রাজনীতিঃ
ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসারকে। সেই সাথে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথকেও সংগঠনের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়টি গতকাল ২৪ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার এই নির্দেশ ইতোমধ্যে পঙ্কজ দেবনাথকে দলের সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অবহিত করেছেন বলেও জানান তিনি।
জানা গেছে, সংগঠন গতিশীল করার চাইতে নিজেদের আখের গোছাতেই বেশি ব্যস্ত থেকেছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদ্যসাবেক সভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওছার ও সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ। দলীয় কর্মকাণ্ডের চেয়ে ক্যাসিনো ব্যবসা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে বেশি সময় কাটিয়েছেন এই দুই নেতা। নানা অপকর্মের সংবাদ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছার পর সংগঠন থেকে এ দুই নেতাকে সরিয়ে দেয়া হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে জাগরণ।
গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনে জানানো হয়, ওই দুই শীর্ষ নেতার সঙ্গে আরো ডজন খানেক মাঠ পর্যায়ের নেতার নামও উঠে এসেছে। ক্যাসিনোসহ চলমান দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে যুবলীগের মতো স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই শীর্ষ নেতাসহ অনেক নেতার নাম আলোচনায় আসে। এদের বিরুদ্ধে গণপূর্ত ভবন, শিক্ষা ভবন, বিদ্যুৎ ভবন, খাদ্য ভবনসহ বিভিন্ন জায়গায় টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। সংগঠন ও দলীয় পরিচয়ের প্রভাব খাটিয়ে তারা টেন্ডার বাগিয়ে নেন।
বিপুল অর্থ-বিত্ত উপার্জন করে এমন কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অধিকাংশ সময় বিদেশ থাকার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এসব নেতাদের বিরুদ্ধেও নেয়া হচ্ছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। যার আলামত হলো, মোল্লা মো. আবু কাওছারকে দল থেকে বহিষ্কার ও পঙ্কজ দেবনাথকে দলীয় সকল কার্যক্রম থেকে বাইরে থাকার নির্দেশ।
পঙ্কজ দেবনাথকে মূলত দল থেকে ‘ওএসডি’ করা হয়েছে। এতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না এ ‘শুদ্ধি অভিযান’। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, পর্যায়ক্রমে এর চেয়ে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দলীয় সূত্র জানায়, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথকে সম্মেলনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পঙ্কজের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ : স্বেচ্ছাসেবক লীগের নাম ভাঙিয়ে ঢাকা ও গ্রামের বাড়িতে নিজস্ব সন্ত্রাসী ও ক্যাডার বাহিনী গঠনের অভিযোগ রয়েছে পঙ্কজ দেবনাথের বিরুদ্ধে।
ওইসব ক্যাডারদের ব্যবহার করে খেয়াঘাট, টেম্পো স্ট্যান্ড, জলাশয়, লঞ্চঘাট, হাট-বাজার, নদীর বালু, মাছের পাড়া, খাদ্য গোডাউন, ভূমি অফিস, ইটভাটা থেকে লাখ লাখ টাকা লুটপাট করেছেন তিনি।
এছাড়াও সরকারি খাস জমি বরাদ্দের নামেও বাণিজ্য করেছেন পঙ্কজ। আর দখল বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ তো রয়েছেই।
সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে এক সংবাদ সম্মেলনে হয়, সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের অসাংগঠনিক কার্যক্রম, দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ও লুটপাটের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
এবিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতা আনোয়ার হোসেন সাগর বলেন, ‘পঙ্কজ দেবনাথ ১/১১-এর সময় শীর্ষ দুর্নীতিবাজ হিসেবে গ্রেপ্তার হন। বর্তমানে তার নির্বাচনী এলাকা বরিশাল-৪ আসনসহ রাজধানীর উত্তরা ও ধানমণ্ডিতে বিলাসবহুল বাড়ি, অভিজাত এলাকায় নামে-বেনামে একাধিক প্লট, ফ্ল্যাট ও গার্মেন্টস এবং পরিবহন রয়েছে। ভারতেও তার একাধিক বাড়ি ও মার্কেট রয়েছে।’
হুন্ডি, মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে পঙ্কজ দেশের বাইরে শত শত কোটি টাকা পাচার করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, ২০১৭ সালে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫৫ জন নৈশ প্রহরী কাম দপ্তরিকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেন পঙ্কজ দেবনাথ। এর জন্য প্রত্যেকের কাজ থেকে ৫-৭ লাখ করে টাকা নেন তিনি।
এছাড়াও উচ্চ বিদ্যালয়-কলেজে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে ‘ডোনেশনে’র নামে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০-১৫ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেন এই এমপি।
দলীয় সূত্র বলছে, ২০১২ সালের ১১ জুলাই স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটিতে সভাপতি হন মোল্লা আবু কাওছার, আর সাধারণ সম্পাদক হন পঙ্কজ দেবনাথ।
দায়িত্ব পাওয়ার পর কার্যত সংগঠনের কোনো উন্নয়ন দেখাতে পারেননি এই দুই নেতা। বরং তাদের অহঙ্কারের ভারে সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, বরিশাল-৪ আসন থেকে দশম জাতীয় নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন পঙ্কজ দেবনাথ। এরপর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি একই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।
১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন এ পর্যন্ত দুইবার হয়েছে। ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম সম্মেলনে সভাপতি হয়েছিলেন বাহাউদ্দিন নাছিম। তার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন পঙ্কজ দেবনাথ। এরপর ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সম্মেলনেও সাধারণ সম্পাদক পদেই বহাল থাকেন তিনি। যদিও সেবার সভাপতি হন মোল্লা আবু কাওছার।
আগামী ১৬ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংগঠনের তৃতীয় সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। জানা গেছে, মোল্লা কাওছার-পঙ্কজ দেবনাথকে ছাড়াই সংগঠনের অন্য নেতাকর্মীরা পুরোদমে সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
-ডিকে