খাদ্যমন্ত্রীর চিকিৎসক জামাতার রহস্যজনক মৃত্যু

অনলাইনঃ
বর্তমান সরকারের খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের জামাতা চিকিৎসক রাজন কর্মকারের (৩৯) রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। মৃত রাজন কর্মকার খাদ্যমন্ত্রীর মেয়ে ডা. কৃষ্ণা মজুমদারের স্বামী।

রাজনের পরিবার ও চিকিৎসক সহকর্মীরা গণমাধ্যমকে অভিযোগ করে বলেছেন-রাজনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। তাকে হত্যা করা হয়েছে।

এ ছাড়াও ময়নাতদন্তের দাবি ও প্রকৃত তদন্ত চেয়ে স্কয়ার হাসপাতালে বিক্ষোভ করেন তার সহকর্মীরা। তবে তার খাদ্যমন্ত্রীর পরিবারের ময়নাতদন্ত করতে অনীহা থাকলেও সহকর্মীদের দাবির মুখে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার এখলাসপুরের ছেলে ডা. রাজন। তার বাবা সুনীল কর্মকার ও মা খুকু রানী কর্মকার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস করেছেন তিনি।

বিএসএমএমইউর ওরাল অ্যান্ড ম্যাপিলোফেসিয়াল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন রাজন। স্ত্রী ডা. কৃষ্ণা মজুমদারও একই হাসপাতালের জেনারেল সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তাদের। ইন্দিরা রোডের বাসায় থাকতেন তারা। বাবা-মা থাকেন গ্রামের বাড়িতে।

রাজন হত্যার বিচার দাবিতে রোববার বিকেলে নোয়াখালীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবরোধ করেছে এলাকাবাসী।

রাজনের সহকর্মীরা জানিয়েছেন, রোববার ভোররাতে ইন্দিরা রোডের বাসা থেকে রাজনকে মৃত অবস্থায় পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যান তার স্ত্রী ও শ্বশুরপক্ষের লোকজন। পরে স্ত্রীসহ স্বজনরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই রাজনের মৃতদেহ নিয়ে যেতে চাইলে বাধা দেন বিএসএমএমইউর তার সহকর্মী চিকিৎসকরা।

সহকর্মীরা বলেন, এটা স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। এর আগেও শরীরে আঘাত নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন রাজন। তার মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন তারা।

রাজনের সহকর্মী বিএসএমইউর চিকিৎসক অর্ণব বড়ূয়া জানান, শনিবার রাত ১২টায় ডা. রাজন মোহাম্মদপুরের সাতমসজিদ রোডের আল-মানার হাসপাতালে রোগীর অপারেশন শেষে বাসার উদ্দেশে বের হন। ভোর সাড়ে ৫টায় তিনি এক সহকর্মীর মাধ্যমে জানতে পারেন রাজন মারা গেছেন। স্কয়ার হাসপাতালে আছেন। এরপরই তিনি ছুটে যান স্কয়ারে। সেখানে গিয়ে কৃষ্ণা মজুমদার, কৃষ্ণার বোন, ভগ্নিপতি এবং মন্ত্রী সাধন মজুমদারকে দেখতে পান। তখন রাজনের লাশ মরচ্যুয়ারির সামনে রাখা ছিল। খবর পেয়ে পর্যায়ক্রমে বিএসএমএমইউর চিকিৎসকরা আসেন হাসপাতালে। কৃষ্ণাসহ তার স্বজনরা রাজনের মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলে দাবি করতে থাকেন।

দুপুর ১২টার দিকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ বুঝে নিতে যান কৃষ্ণা ও তার স্বজনরা। এ সময় বাধা দেন বিএসএমএমইউর চিকিৎসকরা। তারা বলেন, ‘এটা স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। তাকে হত্যা করা হতে পারে।’ রাজনের পরিবারের সদস্যদেরও একই অভিযোগ।

রাজনের মামা সুজন কর্মকার বলেন, ‘রাজনের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত চাই। এজন্য লাশের ময়নাতদন্ত করতে দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘কৃষ্ণা রাত ২টার দিকে রাজনের মাকে মোবাইল ফোনে বলেছিল, আপনার ছেলে মারা গেছেন, আমি আপনাদের দেখে নেব, আমি সুইসাইড করব। আপনাদের শান্তিতে থাকতে দেব না।’

রাজনের সহকর্মী বিএসএমএমইউর চিকিৎসক শাহ নেওয়াজ বারী জানান, রাজনের শ্বশুরবাড়ির লোকজন লাশের ময়নাতদন্ত করে দিতে চাচ্ছিল না। পরে আমাদের দাবির মুখে ময়নাতদন্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। কারণ এর আগেও রাজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। সে সময় তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়েছিলাম আমরা।

-ডিকে

FacebookTwitter