নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা ইউনিটে অগ্নিকান্ডে ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় কর্তৃপক্ষের গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। এর প্রেক্ষিতে হাসপাতালের চারজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তারা হলেন-ইউনাইটেড হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. হাসান মাহমুদ রাজা, ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) ফরিদুর রহমান খান, সিইও মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান ও পরিচালক (চিফ ক্লিনিক্যাল গর্ভন্যান্স ডা. আবু সাঈদ এমএম রহমান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশের গুলশান বিভাগের ডিসি সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, আগুনের ঘটনায় পুলিশের গঠিত তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। দায়িত্বে অবহেলা থাকলে যতই প্রভাবশালী হোক তাকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে। চারজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের তদন্তে উঠে আসে, হাসপাতালের অস্থায়ী আইসোলেশন ওয়ার্ডে অগ্নি নির্বাপনের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ব্লিডিং কোড না মেনে আর যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই আইসোলেশন ইউনিট তৈরি করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আগুন লাগার পর ক্লিনার আরাফাত ছাড়া কেউ নেভানোর জন্য এগিয়ে যাননি। আগুন লাগার পরপরই ডাক্তার-নার্সসহ অন্যরা রোগীদের সরানোর নেওয়ার চেষ্টা না করেই নিরাপদে সরে পড়েন।
ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যথাযথ কোনো অনুমতি না নিয়েই অস্থায়ী আইসোলেশন ইউনিট তৈরি করেছিল। এসি থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল। ভিডিও ফুটেজ ও অন্যান্য আলামতের মাধ্যমে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পুলিশের তদন্ত সূত্র জানায়, সাধারণত যে ধরনের আইসোলেশন ইউনিট ইউনাইটেড হাসপাতাল তৈরি করেছিল, সেই ধরনের স্থাপনায় অদাহ্য পদার্থ ব্যবহার করা হয়। তবে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাহ্য পদার্থ দিয়ে আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করে। আইসোলেশন ওয়ার্ডের ভেতরে ছিল সব দাহ্য পদার্থ।
গত ২৭ মে রাজধানীর অভিজাত হাসপাতাল খ্যাত ইউনাইটেডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৫ রোগী মারা যান। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে পুলিশ। আগুনে নিহত এক রোগীর স্বজন ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ারম্যান, এমডি, সিইও, পরিচালক, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক-নার্স, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত এবং তাচ্ছিল্যপূর্ণ কাজের কারণে রোগীদের মৃত্যুর অভিযোগ এনে গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, আগুনের ঘটনায় একটি তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। এখন অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুর অভিযোগে যে মামলা হয়েছে সেটির তদন্ত চলছে।
সম্প্রতি এক্সিম ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের অপহরণ ও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে মামলা হওয়ার পর ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক রন হক সিকদার ও তার ভাই দিপু হক সিকদার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ব্যাংককে পালিয়ে যান। ওই বিষয়টি মাথায় রেখেই ইউনাইটেডের ঘটনায় প্রভাবশালীরা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে সেজন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে নিষেধাজ্ঞা জারি করে পুলিশ।
-এফকে