অনলাইনঃ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমান শারীরিক অবস্থায় দীর্ঘ উড়োজাহাজ ভ্রমণের ধকল সামলাতে পারবেন কি না, সংশয় প্রকাশ করেছেন তার চিকিৎসকরা।
বিএনপি নেত্রীর পরিবার তাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে চিকিৎসকরা এ সংশয় প্রকাশ করেছেন।
খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার বিষয়টি তার পাসপোর্ট নবায়ন, যে দেশে যাবেন সে দেশের ভিসা ও বাংলাদেশ সরকারের অনুমতির ওপর নির্ভর করছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার করোনা-পরবর্তী নানা জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় ‘মানবিক’ কারণে তার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় নিয়োজিত এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়াটা ভালো লক্ষণ নয়। ছয় বা আট ঘণ্টার ফ্লাইটে বিদেশে নেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা তার নেই।’
অক্সিজেন ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি বা অবনতি হয়নি। কিন্তু, এই স্থিতিশীলতা ভালো লক্ষণ নয়।’
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, লন্ডনের একটি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের ‘ইতিবাচক সাড়া’ পেয়েছে তার পরিবার।
বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে ছাড়পত্র পাওয়া মাত্রই খালেদা জিয়ার পরিবার তাকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করবে।
তবে, কোন হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে ভর্তি করানো হবে বা তাকে সেখানে নিয়ে যেতে বিশেষ ফ্লাইট বা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন হবে কি না সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই প্রক্রিয়াটির সমন্বয় করছেন।
বিএনপির নেতারা বলেছেন, সরকারের ছাড়পত্র পাওয়াটাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। কেননা, খালেদা জিয়া দেশ ছাড়তে পারবেন না এই শর্তেই সরকার তাকে নির্বাহী আদেশে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়েছে।
বিএনপি নেত্রীর ভাই শামীম ইসকান্দার এ বিষয়ে অনুমতি চেয়ে গত বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে লিখেছেন।
পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, আইন মন্ত্রণালয়ের আদেশ সংশোধন করা হলে খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে পারবেন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, এ বিষয়ে আগামী রোববার তিনি তার মতামত জানাতে পারেন।
গতকাল তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমি বিকেল ৪টার দিকে (বিদেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত) ফাইলটি আইনসচিবের অফিস থেকে পেয়েছি। এটি পড়ার পর এ বিষয়ে আমার মতামত জানাব।’
খালেদা জিয়ার পারিবারিক সূত্র আরও জানিয়েছে, সরকারের অনুমতি পাওয়া মাত্রই তার ভিসার আবেদন করা হবে। তিনি যুক্তরাজ্যে যেতে চাইলে তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তাকে কোন হাসপাতালে ভর্তি করানো হবে।
এরইমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে শিগগির পাসপোর্ট দেওয়া হবে।
২০১৯ সালে তার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়।
পাসপোর্টে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও সই প্রয়োজন হলেও খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে এই নিয়ম শিথিল করা হয়েছে বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।
গত বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকার বিষয়টি ‘ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করছে’।
বিএনপি নেত্রীর দ্বিতীয়বারের মতো করোনা পজিটিভ ধরা পড়ার তিন দিন পর গত ২৭ এপ্রিল তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
এর আগে, গত ১১ এপ্রিল তার প্রথম করোনা ধরা পড়ে। এছাড়াও, তিনি আর্থ্রাইটিস (বাত), ডায়াবেটিস ও চোখের সমস্যায় ভুগছেন।
গত সোমবার শ্বাসজনিত সমস্যার কারণে তাকে হাসপাতালটির সিসিইউয়ে নেওয়া হয়।
পরিবারের সদস্যরা তাকে যুক্তরাজ্য বা থাইল্যান্ড বা সিঙ্গাপুরে নেওয়ার কথা ভাবছেন।
-কেএম