যাচ শেষে দর্শকদের অভিভাদন জানাতে ভোলেনি টিম টাইগার্স।

বিদেশের মাটিতে ৬ বছর পর টি-টুয়েন্টি সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ড সফরে প্রথমবার সিরিজ জেতে টাইগাররা।

শেষ ম্যাচে পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে দুই দলের মাঝে ছিল বিস্তর ব্যবধান। বাংলাদেশ তোলে ২ উইকেট হারিয়ে ৭২ রান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেখানে ৩ উইকেটে ৩২। একে একে সাজঘরে ফেরেন ফ্লেচার (৬), ওয়ালটন (১৯), স্যামুয়েলস (২)।

টাইগার বোলাররা দারুণ শুরু করলেও আন্দ্রে রাসেল উইকেটে এসে একের পর এক ছক্কায় বদলে দিতে থাকেন ম্যাচের চেহারা। ২১ বলে ৪৭ রানের ইনিংস খেলা রাসেলকে সাজঘরে পাঠান মোস্তাফিজ। লোয়ার ফুলটসে লং অফে আরিফুলের হাতে ক্যাচ দেয়ার আগে মারেন ৬টি বিশাল ছক্কা ও ১টি চার।
আগের ম্যাচে দারুণ বোলিং করা নাজমুল ইসলাম অপু ৩ বল করে আঙুলের চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন। পরে এক্স-রে করাতে যেতে হয় হাসপাতালে। নাজমুলের ওভারের বাকি ৩ বল করেন সৌম্য। একটি উইকেট নিয়ে বাঁহাতি স্পিনারের অভাব বুঝতে দেননি সৌম্য।

আগের ম্যাচে ১৭১ রান করে সমতা (১-১) এনেছিল বাংলাদেশ। পেয়েছিল ১২ রানের দারুণ জয়। তৃতীয় ম্যাচে আগের সংগ্রহ ছাড়িয়ে যায়। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে এটিই টাইগারদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ।

২০১২ সালে মিরপুরে দলটির বিপক্ষে পরে ব্যাট করে ১৭৯ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। তবে সে ম্যাচে হেরেছিল স্বাগতিকরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেয়া ১৯৮ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে ২০ ওভার খেলে এক উইকেট হারিয়ে ১৭৯ রান তুলতে পেরেছিল বাংলাদেশ।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমেই আগ্রাসন দেখান তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। দুই ওপেনার মিলে মাত্র ৩.৪ ওভারে তুলে নেন ৫০ রান। টি-টুয়েন্টিতে এটিই বাংলাদেশের দ্রুততম দলীয় ফিফটি।

পাওয়ার-প্লে’র ৬ ওভারের মধ্যেই দুই উইকেট হারালে পরে রানের গতি কিছুটা কমে আসে। শেষটায় মাহমুদউল্লাহ ঝড় তুললে বড় সংগ্রহ নিয়েই মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।
২৪ বলে ফিফটি পাওয়া লিটন দাস ৬১ রান করে থামেন। ৩২ বলের ইনিংসে ছিল ৬টি চার ও ৩টি ছয়ের মার। সাকিব আল হাসান ২৪, তামিম ইকবাল ২১ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ করেন ১৭ রান।

প্রথম দুই ম্যাচে অ্যাশলে নার্সের বোলিংয়ের সামনে বোতলবন্দী ছিল বাংলাদেশের ওপেনাররা। সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ম্যাচে সেই নার্সের ওভার থেকেই চার-ছক্কার ঝড় শুরু করেন লিটন দাস ও তামিম ইকবাল।
অফস্পিনারের প্রথম ওভার থেকেই তোলেন ১৭ রান।

তামিম ১৩ বলে ২১ রান করে সাজঘরে ফেরেন ব্র্যাথওয়েটের বলে ক্যাচ দিয়ে। এ বাঁহাতি ওপেনার আউট হওয়ার পরের ওভারেই কিমো পলের স্লোয়ারে বাউন্ডারি সীমানা ক্যাচ দেন তিনে নামা সৌম্য সরকার। ৪ বল খেলে ৫ রান করেন এ বাঁহাতি।

পর পর দুই ওভারে উইকেট হারানোর পর রানের গতি কিছুটা কমে আসে। দলীয় ১০০ রান আসে ১০.৩ ওভারে। তার আগেই অবশ্য মুশফিকুর রহিমের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ৯৭ রানের মাথায় ইনসুইংয়ের মুখে কাট করতে গিয়ে ব্র্যাথওয়েটের দ্বিতীয় শিকারে পরিনত হন মুশফিক।

ক্যাচ তুলে দেন উইকেটরক্ষক রামদিনের গ্লাভসে। এ ডানহাতি ব্যাটসম্যান ১৪ বল খেলে করেন ১২ রান। মুশফিকের ফেরার পর পরই লিটন ক্যাচ তুলে দেন কেসরিক উইলিয়ামসের বলে। দলীয় রান তখন ১১ ওভারে ১০২। সেখান থেকে প্রত্যায়ী এক জুটি গড়েন সাকিব-মাহমুদউল্লাহ। ৪৪ রানের জুটিটি ভাঙে সাকিব ২৪ করে কিমো পলের দ্বিতীয় শিকার হলে।

দলের রান যখন দেড়শ ছুঁইছুঁই (১৪৯) তখন শুরু হয় বৃষ্টি। ৩০ মিনিট খেলা বন্ধ থাকলেও ওভার কমেনি। বিরতির পর ব্যাটিংয়ে নেমে শেষ ২১ বলে মাহমুদউল্লাহ ও আরিফুল মিলে যোগ করেন আরও ৩৫ রান।মাহমুদউল্লাহ ২০ বলে ৩২ ও আরিফুল ১৬ বলে ১৮ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন।

টেস্ট সিরিরে হতাশা বাদ দিলে রঙিন পোশাকে সফল সফর শেষ করেছে বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজ জিতে দল পেয়েছিল আত্মবিশ্বাস। সেটি অবশ্য কাজে লাগানো যায়নি প্রথম টি-টুয়েন্টি ম্যাচে। শেষ দুই ম্যাচে টানা জয়ে সিরিজ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি সিরিজের ট্রফি হাতে নিয়ে বৃহস্পতিবার দেশে ফিরবে টাইগাররা।

FacebookTwitter