স্বাস্থ্যঃ
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত করোনা কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা চলছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)। তাদের কিটের দুটি অংশ-অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন্ট। এর মধ্যে অ্যান্টিবডি কিটের পরীক্ষা প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে, অ্যান্টিজেন কিটের নমুনা সংগ্রহে ত্রুটি থাকায় আপাতত বিএসএমএমইউকে এটির পরীক্ষা বন্ধ রাখতে বলেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।
বলা হয়েছে, নমুনা সংগ্রহের সঠিক সমাধান দেয়ার পরে যাতে বিএসএমএমইউ আবার অ্যান্টিজেন কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা শুরু করে।
৩ জুন, বুধবার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিটের উদ্ভাবক বিজ্ঞানী-গবেষক ড. বিজন কুমার শীল এবং গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও জিআর কোভিড-১৯ র্যাপিড ডট ব্লট প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর ডা. মহিবুল্লাহ খন্দকার এ কথা জানিয়েছেন।
ড. বিজন কুমার শীল বলেন, ‘খুব সরলভাবে একটি কথা বলি, আমাদের উদ্ভাবিত অ্যান্টিজেন বা অ্যান্টিবডি কিটে কোনো ত্রুটি নেই। অ্যান্টিজেন কিটে পরীক্ষা করা হয় লালা থেকে। লালা সংগ্রহ করতে হয় অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। নমুনা সংগ্রহের সময় লালার সঙ্গে যদি কফ বা থুথু থেকে যায়, তবে অ্যান্টিজেন কিটের পরীক্ষায় সঠিক ফলাফল নাও আসতে পারে। আমরা দেখলাম বিএসএমএমইউ লালার যে নমুনা সংগ্রহ করছে, তার সঙ্গে কফ বা থুথু চলে এসেছে। এটা যে তাদের দোষ তা নয়। যখন কাউকে লালা দিতে বলা হয়েছে, তিনি লালার সঙ্গে কফ বা থুথু দিয়ে দিয়েছেন। ফলে অ্যান্টিজেন কিটের পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। সে কারণে আমরা বিএসএমএমইউকে চিঠি দিয়ে অ্যান্টিজেন কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা আপাতত স্থগিত রাখতে বলেছি।’
‘লালা’ সংগ্রহের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘লালা সংগ্রহের একটি সহজ ও সার্বজনীন প্রক্রিয়া নির্ধারণ করার জন্যে আমাদের আরও কিছু কাজ করতে হলো। আনন্দের সংবাদ হলো— ইতোমধ্যে আমরা সেই প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে ফেলতে সক্ষম হয়েছি। কটনবাডের মতো একটি জিনিস তৈরি করেছি। যা মুখের ভেতরে আধা মিনিট থেকে এক মিনিট রাখলে, লালা চুষে নিবে। কটনবাডের সঙ্গে শুধু লালা লেগে থাকবে, কফ বা থুথু থাকবে না। এখন এটা আমরা পরীক্ষা করছি। আগামীকাল বা পরশু বিএসএমএমইউকে নমুনা সংগ্রহের কটনবাডের মতো এই জিনিসটি সরবারাহ করতে পারবো। তখন তারা আবার নমুনা সংগ্রহ করে অ্যান্টিজেন কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা শুরু করতে পারবেন।’
ড. বিজন কুমার শীল বলেন, ‘যারা বলছেন কিটের ত্রুটির কারণে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে পরীক্ষা স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে, তাদের উদ্দেশ্যে আমার কিছু বলার নেই। শুধু একটি কথাই বলবো, আপনারা সঠিক বলছেন না।’
ড. বিজন আরো বলেন, ‘আমরা এদেশের মানুষ। বহু গবেষণা-পরিশ্রম করে এই কিট উদ্ভাবন করেছি। তবে, আপনাদের সমালোচনা থেকে শিখতে চাই। আর একটু জেনে গঠনমূলক সমালোচনা করলে আপনাদের থেকে আমরা আরও কিছু শিখতে পারবো। আপনারা নিশ্চিত থাকেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিটে কোনো ত্রুটি নেই।’
এ বিষয়ে ডা. মহিবুল্লাহ খন্দকার বলেন, ‘আমাদের দুইটি কিট। একটি হচ্ছে অ্যান্টিবডি ও অপরটি অ্যান্টিজেন। অ্যান্টিবডি কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা প্রায় শেষ পর্যায়ে। আমরা বিএসএমএমইউকে একটি চিঠি দিয়ে বলেছি যে এই কিটের ব্যাপারে প্রতিবেদন সম্পন্ন করে যাতে তারা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে দিয়ে দেয়। আর অ্যান্টিজেন কিটের ব্যাপারে বলেছি, তারা যে নমুনা সংগ্রহ করছে, সেই নমুনায় থুথু ও কফ থাকায় পরীক্ষায় ত্রুটি হচ্ছে। তাই আপাতত এটার পরীক্ষা স্থগিত রাখতে।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র গতকাল (২ জুন) বিএসএমএমইউকে যে চিঠি দিয়েছে, তাতে তারা বলেছে, ‘সম্প্রতি জিআর কোভিড-১৯ র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট কিটের নমুনা (লালা) যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংগ্রহে অসামঞ্জস্যতা পাওয়ায় সঠিক ফলাফল নির্ণয়ে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অ্যান্টিজেন শনাক্তকরণের জন্য যথাযথ উপকরণ লালার নমুনায় থাকছে না বা অন্য বস্তুর মিশ্রণ লক্ষণীয়। সম্মিলিত মনিটরিং টিম এই সমস্যাটি চিহ্নিত করেছে। গণস্বাস্থ্য আরএনএ বায়োটেক টেকনিক্যাল টিম এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য তাদের আরঅ্যান্ডডি ল্যাবে সুনির্দিষ্টভাবে সর্বোপরি ব্যবহারযোগ্য লালা সংগ্রহ পদ্ধতি প্রয়োগের কাজ শুরু করেছে। যা শিগগিরই আমরা আপনাদেরকে জানাতে পারবো বলে আশা করছি। এতে কয়েকদিন সময় লেগে যাবে। এমন অবস্থায় আমাদের লালা সংগ্রহের সঠিক পদ্ধতি নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত অ্যান্টিজেন টেস্ট কিটটির পরীক্ষা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি। প্রয়োজনে আমরা এই দুইটি লট ফেরত এনে নতুন লট বদলে দেবো।’