জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন প্রাথমিকভাবে ইভিএম ব্যবহারের জন্য যোগ্য বলে শহরাঞ্চলের ৪৮টি আসন বাছাই করেছিল। এর মধ্যে থেকে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে ছয়টি আসন বেছে নেয়া হয়। যে ছয়টি আসনে ইভিএম এ ভোটগ্রহণ হবে যেগুলো হলো- রংপুর-৩, খুলনা-২, সাতক্ষীরা-২, ঢাকা-৬, ঢাকা-১৩ ও চট্টগ্রাম-৯।
ইভিএম’র ছয়টি আসনে ভোটকেন্দ্র ৮৪৫ ও ভোটকক্ষ ৫ হাজার ৪৫টি। ইভিএম আসনে ভোটার সংখ্যা ২১ লাখ ২৪ হাজার ৫৫৪ জন।
গত ২৭ ডিসেম্বর প্রতিটি ইভিএম আসনগুলোতে ‘অনুশীলনমূলক’ ভাবে ইভিএমে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করা হয় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। উক্ত ছয়টি সংসদীয় আসনের ভোটারদের ইভিএমের মাধ্যমে ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে উৎসাহ উদ্দীপনা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষিত করে তোলার লক্ষ্যে এ আয়োজন করা হয়। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যারা ইভিএমে ভোট দিয়েছেন। সেইসব ইভিএমের থেকে এবারের ইভিএম মেশিন অনেক উন্নত।
জাতীয় নির্বাচনে ব্যবহৃত ইভিএমের পার্থক্য হলো, ভোটার ভোট দেয়ার পর সেটা একটা ভয়েস থেকে নিশ্চিত করা হবে যে, ‘আপনার ভোট দেয়া সম্পন্ন হয়েছে’। এছাড়া ব্যালটের কি বোর্ডের কালারের সঙ্গে ইভিএম মেশিনের কালারের কিছু পার্থক্য রয়েছে।
ইভিএমে ভোট পদ্ধতিঃ
স্মার্ট কার্ড না থাকলেও লেমেনেটিং করা ভোটার কার্ডের নাম্বার দিয়ে ভোট দেয়া যাবে। এছাড়া হাতের আঙ্গুলের ছাপ তো রয়েছেই। যদি আঙ্গুলের ছাপ না মিলে তাহলে ভোটার আইডি কার্ডের নাম্বার দিলেও ভোট দেয়া যাবে। ইভিএম মেশিনের ইউনিটগুলো হলো, ব্যালট ইউনিট: এর মাধ্যমে প্রার্থীর প্রতীক ও ছবি ভেসে উঠবে। কন্ট্রোল ইউনিট: এটি থাকে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সামনে। ডিসপ্লে ইউনিট: ইভিএমের সঙ্গে একটি বড় ডিসপ্লে ইউনিট আছে। এটি বুথের ভেতর ভোট-সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টিগোচরে রাখা থাকে। যেভাবে ভোট দিবেন ইভিএম মেশিনে, ভোটকেন্দ্রের নির্ধারিত কক্ষে প্রিসাইডিং অফিসার আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্টকার্ড, আঙুলের ছাপ, ভোটার নম্বর যাচাই করে ভোটার হিসেবে নিশ্চিত করবেন। এসময় আপনার ছবি ও তথ্যাবলি একটি ডিসপ্লে মনিটরে প্রদর্শিত হবে। যাতে সকল প্রার্থীর এজেন্টরা আপনার পরিচয় দেখতে পারেন। ভোট প্রদান ভোটার হিসেবে শনাক্তকরণের পর গোপন কক্ষে থাকা ইভিএম মেশিনগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সচল হবে। যতগুলো পদের জন্য ভোট প্রদান করতে হবে কক্ষের ভেতরে ঠিক ততগুলো ডিজিটাল ব্যালট ইউনিট রাখা থাকবে। এই ইউনিটে প্রার্থীদের প্রতীক বাম পাশে এবং নাম ডান পাশে দেখা যাবে। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে তার প্রতীকের বাম পাশের সাদা বাটনে চাপ দিতে হবে। এসময় প্রতীকের পাশে বাতি জ্বলে উঠবে। ভোট নিশ্চিত করতে ডানপাশের সবুজ বাটনে চাপ দিতে হবে। একই প্রক্রিয়ায় অন্যান্য পদের জন্যও ভোট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। কোনও কারণে আপনি ভুল প্রতীক শনাক্ত করেন তবে সবুজ বাটন চাপ দেয়ার আগে তা সংশোধন করতে পারবেন। ভুল সংশোধনের আগে ডানপাশের লাল বাটনে চাপ দিন। এতে ভুল করে দেয়া পূর্বের ভোটটি বাতিল হয়ে যাবে। ফলে নতুন করে ভোট দেয়ার সুযোগ পাবেন। সঠিকভাবে পুনরায় প্রতীকের পাশের বাটনে চাপ দিয়ে সবুজ বাটনে চাপ দিয়ে ভোট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। সবুজ বাটন চাপ দেয়ার পর আপনার ভোট দেয়া প্রতীক ছাড়া বাকি সব প্রতীক অদৃশ্য হয়ে যাবে। এতে আপনি নিশ্চিত হবেন যে, ওই প্রতীকে আপনার ভোট প্রদান প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ইভিএম কেন্দ্রগুলোতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে। একটি কেন্দ্রে তিনজন করে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে আইটি এক্সপার্ট লোক থাকবে। ছয়টি কেন্দ্রেই ইভিএম এর পাশাপাশি ব্যালট থাকবে। এছাড়া ইভিএম মেশিনের ব্যাটারি ৪৮ ঘণ্টা ব্যাকআপ দিবে।