করোনা সংক্রমণ রোধে কঠোর অবস্থানে সরকার

করোনা সংক্রমণ রোধে কঠোর অবস্থানে সরকার
করোনা সংক্রমণ রোধে কঠোর অবস্থানে সরকার

করোনা সংবাদঃ
সারা দেশে করোনা সংক্রমণ, শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দিনে দিনে ভয়ানকভাবে বাড়ছে। সংক্রমণ কমাতে সরকার গত বছরের নেয় এবারও যাত্রীবাহী বাস ও ট্রেনে এক সিট ফাঁকা রাখার নির্দেশ দিয়েছে।

তবে মানুষ মুখে মাস্ক পরার দিক দিয়ে কিছুটা ইতিবাচক দেখছে প্রশাসন। গত বছর মানুষকে মুখে মাস্ক পরতে বলা হলেও অনেকেই মাস্ক পরেননি। সেখানে এবার অভ্যাসগতভাবে অনেকেই মাস্ক পরছেন। এখনও যারা মুখে মাস্ক ছাড়া চলাচল করছেন তাদের বিরুদ্ধে এ্যাকশন নেওয়া সহজ হবে বলে জানান প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৮টি জরুরি নির্দেশনা পালনে কঠোর হচ্ছে সরকার।

জানা গেছে, গত বছর করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর দিকে রোগী শনাক্তের হার কম থাকলেও মে মাসের মাঝামাঝি সংক্রমণ বাড়তে থাকায় আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে নতুন রোগীর সঙ্গে শনাক্তের হার কম হয়। সেপ্টম্বর ও অক্টোবরের দিকে সংক্রমণ নিম্নমুখী থাকার পর গত নভেম্বরের শুরুর দিক থেকে নতুন রোগী ও শনাক্তের হারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয়। ডিসেম্বর থেকে সংক্রমণ আবার কমতে শুরু করে। তবে চলতি মাসে ফেব্রুয়ারির শেষের দিক থেকে বর্তমান পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে।

করোনায় মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, করোনাভাইরাসে গত চব্বিশ ঘণ্টায় দেশে আক্রান্ত হয়ে আজও ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়া এই সময়ের মধ্যে আরও নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৪২ জন। এ পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ৯৯৪ জনের। এ পর্যন্ত করোনায় শনাক্তের সংখ্যা ৬ লাখ ৫ হাজার ৯৩৬ জন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, এদিন সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ১৬২ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৪০ হাজার ১৮০ জন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ও বাড়িতে উপসর্গবিহীন রোগীসহ গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ১৬২ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন পাঁচ লাখ ৪০ হাজার ১৮০ জন। এছাড়া গতকাল সোমবার (২৯ মার্চ) দেশে আরও ৫ হাজার ১৮১ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। আর আক্রান্তদের মধ্যে মারা যান আজকের সমান ৪৫ জন।

সরকারের দেওয়া ১৮টি জরুরি নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গতবছরের নেয় এবারও পরিকল্পিতভাবে মাঠে নামবে। রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে ও মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করবে পুলিশ। বাস, ট্রেন ও লঞ্চগুলো ৫০ শতাংশ যাত্রী নিশ্চিত করা। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইন কার্যকর করতে বিমানবন্দর ও এয়ারলাইন্সসহ সংশ্লিষ্টদের নতুন নির্দেশনা দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

করোনা সংক্রমণ রোধে গতকাল রোববার থেকে মাঠে নেমেছে পুলিশ। এ উপলক্ষে ‘মাস্ক পরার অভ্যাস, করোনামুক্ত বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দেশব্যাপী শুরু হয়েছে পুলিশের বিশেষ উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচিও। এর আগে গত বৃহস্পতিবার করোনার দ্বিতীয় ধাপ মোকাবিলায় দেশব্যাপী পুলিশের উদ্যোগ অনুষ্ঠানে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ করোনা রোধে পুলিশের এই কার্যক্রম শুরুর কথা জানিয়েছিলেন।

যা করবে পুলিশ: করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশ পুলিশের নির্দেশিকা (এসওপি) বিতরণ; পুলিশের লোগো সম্বলিত ফ্রি মাস্ক বিতরণ; করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণ; সচেতনতামূলক মাইকিং, লিফলেট ও পোস্টার বিতরণ; সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণে ভূমিকা রাখা; করোনায় মৃত্যুবরণকারীদের দাফন; পুলিশের অব্যবহৃত স্থাপনা আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রূপান্তর।

আবারও ৫০ ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে অফিস চালানোর যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা কার্যকর হচ্ছে বুধবার (৩১ মার্চ) থেকে।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, গত বছর করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে ২৫ ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারি নিয়ে অফিস চালানো হয়েছে। পরে ৫০ ভাগ করা হয়েছিল। এবারও ৫০ ভাগ জনবল অফিস, কলকারখানা, সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোয় উপস্থিত থাকবে। বাকি জনবল বাসা থেকে ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে অফিসে সংযুক্ত থাকবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের শেষ দিকে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের ঘোষণা আসে। দেশে প্রথম করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তির মৃত্যুর ঘোষণা আসে ১৮ মার্চ।

-কেএম

FacebookTwitter