অনলাইনঃ অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ মানব উন্নয়ন ও মানব মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং নারীদের সমাজের অগ্রভাগে নিয়ে আসার নিরলস সংগ্রাম করে চলেছেন।
তিনি এমন একজন অর্থনীতিবিদ যিনি কেবল অর্থনীতির বিষয় নিয়ে গবেষণা করেননি, গবেষণালবদ্ধ জ্ঞান সরাসরি জনকল্যাণে কাজে লাগিয়েছেন। তাইতো তিনি জনকল্যাণমুখী অর্থনীতির একজন শক্তিমান প্রবক্তা হিসেবে নন্দিত।
অর্থনীতির মানবিকায়নে এক ক্লান্তিহীন পথিক। খলীকুজ্জমান আহমদ ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ২০১৯’ প্রাপ্তিতে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনরা এসব কথা বলেন।
শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারকাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে স্বাধীনতা পদকজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ ও তার সহধর্মিনী ড. জাহেদা আহমদ এবং অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ বক্তব্য রাখেন।
জনসেবায় অসামাণ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. খলীকুজ্জমান আহমদকে স্বাধীনতা পুরুস্কার প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির খলীকুজ্জমান আহমদকে ব্যতিক্রমী অর্থনীতিবিদ আখ্যা দিয়ে বলেন, অর্থনীতিবিদরা সাধারণত গবেষণা করেন। কিন্ত খলীকুজ্জমান গবেষণা করার পাশাপাশি গবেষণালবদ্ধ জ্ঞানকে মানব উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন ও জনকল্যাণে কাজে লাগিয়েছেন। নারীদের সমাজের অগ্রভাগে নিয়ে আসার নিরলস প্রচেস্টা অব্যাহত রেখেছেন। সবার জন্য সমান সুযোগ ও প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে তিনি কাজ করছেন।
সভাপতির বক্তব্যে ড. আবুল বারকাত বলেন, খলীকুজ্জমান আহমদ মূলধারার প্রথাসিদ্ধ অর্থনীতিবিদ নন, তিনি একজন মানবতাবাদী এবং উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ।
দারিদ্র্য বা বৈষম্যের ক্ষেত্রে যে বহুমাত্রিক বিষয় কাজ করে,সেই গবেষণায় তিনি গতিশীল নেতৃত্ব দিয়েছেন।
আবার কাজ করার সুযোগ পেয়ে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনকে (পিকেএসএফ) গতানুগতিক কর্ম প্রক্রিয়া থেকে গণমুখী মানবকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, অর্থ শাস্ত্রে নৈতিকতা তেমন গুরুত্ব পায় না। কিন্তু খলীকুজ্জমান তার মানব উন্নয়ন ভাবনায় নৈতিক মূল্যবোধকে সবসময় গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। তিনি চান অর্থনৈতিক উন্নয়ন যেন সমাজের বঞ্চিত মানুষকে সাথে নিয়ে হয়। সবাই যেন সুযোগ পায়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘আমার দর্শনের মূল ভিত্তি হচ্ছে-মানুষ। মানুষ হিসেবে মানুষকে মর্যাদা দিতে হবে,বৈষম্য দূর করতে হবে। যেটা আমাদের সংবিধানেরও মূল দর্শন।’
তিনি বলেন,মানবাধিকার,মানব মর্যাদা, বৈষম্যহীনতা, উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সকলের অন্তর্ভূক্তি এবং সাম্য প্রতিষ্ঠা করা গেলে প্রকৃত সুখী-সমৃদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। আর এগুলো করা গেলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জন করতে পারব।
তিনি এ লক্ষে সমাজের সকলকে একসঙ্গে কাজ করার আহবান জানান। জীবনের বাকী দিনগুলো মানবসেবায় কাজ করবেন বলে তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে খলীকুজ্জমানকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। আর সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারকাত।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সহসভাপতি এ জেড এম আবু সালেহ।
উল্লেখ্য, ড. খলীকুজ্জমান আহমেদ পিকেএসএফের চেয়ারম্যান এবং ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকসের গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে সমাজসেবায় অবদানের জন্য ২০০৯ সালে একুশে পদক পান।
-ডিকে