প্রশাসনঃ
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। একইসঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যা এক দিনের রেকর্ড আরেক দিন ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
এমতাবস্থায় সারাদেশে চলমান সপ্তাহব্যাপী কঠোর লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো দরকার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রোববার (০৪ জুলাই) কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ গণমাধমকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে প্রথম থেকেই আমাদের বিজ্ঞানসম্মত পরামর্শ ছিল যে, দুই সপ্তাহের জন্য কঠোর লকডাউন দেওয়া যায় কিনা?
কিন্তু সরকার কোনো এক টেকনিক্যাল কারণে একসপ্তাহের জন্য কঠোর লকডাউন দিয়েছে। আমরা এখনও মনে করছি, করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে আরও একসপ্তাহ কঠোর লকডাউন বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে।’
রোববার (৪ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করোনায় গত চব্বিশ ঘণ্টায় সারাদেশে ১৫৩ জন মারা গেছেন। যা দেশে করোনার ইতিহাসে একদিনে সর্বোচ্চ । টানা অষ্টম দিনের মতো দেশে একদিনে একশ’র ওপরে মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট মৃত্যু ১৫ হাজার ৬৫ জন। করোনা শনাক্ত হার বেড়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত ৮ হাজার ৬৬১ জন। এ নিয়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৯১৭ জন। একই সময়ে সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ৬৯৮ জন। এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৩৩ হাজার ৮৯৭ জন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ২৯ হাজার ৩১৫টি। অ্যান্টিজেন টেস্টসহ নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৯ হাজার ৮৭৯টি। এখন পর্যন্ত ৬৭ লাখ ২৩ হাজার ৫৬০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি আরও বলেন, ‘সারাদেশে এখন সপ্তাহব্যাপী কঠোর লকডাউন চলমান। আরও একসপ্তাহ বাড়ানোর আমাদের যে পরামর্শ তা সরকার এখন পর্যন্ত সম্মতি দেয়নি। তবে কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি মনে করে যে, করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেতে হলে আরও একসপ্তাহ বাড়ানো দরকার।’
দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতির কারণে চলমান সপ্তাহব্যাপী কঠোর লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হবে কিনা বিষয়টি নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলেও আলোচনা চলছে। সারাদেশে চলা কঠোর লকডাউন গত ১ জুলাই সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়েছে, যা শেষ হবে ৭ জুলাই (বুধবার) মধ্যরাতে।
করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে চলতি বছরের ৫ এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ দিয়ে আসছে। দেশব্যাপী লকডাউনের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ বিধিনিষেধ জারি করে। এরপরও করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না আসায় সারাদেশে কঠোর বিধিনিষেধ দেওয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম গত ২৮ জুন মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকে বলেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ১ জুলাই থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ থাকবে। তবে প্রয়োজন মনে করলে আরও এক সপ্তাহ বাড়তে পারে।
চলতি বছরের গত ৩০ জুন সারাদেশে এক সপ্তাহের জন্য জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচল এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার বিষয়ে সরকার কঠোর বিধিনিষেধ ও নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি সব অফিস, যানবাহন ও দোকানপাট বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। এই সময়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হলে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো-
১. সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।
২. সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহনসহ সকল প্রকার যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচলও বন্ধ থাকবে।
৩. শপিংমল/মার্কেটসহ সকল দোকানপাট বন্ধ থাকবে।
৪. সকল পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
৫. জনসমাবেশ হয় এই ধরনের সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, জন্মদিন, পিকনিক পার্টি ইত্যাদি) রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
লকডাউন বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’বিধানের আওতায় মাঠপর্যায়ের কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয়সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
এতে আরো বলা হয়, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনা-বিজিবি-পুলিশ-র্যাব ও আনসার নিয়োগ এবং টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। সেই সঙ্গে বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহ এই বিষয়ে মাঠপর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।
চলমান বিধিনিষেধে শিল্পকারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা ও জরুরি পরিষেবা, স্বাস্থ্যসেবা, করোনার টিকাদান, রাজস্ব আদায় কার্যাবলি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন, ইন্টারনেট, গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তাব্যবস্থা, ডাকসেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসহ অন্যান্য জরুরি বা অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র দেখিয়ে যাতায়াত করতে পারছেন।
পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান, কার্গো ভেসেল এই নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত রয়েছে। বন্দরসমূহ (বিমান, সমুদ্র, নৌ, স্থল) ও সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে রয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনাবেচা করতে দেওয়া হচ্ছে।
-কেএম