এক যৌনকর্মীর জানাজায় শত শত মুসল্লি কেন?

এক যৌনকর্মীর জানাজায় শত শত মুসল্লি কেন?
এক যৌনকর্মীর জানাজায় শত শত মুসল্লি কেন?

সারাদেশঃ
এতদিন পর্যন্ত যৌনকর্মীদের মরদেহ কোনরকমে মাটি চাপা দেয়া কিংবা নদীতে ফেলে দেয়া হতো। কিন্তু এই প্রথমবার ধর্মীয় মর্যাদার সঙ্গে জানাজা সম্পন্ন হলো একজন যৌনকর্মীর।

বাংলাদেশের রাজবাড়ি জেলার দৌলতদিয়া বিশ্বের বৃহত্তম পতিতালয়ের একটি। এই দৌলতদিয়ায় দীর্ঘদিন যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন হামিদা বেগম। গত সপ্তাহে ৬৫ বছর বয়সি এই নারী অসুখে ভুগে মারা যান। আর তার লাশের জানাজা পড়ানোর মাধ্যমেই যৌনকর্মীদের জন্য এতদিন ধরে জানাজা না পড়ানোর যে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা ছিল তার অবসান ঘটলো। ঐতিহাসিক এই মুহুর্তটির স্বাক্ষী হওয়ার জন্য অনেকেই তার জানাজায় অংশ নিয়েছিলেন।

বাংলাদেশে যদিও পতিতাবৃত্তি বৈধ কিন্তু ইমামরা এতদিন ধরে যৌনকর্মীদের জানাজা পড়াতে অস্বীকৃতি জানিয়ে এসেছিলেন। এছাড়া কোন কবরস্থানেও তাদের কবর দেয়ার অধিকার ছিল না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মরার পর নদীতে ভেসে যাওয়া কিংবা অজানা কোন কবরে শায়িত থাকাই তাদের নিয়তি ছিল।

কিন্তু যৌনকর্মীরা অন্তত মারা যাওয়ার পর ধর্মীয় মর্যাদার সঙ্গে কবরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করতেন। অবশেষে যৌনকর্মীদের একটি জোট স্থানীয় পুলিশকে এই ব্যাপারে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য রাজি করায়। যদিও ধর্মীয় নেতারা পতিতাবৃত্তিকে অনৈতিক কাজ বলে উল্লেখ করেন কিন্তু একজন পতিতার জানাজা পড়ানোর ব্যাপারে অবশেষে তারা সম্মতি দেন। যার ফলে সাবেক যৌনকর্মী হামিদা বেগমের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

মুসলিম অধ্যুষিত একটি দেশে যৌনকর্মীদের জন্য নেয়া এই ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন অ্যাক্টিভিস্টরা।

স্থানীয় পুলিশ প্রধান আশিকুর রহমান বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘ইমাম প্রথমে জানাজা পড়াতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। যৌনকর্মীদের জানাজায় অংশ নেয়ার ব্যাপারে ইসলামে কোন নিষেধাজ্ঞা আছে কি না এই বিষয়ে প্রশ্ন করার পর তিনি নিরুত্তর ছিলেন।’

যৌনকর্মী হামিদা বেগমের জানাজার বর্ণনা দিতে গিয়ে ওসি আশিকুর রহমান বলেন, ‘এটি অভূতপূর্ব একটি দৃশ্য ছিল। মানুষ জানাজা পড়ার জন্য গভীর রাত অবধি অপেক্ষা করেছে। যৌনকর্মীদের চোখ অশ্রুসিক্ত ছিল।’

তিনি জানান, ৬ ফেব্রুয়ারি হামিদা বেগমের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ২০০ জনের বেশি মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

হামিদা বেগমের কবরে দাঁড়িয়ে ছিলেন তার ছেলে মুকুল শেখ এবং কন্যা লক্ষ্মী। লক্ষ্মীও একজন যৌনকর্মী।

৩৫ বছর বয়সি লক্ষ্মী বলেন, ‘তার এরকম সম্মানজনক বিদায় হবে তা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। আমার মাকে যেন মানুষের মত সম্মান দেয়া হয়েছে।’

তিনি আশা করেন, এখন থেকে তার মায়ের মত সকল যৌনকর্মীর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

-ডিকে

FacebookTwitter