অনলাইনঃ
আলোকচিত্রী শহীদুল আলমের স্ত্রী-স্বজনরা সকাল সাড়ে ১১টার ভেতর পৌঁছে যান কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে।
এরপর আইনজীবীরা তার জামিনের কপি কারাগারে পৌঁছে দিয়েছেন। তখন থেকে শুরু হয় অপেক্ষা। কখন বের হবেন শহীদুল। ঘড়ির কাটায় সময় বাড়তে থাকে। সকাল পার হয়ে দুপুর হয়। দুপুর গড়িয়ে বিকেল। বিকেল পার করে সন্ধ্যা কিন্তু শহীদুল আলমের মুক্তির দৃশ্যটির দেখা মেলেনা। উদ্বেগ বাড়তে থাকে। অপেক্ষার ক্ষণ রুপ নেয় দুঃশ্চিন্তায়…।
অবশেষে রাত সাড়ে আটটায় শহীদুল আলমের জন্য খুলে যায় কারাগারের ফটক। ১০৬ দিনপর কারাগার থেকে মুক্তি মিললো আলোকচিত্রী শহীদুল আলমের। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে করা মামলায় আটক শহীদুল আলম মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় শহীদুল আলম বলেন, ‘আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আমরা জন্য আইনী লড়াই করেছেন যারা তাদের কাছে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। একই সাথে দেশের ও দেশের বাইরে বিভিন্ন জায়গা থেকে অসংখ্য মানুষ যারা আমার জন্য প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
গত ১৫ নভেম্বর বিচারপতি শেখ আব্দুল আউয়াল ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ তাকে জামিন দেন। বৃহস্পতিবার আদালত তার জামিন দিলেও আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় কারাগার থেকে মুক্তি মেলেনি। মঙ্গলবার তার জামিনের কাগজ কারাগারে পৌঁছালেও মুক্তি নিয়ে বিলম্ব শুরু হয়।
শহীদুল আলমের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যার্তিময় বড়ুয়া বলেন, শহীদুল আলমের জামিন অর্ডার সাড়ে ১১টার ভেতর পৌঁছে দেয়া হয়েছে। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ এই জামিন আদেশের ঠিকানায় কিছু ভুল খুঁজে পেয়েছে। এরপর জজকোর্ট থেকে এই আদেশ সংশোধন করিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু তারা চাইলে আরো আগেই ছাড়তে পারতো। শহীদুল আলম একজন ‘ফেমাস’ লোক। তার বাবার নামসহ অনান্যসব কিছুই ঠিক ছিলো। এটা এক ধরনের হেনস্তা করা হয়েছে।
দেশব্যাপী নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন চলা সময়ে গত ৫ আগস্ট রাতে ডিবি পুলিশের সদস্যরা তাকে আটক করে নিয়ে যায় ধানমন্ডির বাসা থেকে। আটকের আগে শহীদুল আলম তার বাস ভবনে থেকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আলজাজিরায় আন্দোলন ও তৎকালীন পরিস্থিতি নিয়ে স্বাক্ষাতকার দিয়েছিলেন।
আটকের পরেরদিন ৬ আগস্ট রমনা থানায় তার বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ (২) ধারায় মামলা করা হয়। এরপর আদালতের মাধ্যমে তাকে প্রথম দফায় ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।
শহীদুল আলমকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে আটক রাখার প্রতিবাদ জানিয়ে ও মুক্তি চেয়ে দেশের পাশাপাশি সরব হয়ে ওঠে আন্তর্জাতিক ব্যক্তিরাও। প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিবৃতি দিতে থাকেন বরেণ্য বুদ্ধিজীবীরা। তার মুক্তিচেয়ে খোলা চিঠি দিয়েছেন ১৩ জন নোবেল জয়ী ব্যক্তি। বিশ্ব বরেণ্য বৃদ্ধিজীবী নোয়াম চমস্কি, অমর্ত্য সেন, অরুন্ধতী রায়, গায়ত্রী স্পিভাকসহ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুক্তির দাবি উঠে। এমনকি তার মুক্তি চেয়ে ঢাকার রাস্তায় গ্রাফিতিও আঁকা হয়।
–আরবি