বিনোদনঃ
সম্প্রতি চিত্রনায়িকা পরীমণির কাণ্ডে দেশজুড়ে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে। গণমাধ্যমে উঠে আসে সাভারের ‘ঢাকা বোট ক্লাব’ এবং গুলশানের ‘অল কমিউনিটি ক্লাব’র নাম।

আর ঘুরেফিরে পরীমণিকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু গিয়ে দাঁড়ায় ‘মদ’।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরীমণির স্ট্যাটাস ও লাইভে সাংবাদিক সম্মেলনের ফলে ইতোমধ্যেই গ্রেপ্তার হয়েছেন ঢাকা ক্লাবের কার্যনির্বাহী সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ ও তার সহযোগীরা। এরপরই একে একে বেরিয়ে আসে অভিজাত ক্লাবে ক্লাবে ‘মদ’ নিয়ে পরীমণির যতো কীর্তিকলাপ।

পুলিশের তদন্তে উঠে আসে-অল কমিউনিটি ক্লাবের লোকজনকে বেকায়দায় ফেলতে জাতীয় জরুরি সেবা হটলাইন ৯৯৯-এ কল দিয়ে উল্টো অভিযোগ করেছিলেন পরীমণি।

ঘটনার তদন্ত করে এমনটিই প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। শনিবার (১৯ জুন) গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী গণম্যমকে বলেন, “অল কমিউনিটি ক্লাবে ৭ জুন দিনগত রাতে পরীমণি যে ঘটনা ঘটিয়েছিলেন তার সত্যতা পাওয়া গেছে। ঘটনাটি আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। ৭ জুন দিনগত রাতে পরীমণি ৯৯৯-এ কল দেন এবং পুলিশের সহায়তা চান। তখনই পুলিশ ‘রেসপন্স’ করে খুব দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।

পরীমণির অভিযোগ ছিল-‘ওই ক্লাবে তাকে আটকে ফেলা হয়েছে’, কিন্তু সেখানে গিয়ে পুলিশ ভিন্নতর পরিস্থিতি দেখে। বিশেষ করে ক্লাবে কর্মরত সহায়তাকর্মী এবং নিরাপত্তাকর্মীদের সাথে পরীমণি এবং তার সঙ্গীদের তর্কবিতর্ক হতে দেখে পুলিশ।

তখন ক্লাবের লোকজন পরীমণি ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে ভাঙচুর ও শারীরিক লাঞ্ছনার অভিযোগ করেন। বিষয়টি ক্লাবের অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও শৃঙ্খলার স্বার্থে উপস্থিতি পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরবর্তীতে পরীমণি ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।”

ডিসি আরও বলেন, ‘ঘটনাটি নিয়ে আমরা দাপ্তরিক দায়িত্ব পালন করেছি। সে ঘটনার বিষয়টি আমরা লিপিবদ্ধ করেছি। এখন আমরা অপেক্ষা করছি- অল কমিউনিটি ক্লাব যদি পরীমণির বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে চায় তাহলে অবশ্যই আমরা তা আমলে নিয়ে যথাযথভাবে তদন্ত করবো।

বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করলেই আমরা আইনগত ব্যবস্থায় যেতে পারবো। তবে এখনও ক্লাব কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এরপরও বিষয়টি আমরা গভীরভাবে নজরে রেখেছি।

এছাড়াও বোট ক্লাবে যে ঘটনা ঘটেছে, সেটি তদন্তের ক্ষেত্রে কেউ যদি অল কমিউনিটি ক্লাবে পরীমিণি বিষয়ে সহযোগিতা চায়, আমরা তা করতে প্রস্তুত আছি।’

কমিনিউনিটি ক্লাবের সংশ্লিষ্ট স্টাফদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, গত ৮ জুন বোট ক্লাবের ঘটনার আগের রাতে পরীমণি ও তার ৪ সহযোগীকে মাত্র চার প্যাগ মদ দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে অল কমিউনিটি ক্লাবের স্টাফকে মারধর ও তার দিকে গ্লাস ছুড়ে মারেন, যে কারণে মদের আস্ত বোতল দিতে বাধ্য হন ক্লাব স্টাফরা। কেবল মারধর নয়, চরম অরুচিকর গালিগালাজও করেন পরীমণি। এবার এসব সত্য লুকিয়ে মিথ্যা অভিযোগ দেয়ায় পরীমণির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার অপেক্ষায় রয়েছে পুলিশ।

ওই স্টাফদের দেয়া সাক্ষ্যের ভিডিও চিত্র গণমাধ্যমের হাতেই রয়েছে।

গত ৮ জুন রাত ১টা ৪০ মিনিটে পরীমণি তার সঙ্গী ‘জিমি’ আর ‘তামিমকে’ নিয়ে অল কমিউনিটি ক্লাবে ঢোকেন। মদ না পেয়ে ঘটান বেসামাল কাণ্ড।

তবে, ক্লাব কর্তৃপক্ষের এ বর্ণনা অস্বীকার করে ভিন্ন দাবি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে পরীমণির। ক্লাবে তেমন কিছু ঘটাননি দাবি করলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আস্ত বোতল না দেয়ায় তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়েছেন পরীমণি।

বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অল কমিউনিটি ক্লাবের সভাপতি কে এম আলমগীর ইকবাল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের ক্লাবটি সোশ্যাল ক্লাব, আসলে এটি কোনো রাজনৈতিক ক্লাব নয়। তাই আমরা রেষারেষি বা পাল্টাপাল্টি মামলায় যেতে চাচ্ছি না। আমাদের বক্তব্য হলো- আমাদের এক সদস্যের সঙ্গে তার ২-৩ জন গেস্ট অসময়ে এসেছিল। যে কারণে ওই গেস্টরাও আমাদের কাছে সম্মানিত। ক্লাবে অল্প একটু অবান্তর ঘটনা ঘটেছিল। পরে তারা চলে গেছে।

আমাদের ক্লাবে সাধারণত গেস্ট অ্যালাউ না, তবে কোনো মেম্বারের সঙ্গে গেস্ট অ্যালাউ। এমন পরিস্থিতিতে ক্লাবের যে নিয়ম আছে, আমরা সে অনুযায়ী- সংশ্লিষ্ট মেম্বারকে শোকজ করেছি।

আগামী সপ্তায় আমাদের বোর্ড মিটিং রয়েছে, ওই মিটিংয়ে তার ‘ইনহাউজ’ বিচার হবে। আমরা এ বিষয়ে পুলিশি অভিযোগে যাচ্ছি না বা আইনের দ্বারস্থ হচ্ছি না কিংবা এ বিষয়টি কখনোই আমরা পুলিশের কাছে যাব না।’

সংশ্লিষ্ট ওই ক্লাব মেম্বারের নাম-পরিচয় জানতে চাইলে সম্মানের কথা চিন্তা করে তা প্রকাশ করতে চাননি অল কমিউনিটি ক্লাবের সভাপতি কে এম আলমগীর ইকবাল।

সম্প্রতি বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তোলার পর পরীমণিকে নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এর মধ্যেই গত বুধবার (১৬ জুন) পরীমণির বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবে ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। সেদিন রাতে গণমাধ্যমকে পরীমণি জানান, তিনি অল কমিউনিটি ক্লাবে গিয়েছিলেন সত্যি, কিন্তু অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটাননি।

এর আগে, গত রোববার (১৩ জুন) রাতে নিজের ফেসবুক পেজে নিজেকে ধর্ষণচেষ্টা, হত্যাচেষ্টা ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন পরীমণি। বিচার চেয়ে আবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী বরাবর।

পরেরদিন সোমবার (১৪ জুন) সাভার থানায় নির্যাতন ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে ঢাকা বোট ক্লাবের এন্টারটেইনমেন্ট অ্যান্ড কালচারাল অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমিসহ অজ্ঞাত ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন পরীমণি।

এদিনই নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমিসহ ৫ জনকে উত্তরা থেকে আটক করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। মাদক মামলায় নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমি, লিপি আক্তার, সুমি আক্তার ও নাজমা আমিন স্নিগ্ধা বর্তমানে রিমান্ডে আছেন।

-কেএম

FacebookTwitter

About Bangla Daily

একটি পরিপূর্ণ বাংলা অনলাইন পত্রিকা। মাতৃভাষার দেশ বাংলাদেশ থেকে সরাসরি সস্প্রচারিত হচ্ছে।

View all posts by Bangla Daily