অনলাইনঃ
খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হচ্ছে না। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দন্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দী হওয়ায় বিদেশ পাঠানোর আইনগত কোনো সুযোগ নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।
সোমবার এমন আইনি মত দিয়ে নথি পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সে মত পর্যালোচনা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গতকাল সচিবালয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এক সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। একটা চিঠি দিয়েছেন, সংগত কারণেই আমরা আইনসম্মত হয় কি না তা দেখতে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাই। সেখানে আইনমন্ত্রী যে মত দিয়েছেন তা আমরা পর্যালোচনা করছি। যদি আমরা প্রয়োজন মনে করি আরও ঊর্ধ্বতন জায়গায় পাঠিয়ে তাদের পরামর্শ নেব। এখন আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছি, এটা নিয়ে আমাদের আরও কথা বলতে হবে। আইনমন্ত্রী যেভাবে লিখেছেন, সেখানে বলা হয়েছে- আইনগত কোনো সুযোগ নেই। কাজেই আমাদের অবস্থান আপনারা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন। আমরা এখন বসে আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।’
মানবিক দিক বিবেচনা করা হবে কি না- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মানবিক দিক বিবেচনা করেই ওই ব্যবস্থা নিয়েছি। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন খালেদা জিয়া একজন দন্ডপ্রাপ্ত আসামি, তাঁর দন্ড কার্যকর ছিল। তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছিল।
তার পরও তাঁর ছোট ভাই আবেদন করায় তাঁকে আরও অধিকতর সুযোগ দেওয়ার জন্য মানবিক কারণে প্রধানমন্ত্রী দন্ডাদেশ স্থগিত করে বাসায় চিকিৎসাসেবা নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের ভিতরে যে কোনো মেডিকেলে যে কোনো চিকিৎসকের চিকিৎসা খালেদা জিয়া নিতে পারবেন। এ ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এখন তাঁর ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার আবার আবেদন করেছেন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিয়ে যাবেন। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীর কাছ থেকে মত আসছে যে আইনে এর কোনো সুযোগ নেই।’
এর আগে সোমবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার জন্য তাঁর ভাই আবারও যে আবেদন করেছেন সে ব্যাপারে আমাদের আইনি মতামত দিয়ে আমরা এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। আপনারা জানেন এর আগেও যতবারই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত ফাইলটা গেছে। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত ফাইলটা যাবে আমার যে মতামত তা কিন্তু এখন আপনাদের বলতে পারব না, এটার গোপনীয়তা রাখতে আমি বাধ্য। কিন্তু বারবারই আমি একটি কথা বলেছি, ৪০১ ধারায় যে ছয়টি উপধারা আছে সেখানে পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজ ট্রানজেকশনে (ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় যে দরখাস্ত একবার নিষ্পত্তি হয়, সে দরখাস্তকে আবার পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগ না থাকা) আবার বিবেচনা করার কিন্তু কোনো সুযোগ নেই।’
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড দেয় বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। রায় ঘোষণার পর খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরান কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রাখা হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর এ মামলায় আপিলে তার আরও পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে হাই কোর্ট।
একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেয় একই আদালত। রায়ে সাত বছরের কারাদন্ড ছাড়াও তাঁকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদন্ডের আদেশ দেয়।
গত বছরের মার্চে করোনা মহামারী শুরু হলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাহী আদেশে দন্ড স্থগিত করে কারাবন্দী খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয় সরকার। মুক্তির মেয়াদ শেষ হলে গত বছরের ২৫ আগস্ট বেগম জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে স্থায়ী মুক্তি চেয়ে আবেদন করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কয়েক দফায় তাঁর মুক্তির মেয়াদ বাড়ায়।
-ডিকে