খেলাঃ

২৩ বছরের অপেক্ষার পর এবার ক্রিকেট বিশ্ব নতুন চ্যাম্পিয়ন দেখতে যাচ্ছে। অন্যদিকে দীর্ঘ ২৭ বছর পর ইংল্যান্ড ফাইনাল খেলবে।

ভারতের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ড ১৮ রানের শ্বাসরুদ্ধকর জয় পায়। অন্যদিকে, একতরফাভাবে ম্যাচের কর্তৃত্ব ধরে রেখে ১২৭ বল হাতে রেখেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়লাভ করেছে ইংল্যান্ড।

ফলে ২০১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে দর্শকরা এমন দুটি দলের ফাইনাল দেখতে যাচ্ছে যারা এর আগে কখনও ফাইনাল জিতেনি।

২০১৫ বিশ্বকাপে নতুন কোনো দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ আসলেও নিউজিল্যান্ডকে সে ফাইনালে হেসেখেলে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।

সেই অস্ট্রেলিয়াকেই আজ ইংল্যান্ড হেসেখেলে হারিয়ে ফাইনালে গেল ইংল্যান্ড। যদিও সেমিফাইনালে এই প্রথমবার হারল অস্ট্রলিয়া।

জেসন রয় আম্পায়ারের অবিশ্বাস্য ভুল সিদ্ধান্তের শিকার না হলে ম্যাচটা ৩৩তম ওভারের অনেক আগেই শেষ হয়ে যেত।

১৯৯৬ বিশ্বকাপেই সর্বশেষ নতুন কোনো চ্যাম্পিয়ন পেয়েছিল ক্রিকেট বিশ্বকাপ। সবাইকে চমকে দিয়ে শ্রীলঙ্কা শিরোপা নিয়ে উৎসব করেছিল।

তারপর আর নতুন কোনো চ্যাম্পিয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাই জাগেনি বহুদিন। প্রতিবারই যে ফাইনাল খেলছিল অন্তত একবার হলেও বিশ্বকাপ জেতা দলগুলো। সর্বশেষ২০১৫ বিশ্বকাপে সুযোগ আসলেও তা কার্যকর হতে দেয়নি অস্ট্রেলিয়া।

২৭ বছর আগে সেই ১৯৯২ সালে সর্বশেষ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছিল ইংল্যান্ড।

অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত সেই বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ড দলকে পরাজিত করার মাধ্যমে পাকিস্তান দল প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করে।

১৯৭৫ সালে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডে পুরুষদের ক্রিকেট বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এর প্রধান কারণ ছিল একমাত্র টেস্টক্রিকেটভূক্ত দেশ হিসেবে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা থাকা।

প্রথম বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান, ভারত ও নিউজিল্যান্ড – ঐ সময়ের টেস্টভূক্ত এ ছয়টি দেশ এবং শ্রীলঙ্কাসহ পূর্ব আফ্রিকা দল অংশগ্রহণ করে।

আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে দক্ষিণ আফ্রিকার অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় অংশ নিতে পারেনি।

সেবার ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ১৭ রানের ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করে ট্রফি জিতে প্রথম বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়।

পরের দুই বিশ্বকাপও ১৯৭৯ ও ১৯৮৩ সালে পুণরায় ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৭৯ সালে বিশ্বকাপকে ঘিরে প্রথমবারের মতো আইসিসি ট্রফি’র প্রবর্তন করা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বকাপে কেবলমাত্র টেস্ট ক্রিকেট বহির্ভূত শ্রীলঙ্কা ও কানাডা দলকে বিশ্বকাপের জন্য মনোনীত করা হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৯২ রানের ব্যবধানে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে পুণরায় শিরোপা জিতে।

১৯৮৩ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা দল টেস্টভূক্ত দল হিসেবে অংশগ্রহণ করে। আইসিসি ট্রফি জয়ের মাধ্যমে জিম্বাবুয়ে দল বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায়।

ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে ৪৩ রানের ব্যবধানে পরাজিত করে অঘটন ঘটায় ও প্রথমবারের মতো শিরোপা লাভ করে ভারত।

১৯৮৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ ভারত ও পাকিস্তানে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত হয়। এরফলে এটিই প্রথম বিশ্বকাপ যা ইংল্যান্ডের বাইরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

সেবারই প্রথম ৫০ ওভারের খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

অস্ট্রেলিয়া মাত্র ৭ রানের ব্যবধানে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে শিরোপা লাভ করে যা অদ্যাবধি বিশ্বকাপের ফাইনালে সর্বাপেক্ষা স্বল্প ব্যবধানের জয় ।

১৯৯২ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত হয়। রঙিন পোশাক, সাদা বলের ব্যবহার, দিবা-রাত্রির খেলা প্রভৃতি পরিবর্তন আনা হয়।

আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গন থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল প্রথমবারের মতো প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

একসময় ‘কোণঠাসা বাঘ’ নামে পরিচিত পাকিস্তান শুরুতে খারাপ করলেও ইমরান খানের হাত ধরে বিজয়ী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত খেলায় দলটি ইংল্যান্ডকে ফাইনালে ২২ রানে পরাজিত করে।

১৯৯৬ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় প্রথমবারের মত শ্রীলংকা ক্রিকেট দল।এই বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ভারত,পাকিস্তান ও শ্রীলংকায়।

১৬ বছর পর ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা ফিরে আসে।

গ্রুপ-পর্বে দুই খেলায় পরাজয়ের পরও শিরোপা প্রত্যাশী দলগুলোর অন্যতম অস্ট্রেলিয়া দল বাদ-বাকী সাত খেলায় জয়ী হয়ে শিরোপা লাভে সক্ষম হয়।

ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া দল পাকিস্তানকে মাত্র ১৩২ রানে অল-আউট করে। মাত্র ২০ ওভারের মধ্যেই আট উইকেট হাতে রেখে অস্ট্রেলিয়া জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।

২০০৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া রানের হিসাবে সবচেয়ে বড় জয় পায়| তারা ভারতকে ১২৫ রানে হারায়। এ বিশ্বকাপে তারা সবগুলো খেলায় জয় লাভ করে।

এই টুর্নামেন্টের অস্ট্রেলিয়ার সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন রিকি পন্টিং। তিনি ৫১ গড়ে ৪১৫ রান করেন । আর সেরা বোলার ছিলেন ব্রেট লি , তিনি ২২ টি উইকেট নেন।

২০০৭ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া ৫৩ রানে শ্রীলঙ্কাকে পরাজিত করে বিশ্বকাপ জয় করে।

২০০৭ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ জয়ের হ্যাটট্রিক করে। এই টুর্নামেন্টেও তারা অপরাজিত থাকে।ম্যাথু হেইডেন টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ৬৫৯ রান করেন, গ্লেন ম্যাকগ্রা ২৬ উইকেট নেন।

২০১১ সালে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে বিশ্বকাপ আয়োজিত হয়েছিল। বাংলাদেশ প্রথম বিশ্বকাপের আয়োজক দেশের মর্যাদা পায়।

শ্রীলঙ্কাকে ৬ উইকেটে হারিয়ে ভারত ২য় বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়।

১৯৯২ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের পর অস্টেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয়বারের মতো ২০১৫ সালে যৌথভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে।

ফাইনাল খেলায় নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। খেলায় অস্ট্রেলিয়া ৭ উইকেটে জয়ী হয়ে পঞ্চমবারের মতো শিরোপা লাভ করে।

অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৫ বার চ্যাম্পিয়ন হয় , ১৯৮৭,১৯৯৯,২০০৩,২০০৭, ২০১৫ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। এছাড়াও তারা ১৯৭৫ ও ১৯৯৬ বিশ্বকাপে রানার্সআপ হয়।

দেখার বিষয়, ২০১৯ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে কোন দল নিজেদের প্রথমবারের মতো নিজেদের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হিসেবে বিশ্বদরবারে পরিচয় করাতে পারে।

-এইচএম

FacebookTwitter

About Bangla Daily

একটি পরিপূর্ণ বাংলা অনলাইন পত্রিকা। মাতৃভাষার দেশ বাংলাদেশ থেকে সরাসরি সস্প্রচারিত হচ্ছে।

View all posts by Bangla Daily