অনলাইন ডেস্কঃ
দুই দফা পেছানোর পর আজ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করবে বিএনপি।
২২ শর্তের বেড়াজালে তাদের জনসভা আয়োজনের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আজকের সমাবেশকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপিসহ তার অঙ্গ সংগঠনগুলো। দলটি বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ঘটিয়ে সাংগঠনিক শক্তি ও অনুকূল জনমতের জানান দিতে চায় নিজেদের একক এ জনসভায়। সেই সঙ্গে সোহরাওয়ার্দীর জনসভা থেকে সরকার, দেশবাসী ও দলের নেতাকর্মীদের কিছু বার্তা দেবে বিএনপি।
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের প্রতি কয়েক দফা দাবি ও দেশবাসীর প্রতি ১২ লক্ষ্য (অঙ্গীকার) ঘোষণা করা হবে। পাশাপাশি আগামীদিনের পথচলা ও দাবি আদায়ের সম্ভাব্য আন্দোলন নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের দেয়া হবে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা। এ জন্য সোহরাওয়ার্দীর জনসভায় দাওয়াত দেয়া হয়নি ২০দলীয় জোটের শরিক দল বা নতুন উদ্যোগ জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার নেতাদের।
তবে আজকের জনসভা থেকে জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার ব্যাপারে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বিএনপি নিজেদের অবস্থানও তুলে ধরবে।
এদিকে জনসভার অনুমতি পাওয়ার পর দুপুরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভাস্থল ও প্রস্তুতি পরিদর্শন করেন।
সোহরাওয়ার্দীর জনসভায় বড় জনসমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। কেন্দ্রীয় বিএনপির পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি সহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে। ঢাকা মহানগরের পাশাপাশি ঢাকা জেলা ও আশেপাশের নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও টাঙ্গাইল থেকে বিএনপি সহ অঙ্গ দলের নেতাকর্মীরা জনসভায় অংশ নেবেন। এই সব জেলা থেকে গতকালই রাজধানীতে এসে জড়ো হয়েছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মী। এ ব্যাপারে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা জনসভা সফল করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইতিমধ্যেই ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া ও প্রফেসর ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট যৌথভাবে ৫ দফা দাবি ও ৯টি লক্ষ্যের কথা ঘোষণা করেছে। একই লক্ষ্যে আট দলের সমন্বয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোটও প্রকাশ করেছে জাতীয় সনদ। তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় অবস্থান থেকে সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরেনি বিএনপি।
দলটির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জনসভা থেকে সরকারের উদ্দেশে ৭ দফা দাবি ও দেশবাসীর উদ্দেশে ১২ দফা লক্ষ্য (অঙ্গীকার) ঘোষণা করা হবে।
দাবিগুলো হচ্ছে- ১. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই জাতীয় সংসদ বাতিল, ২. খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার। সকল বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের ফল প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন কোনো মামলা না দেয়া, পুরনো মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার না করা, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মতপ্রকাশের অভিযোগে ছাত্রছাত্রী-সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি। ৩. সরকারের পদত্যাগ ও সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা। ৪. ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা। ৫. নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে কোনো ধরনের বিধিনিষেধ ছাড়াই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা। ৬. সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগ এবং ৭. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা। দুপুর দুইটা থেকে জনসভার মূল কার্যক্রম শুরু হলেও সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হতে থাকবে নেতাকর্মীরা। তবে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর।
এদিকে ২৮শে সেপ্টেম্বর রাতে জনসভা আয়োজনে তৃতীয় দফা অনুমতি চেয়ে পাঠানো আবেদনটির খোঁজ নিতে গতকাল সকালে ডিএমপি কমিশনারের কাছে যায় বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল। বেলা সাড়ে ১১টায় বিএনপির দুই কেন্দ্রীয় নেতা শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও আবদুস সালাম আজাদ ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত কমিশনারের সঙ্গে আলাপ করেন। এ সময় ২২টি শর্তে তাদের জনসভা আয়োজনের অনুমতি দেয় পুলিশ। শর্তগুলো হচ্ছে- আইনশৃঙ্খলার পরিপন্থি ও জনস্বার্থ, রাষ্ট্র ও জননিরাপত্তাবিরোধী কার্যকলাপ না করা, উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান ও প্রচারপত্র বিলি না করা, উদ্যানের ভেতরেই যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখা, পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সভাস্থল ও সভাস্থলের বাইরে সিসি ক্যামেরা বসানো, প্রতিটি প্রবেশপথে আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টরের ব্যবস্থা করা, স্ক্যানার সার্চ মিররের মাধ্যমে যানবাহন তল্লাশি করার ব্যবস্থা করা, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রাখা, অনুমোদিত স্থানের বাইরে সাউন্ড বক্স ব্যবহার না করা, রাস্তায় বা ফুটপাথে কোনো লোক সমবেত না হওয়া এবং মিছিল সহকারে জনসভাস্থলে না যাওয়া ইত্যাদি।