উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং এর অটোমেশন কার্যক্রম শুরু

উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং এর অটোমেশন কার্যক্রম শুরু
উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং এর অটোমেশন কার্যক্রম শুরু

কৃষি সংবাদঃ

আজ একটি অনলাইন সভার মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীন উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং এর অটোমেশন কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করা হয়।

এই পুরো প্রক্রিয়াটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে দেশের প্রথম সারির আইসিটি ও দেশের বৃহত্তম ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারি প্রতিষ্ঠান সিনেসিস আইটি লিমিটেড।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় এর মাননীয় মন্ত্রী ডঃ মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার মোঃ মেসবাহুল ইসলাম; সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ডঃ মোঃ জাফর উদ্দীন; গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোল।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং-এর পরিচালক কৃষিবিদ ডঃ মোঃ আজহার আলী। সভাপতির বক্তব্য প্রদান করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ আসাদুল্লাহ।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কৃষিবিদ কামরুন নাহার, বিশ্ব ব্যাংক এর হোসনা ফেরদৌস সুমি, চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর পরিচালক এ কে এম আখতার হোসেন, অতিরিক্ত সচিব ও প্রকল্প পরিচালক এক্সেস টু ইনফরমেশন (এ২আই) ডঃ মোঃ আব্দুল মান্নান, এবং প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান সিনেসিস আইটি এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহরাব আহমেদ চৌধুরী।

মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠিত এই অনলাইন সভাটি কৃষি পণ্য আমদানি এবং রপ্তানি সংশ্লিষ্ট মানুষদের জন্য ছিল এক আশার বাণী। এই অটোমেশন কার্যক্রমের বহুবিধ সুবিধা উপভোগ করতে পারবে গ্রাহক।

বর্তমানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ৩০ টি বিভাগে প্রায় ৪,০০০ আমদানিকারক এবং রপ্তানিকারক রয়েছে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পণ্য আমদানি-রপ্তানি এর সাথে জড়িত। এই অটোমেশন প্রক্রিয়ার পর আর কোন ধরণের সনদ প্রদান কার্যক্রম ম্যানুয়ালি চলবে না।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রণালয় এর মাননীয় মন্ত্রী ডঃ মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, এমপি বলেন, “আজ আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের দিন কেননা আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনার এমডিজি গোল বাস্তবায়নের দিকে আমরা আরোও এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছি। আর এই সফলতার জন্য তিনি আমাদের তরুণ সমাজকে ডিজিটাল পন্থায় কাজ করার অহ্ববান জানান। তার ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা আমাদের দেশের প্রায় প্রতিটি খাতকে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি। আর এরই ফলশ্রুতিতে উদ্ভিদ সংগনিরোধ খাতে অটোমেশনের আজ যাত্রা শুরু হচ্ছে। যা আমাদের আমদানি-রপ্তানিকারকদের কাজকে করেছে নির্ভুল এবং দ্রুতগামী। আর সব থেকে বড় দিক হচ্ছে, এই অটোমেশনের ফলে কার্যপদ্ধতির সচ্ছতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি আশা করছি আমরা সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় আরও সামনে এগিয়ে যাব”।

এসময় কৃষিবিদ কামরুন্নাহার বলেন, “এই অটোমেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের গ্রাহকদের আন্তর্জাতিক মানের পরিষেবা প্রদান করতে পারব। এই অটোমেশনের মাধ্যমে আমরা যে ফাইটো স্যানিটারি সার্টিফিকেট প্রদান করছি তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং আইএসপিএম ১২ দ্বারা এটা প্রসিদ্ধ”।

এছাড়াও অতিরিক্ত সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোল বলেন, “বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের কৃষি খাত। আজকের এই অটোমেশন প্রক্রিয়া তারই বহিঃপ্রকাশ। আমি এই উইং এর সাথে সম্পৃক্ত সকল মানুষকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে একযোগে কাজ করার আহ্ববান জানাই”।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ডঃ মোঃ জাফর উদ্দীন কৃষি মন্ত্রীর সাথে যুক্ত করে বলেন, “মাননীয় কৃষি মন্ত্রী এবং তার মন্ত্রণালয়ের কৌশলগত পরিকল্পনাকে আমি সাধুবাদ জানাই যা আমাদের দেশের কৃষি সয়ংসম্পূর্ণতাকে একটি উচ্চ মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে। সংগনিরোধ উইং এর এই অটোমেশন প্রক্রিয়ায় সার্টিফিকেশন কার্জক্রমের জালিয়াতি বন্ধ করতে অনন্য ভূমিকা পালন করবে। এছাড়াও এই প্রক্রিয়া কাজের গতি বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে”।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ মেসবাহুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে বলেন, “আজকের দিনটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য বিশেষ দিন। একটি নতুন অধ্যায় আজ সংযোজিত হতে যাচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়ে। আমরা আমাদের ডিজিটাইলাইজেশনের অগ্রযাত্রা চালিয়ে যেতে চাই যা আমাদেরকে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করে তুলবে”।

এই প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান সিনেসিস আইটি এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহরাব আহমেদ চৌধুরী বলেন, “সিনেসিস আইটি ১৪ বছর ধরে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। গত ১৪ বছরে আমরা শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি, বিপিও, স্থানীয় সরকার, এনার্জি এন্ড পাওয়ার সেক্টরে প্রায় ১৫০ টি প্রকল্পে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে। মানেজড সার্ভিস ভিত্তিক এই অটোমেশন প্রক্রিয়াটি সব দিক দিয়েই অনন্য এক মাত্রা পাবে এবং এই প্রকল্প ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে বলে আমরা আশা করছি”।

এসময় অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ আসাদুল্লাহ বলেন, “কৃষি মন্ত্রণালয় আমাদের দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়, এর সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে অনেকগুলো অংশ যার একটি হচ্ছে উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং। আজকের এই অটোমেশন প্রক্রিয়া আমাদের বৈদেশিক বাণিজ্যকে আরও তরান্বিত করবে। এই অটোমেশন প্রক্রিয়াটিতে ফাইটো স্যানিটারিভিত্তিক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে যা আমাদের বিভিন্ন দেশের সাথে আমদানি রপ্তানিকরণ শক্তিকে আরও জোরদার করবে”।

এই অটোমেশন প্রক্রিয়ার অধীনে রয়েছে পণ্যের জন্য ইম্পোর্ট পারমিট সার্টিফিকেট, ফাইটো স্যানিটারি সার্টিফিকেট, রিলিজ অর্ডার সার্টিফিকেট, অ্যানকোরেজ সার্টিফিকেট সম্পর্কিত সকল কার্যক্রম। সকল সার্টিফিকেট এর কাজ আগে ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে সম্পাদিত হত; যা ছিল গ্রাহকদের জন্য যথেষ্ট ভোগান্তিকর এবং সময় সাপেক্ষ। কিন্তু এই অটোমেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্রাহক অনলাইনেই এসব সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করতে পারবেন এবং সার্টিফিকেট সংগ্রহও করতে সক্ষম হবেন। অন্যদিকে, সুরক্ষিত ডাটাবেজ এসব সার্টিফিকেটের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা প্রদান করতে সক্ষম হবে। এছাড়াও সার্টিফিকেটের নির্দিষ্ট নম্বর দিয়ে সার্টিফিকেটের সত্যতা যাচাই বা ভেরিফিকেশনেরও সুযোগ রয়েছে।
এছাড়াও গ্রাহকের ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা আরও সুন্দর করার লক্ষ্যে থাকছে কল সেন্টার সেবা। গ্রাহকের যে কোন ধরনের জিজ্ঞাসার উত্তর মিলবে এই কল সেন্টারে। এ ছাড়াও এই অটোমেশন প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে অনলাইনে ট্রেজারী ফিস জমা দেয়ার সুব্যবস্থা। ফলে গ্রাহকরা যেকোন স্থান থেকে সহজেই লেনদেন করতে পারবেন।

আরও পড়ুন:

পারিবারিক পুষ্টি বাগান প্রকল্পের অনুমোদন

উল্লেখ্য যে, এই প্রকল্পের আওতায় সিনেসিস আইটি ২০১৫ সালের ১৪ই মে থেকে এখন পর্যন্ত নিয়মিতভাবে ও সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছে। উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং এর কার্যক্রম ও এই সংক্রান্ত আইন ও বিধিমালার উপর জ্ঞান অর্জন, গবেষণা ও সকল কার্যক্রম সমূহকে সফটয়্যার ডেভেলপমেন্টের উপযোগী করে তুলতে দীর্ঘ সময় একটি বড় ও অভিজ্ঞ টিম নিয়ে কাজ করতে হয়েছে এবং এই মডিউল সমূহকে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সিনেসিস আইটি অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছে। সিনেসিস আইটি’ই বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান যাদের এই বিরল অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও দক্ষতা রয়েছে।

-শিশির

FacebookTwitter