অর্থনীতি ডেস্কঃ
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) থেকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) পরিসর অনেক বড়। বাংলাদেশ এমডিজি অর্জনে সাফল্য দেখিয়েছে। সবাই পরিকল্পিতভাবে কাজ করলে এসডিজি অর্জনও সম্ভব হবে।তবে এত বিশাল কাজ সম্পন্ন করতে হলে বেসরকারিখাত এবং রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করতে হবে।
শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি (বিইএ)আয়োজিত ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ২০৩০’ বাস্তবায়ন শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এম তাফাজ্জল ইসলাম।এতে অন্যান্যের মধ্যে বিইএ সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ,সহসভাপতি রাষ্ট্রদূত মো. আব্দুল হান্নান ও এ জেড এম সালেহ,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন খান,অধ্যাপক হান্নানা বেগম প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
খলীকুজ্জমান আহমদ তার মূল প্রবন্ধে বলেন,এসডিজি বাস্তবায়ন কাউকে বাদ দিয়ে নয়,সবাইকে অন্তর্ভূক্ত করে এগিয়ে যেতে হবে।এসডিজির মূল দর্শন হলো-মানুষে-মানুষে সাম্য,ন্যায়বিচার ও মানবমর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা। এজন্য বলা হচ্ছে-এসডিজি হলো সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য অর্থনৈতিক অগ্রগতি।
তিনি বলেন,এসডিজিতে সবকিছু বিস্তারিত বলা আছে।এর ওপর ভিত্তি করে আমাদের এগুতে হবে। এটি বাস্তবায়নে সবার সংশ্লিষ্টতা থাকতে হবে। রাষ্ট্রের বড় ধরনের অঙ্গীকার থাকতে হবে। বাংলাদেশের সে অঙ্গীকার আছে। নীতি, কৌশল ও প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় থাকা প্রয়োজন।
তিনি জানান,বাংলাদেশে এসডিজিতে দারিদ্র্যের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।এমডিজিতে এটা ছিল। এসডিজিতেও আছে। তবে এসডিজিতে অতিদারিদ্র্যসহ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের কথা বলা হয়েছে।
খলীকুজ্জমান মনে করেন এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক পরিমন্ডল থেকে যে আর্থিক সহযোগিতা পাওয়ার কথা ছিল,সেটা পাওয়া যাবে না। তাই কারোর সহায়তায় নয়,নিজের শক্তিতে এসডিজির কাজগুলো করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক প্রধান বিচারপতি এম তাফাজ্জল ইসলাম বলেন,এসডিজিতে সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।এটা করা সম্ভব হলে এই শিক্ষিত মানুষরা পৃথিবীকে বদলে দিতে পারবে। তিনি এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার সুপারিশ করেন।
তিনি আরো বলেন,এসডিজিতে যেসব বিষয় অগ্রাধিকার পেয়েছে,এগুলো আমাদের রাষ্ট্রের মৌলনীতি। যেমন-সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।দেশের জনগনকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্বাধিকার প্রদান।
আবুল বারকাত বলেন,বাংলাদেশসহ বৈশ্বিক পর্যায়ে অর্থনৈতিক,সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বড় ধরনের বৈষম্য বিরাজমান। মাত্র ১ শতাংশ মানুষের হাতে মোট সম্পদের ৫০ শতাংশ পঞ্জীভূত। তাই বিদ্যমান এই বৈষম্যের মধ্যে থেকে এসডিজি পুরোপুরি বাস্তবায়ন বা অর্জন করা সম্ভব নয় বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এসডিজির দশম লক্ষ্য বা বৈষম্য নিরসনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার সুপারিশ করেন।
উল্লেখ্য,এসডিজিতে ১৭টি লক্ষ্য এবং ১৬৯টি টার্গেট রয়েছে।এসডিজি বাস্তবায়নে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অতিরিক্ত ৯২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪২ শতাংশ অর্থায়ন আসতে হবে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ থেকে। এ ছাড়া সরকারি খাত থেকে ৩৫ শতাংশ, পিপিপি থেকে ৫ শতাংশ, বৈদেশিক উৎস থেকে ১৫ শতাংশ এবং এনজিও খাত ৩ শতাংশ যোগান দেবে।
-এসএম