নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

বিদেশে কাজ করার স্বপ্ন দেখা বাংলাদেশি নাগরিকদের ভরসাস্থল জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)। যেখান থেকে প্রতিদিন বিদেশগামী শতশত কর্মীকে অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু, আতঙ্কের বিষয় এই বিএমইটি জালিয়াতির স্বর্গরাজ্য পরিণত হয়েছে। অনিয়মে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের দোসররা। তাদের মধ্যে অন্যতম এডিজি এ আব্দুল হাই। যাকে মুজিবাদী হিসেবে চেনেন সবাই।

শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ছাপা একটি স্মরণিকায় কবিতা লিখে অ্যাওয়ার্ডও এবং পদোন্নতি পেয়েছেন তিনি। ‘একটি তর্জনীর গর্জন’ শিরোনামের সেই কবিতার সাথে নিজের ছবি যুক্ত করে দীর্ঘদিন অফিস কক্ষে টাঙ্গিয়েও রাখেন এডিজি আব্দুল হাই। ফলে তার অনিয়মের তর্জনীতে কাপছে বিএমইটি।

মুজিব শতবর্ষ স্মরণিকা চিরঞ্জীব ২০২০ এর উপদেষ্টা কমিটির সদস্যও ছিলেন বিএমইটির এডিজি আব্দুল হাই। তখন তিনি নার্সিং ও মিডওয়াফারি অধিদপ্তরের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক ছিলেন। স্মরণিকা প্রকাশের পর ভাগ্য খুলে যায় তার।

জানা গেছে, বিগত শৈরাচার সরকারের দোসর এ আব্দুল হাই গত বছর জনশক্তি ব্যুরোর বহির্গমন পরিচালক থাকাকালীন টাকার নেশায় বিএমইটির অনিয়মের নানা সিন্ডিকেটের সাথে জড়িয়ে পড়েন। সেই লোভে এ বছর না পেরোতে পেরোতেই আবার সিন্ডিকেটের সহযোগিতায় আসেন বিএমইটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে। কিন্তু কেন?।

পরিসংখ্যান বলছে, বিএমইটির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কোন পরিচালক বদলী হয়ে আবার অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে আসার ঘটনা বিরল।

সরেজমিন অনুসন্ধান বলছে, বিএমইটিতে কৃত্রিম ভাবে সৌদি আরবের বহির্গমন বন্ধ করে। কিন্তু তার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অবৈধভাবে বহির্গমণ কার্যক্রম শুরু করে। গ্রুপ ভিসাকে সিঙ্গেল ভিসা বানিয়ে তার সিন্ডিকেটের লোকদের দিয়েই শুরু করেছে অবৈধ বাণিজ্য।

কিছু দেশের বহির্গমণ ছাড়পত্র রিক্রুটিং এজেন্সি মাধ্যমে না দিয়ে ওয়ান স্টপ সিস্টেম চালু করা হয়। ওয়ানস্টপ এর এর নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি কর্মীর সাক্ষাৎ গ্রহণ করার কথা একজন সহকারী পরিচালকের।

অথচ বিএমইটির মুজিববাদী এডিজি আব্দুল হাই তার সিন্ডিকেটের লোকের কর্মীর সাক্ষাৎ করেন নিজেই। তাও আবার মিথ্যা, যে কর্মী কখনো বিএমইটিতেই আসেনি। তাকে স্বশরীরে উপস্থিত দেখিয়ে সাক্ষাৎ দেখান এডিজি আব্দুল হাই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরণের ঘটনা বিএমইটিতে প্রথম।

রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক এবং বিএমইটির কিছু কর্মকর্তা জানান, যেখানে আব্দুল হাই মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন। সেখানে তার মত একজন স্বৈরাচারের দোষর বিএমইটির এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে দেয়া উচিত হয়নি।

এত কিছুর পরও ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের দোসর ও মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কবিতা লিখে অ্যাওয়ার্ড পাওয়া এডিজি আব্দুল হাই বিএমইটিতে এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বনে যান ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাফিয়া। সন্ধ্যার পর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মিটিং, দিনরাত তার তর্জনীতে কাঁপে বিএমইটি। অবৈধভাবে ম্যানপাওয়ার করতে না চাইলে, সহযোগী কর্মকর্তাদেরও ওপর নেমে আসে হয়রানি খড়ক। তার এমন অনিয়ম নিয়ে একাধিক গণ্যমাধ্যামের প্রতিবেদন করলেও, বহাল রয়েছে হাই।

অভিযোগ আছে, সম্প্রতি লিবিয়ায় মানবপাচারে মামলায় কারাভোগের পর জামিনে বের হওয়া নূরজাহানের সঙ্গে এডিজি হাইয়ের সখ্যতা রয়েছে। মানবপাচার সিন্ডিকেটের মাফিয়া হিসেবে পরিচিত নূরজাহান।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিএমইটিতে সারাক্ষণ রিক্রুটিং এজেন্সির ব্যবসা ও মানব পাচার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন নূরহাজান। বিএমইটির কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজসে আব্দুল হাই তাকে সহযোগিতা করেন।

-শিশির

FacebookTwitter

About Bangla Daily

একটি পরিপূর্ণ বাংলা অনলাইন পত্রিকা। মাতৃভাষার দেশ বাংলাদেশ থেকে সরাসরি সস্প্রচারিত হচ্ছে।

View all posts by Bangla Daily

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।