গণমাধ্যমঃ
মাত্র ১৭ বছর বয়স থেকেই সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি হয় আবেদ খানের। এরপর পাঁচ দশকে বাংলাদেশের সাংবাদিকতাকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। দেশখ্যাত সাংবাদিক, কলামিস্ট ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবেদ খান বাংলাদেশের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় এক অসামান্য পথিকৃৎ।
নিজ নিজ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার মাধ্যমে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ নামক বিস্ময়কর গল্পের যাঁরা রূপকার, দেশের এমন অগ্রজদের নিয়ে আইপিডিসি ফাইন্যান্স-এর অনলাইন আয়োজন ‘অগ্রজ’-এর ২৬তম পর্বে সাংবাদিকতার মাধ্যমে সত্য উন্মোচনসহ ফেলে আসা জীবনের নানান ঘাত-প্রতিঘাতের স্মৃতিচারণা করেছেন আবেদ খান।
স্বনামধন্য ব্যাংকার আনিস এ খানের সুচারু উপস্থাপনায় অগ্রজ-এর মঞ্চে মনোজ্ঞ আলাপচারিতায় আবেদ খান শুনিয়েছেন তাঁর কর্মজীবনের শুরুর দিকের গল্প। ১৯৬২ দৈনিক ‘জেহাদ’-এ আবেদ খানের সাংবাদিকতা জীবনের শুরু, এখানে সহ-সম্পাদক হিসেবে বছরখানেক কাজ করার পর ১৯৬৩ সালে তিনি দৈনিক ‘সংবাদ’-এ যোগদান করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি দৈনিক ইত্তেফাক-এ যোগ দিয়ে এখানে পর্যায়ক্রমে শিফট-ইনচার্জ, প্রধান প্রতিবেদন, সহকারী সম্পাদক ও কলামিস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আবেদ খান স্মরণ করেন ভয়াল একাত্তরের অদ্ভূত সেই দিনরাত্রি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ১ মার্চ তিনি পুরান ঢাকার নারিন্দা-ওয়ারী অঞ্চলে স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদ কমিটির কনভেনর হিসেবে নিজেদের মাঝে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রস্তুতি পর্বের সূচনা করেন। এরপর জুন মাসে সংবাদ, ডেইলি পিপল, ইত্তেফাক ভবন এবং সারা ঢাকার ওপর বয়ে চলা বিশ্ব-ইতিহাসের ভয়াল ধ্বংসলীলার চাক্ষুষ সাক্ষী হিসেবে প্রথম তিনি কলকাতার আকাশবাণী বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেন। সে সময়ের অকুতোভয় মনোভাব ফুটে ওঠে তাঁর বলিষ্ঠ কণ্ঠে।
আবেদ খানের স্মৃতিচারণায় উঠে আসে বাংলাদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্রারম্ভিক যাত্রার দিনগুলো। ১৯৭২ সালের আগস্টে দৈনিক ইত্তেফাকে আবেদ খান তাঁর ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ‘ওপেন সিক্রেট’ প্রকাশ করা শুরু করেন, যা বাংলাদেশের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
আবেদ খান দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদকীয়, মন্তব্য প্রতিবেদন, দৈনিক সংবাদে অন্তর্দৃষ্টি-বিশ্লেষণাত্মক কলাম, দৈনিক প্রথম আলোতে ‘কালের কণ্ঠ’ শিরোনামে অসাধারণ সব উপসম্পাদকীয় কলাম লিখেছেন। ১৯৯৬-৯৯ সালে বিটিভিতে প্রচারিত আবেদ খানের অনুসন্ধানমূলক টেলিভিশন রিপোর্টিং সিরিজ ‘ঘটনার আড়ালে’ টেলিভিশন সাংবাদিকতাকে নিয়ে যায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে।
২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে দৈনিক কালের কণ্ঠে কাজ শুরু করেন তিনি। এরপর এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকতা ও প্রধান সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি দৈনিক জাগরণ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে অকান্ত কাজ করছেন। এছাড়াও প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আবেদ খান।
তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে অভাজনের নিবেদন, গৌড়ানন্দ কবি ভনে শুনে পুণ্যবান, কালের কণ্ঠ, প্রসঙ্গ রাজনীতি, হারানো হিয়ার নিকুঞ্জপথে (গল্প সংকলন), গৌড়ানন্দসমগ্র, দেশ কি জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্য হবে ইত্যাদি।
আইপিডিসি ফাইন্যান্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘দেশ গড়তে যারা অনস্বীকার্য অবদান রেখেছেন, সেইসব অগ্রগণ্য মানুষদের নিয়েই আমাদের এই আয়োজন ‘অগ্রজ’। আবেদ খান বাংলাদেশে সাংবাদিকতা জগতে অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর উপস্থিতি আমাদের এই উদ্যোগকে আরও অর্থবহ করে তুলেছে।’
দেশকে স্বাধীনতার পর থেকে গড়ে তুলতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখা মহান ব্যক্তিত্বদের কর্মময় জীবনের চড়াই-উৎরাই ও তাঁদের জানা-অজানা অমূল্য অভিজ্ঞতা সেইসব ব্যক্তিত্বদের কাছে সরাসরি জেনে নিতে এক ভিন্নধর্মী অনলাইন আয়োজন ‘অগ্রজ’। আইপিডিসি-র এই বহুল প্রশংসিত অনলাইন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করে থাকেন দেশের ব্যাংকিং জগতের অন্যতম পথিকৃৎ জনাব আনিস এ খান।