জাতীয়ঃ
‘নতুন নিশান উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক/এই বাংলায়/তোমাকে আসতেই হবে, হে স্বাধীনতা।’ কবি শামসুর রাহমানের কবিতার পঙক্তির মতো ৫৩ বছর আগে একসাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা এসেছিল এ বাংলায়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি পেয়েছিল লাল-সবুজের পতাকা ও স্বাধীন-সার্বভৌম একটি দেশ। সেই মহান বিজয় দিবস আজ।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন এক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবার মহান বিজয় দিবস পালন করছে জাতি। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক বাণীতে বলেছেন, একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও সুশাসিত বাংলাদেশ গঠনে সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করায় অঙ্গীকারবদ্ধ অন্তর্বর্তী সরকার।
আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ শেষে এই বিজয় বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরব ও অহংকারের দিন। লাখ লাখ বীর মুক্তিযোদ্ধার রক্তস্রোত, স্বামী-সন্তানহারা নারীর অশ্রুধারা, দেশের শ্রেষ্ঠসন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা আর বীরাঙ্গনাদের সীমাহীন ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত মহান এ বিজয়। এই দিন বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় বাঙালি জাতিকে এনে দিয়েছিল আত্মপরিচয়ের ঠিকানা।
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের দেশ ৫৩ বছর আগে পেয়েছিল নতুন এক সূর্য। সেই সূর্যকিরণে লেগে ছিল রক্ত দিয়ে অর্জিত বিজয়ের রং। সেই রক্তের রং সবুজ বাংলায় মিশে তৈরি করেছিল বাংলার লাল-সবুজ পতাকা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) শেখ মুজিবুর রহমান একাত্তরের ৭ মার্চ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বলে জাতিকে লড়াইয়ের ডাক দিয়েছিলেন, সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই পরাজয় মেনে নিয়ে মাথা নত করে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য অস্ত্র সমর্পণ করেছিল বাঙালি জাতির বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। সেই হিসাবে বিজয়ের ৫৩ বছর পূর্তি হয়েছে আজ। স্বাধীন বাংলাদেশ আজ পা রেখেছে ৫৪ বছরে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশকে আরো উন্নত ও শক্তিশালী করতে এবং স্বাধীনতার পূর্ণ সুফল ভোগ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস। দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গৌরবময় এবং স্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি স্বাধীনতার স্বাদ এবং জাতি হিসেবে নিজস্ব পরিচিতি। লাখ লাখ শহীদের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়ে যাই আমাদের কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বিজয় দিবস শুধু আমাদের গর্বের উৎস নয়, এটি আমাদের শপথের দিনও। শপথ আমাদের একতাবদ্ধ থাকার, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করার।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘আজকের এই দিনে আমাদের স্বাধীনতা-সংগ্রামের বীর শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি এবং তাদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাই। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং সুশাসিত বাংলাদেশ গঠনে সবাই একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করছে।’