আমিরুল ফয়সলঃ
এফআর টাওয়ার অগ্নিকাণ্ডের পর মাত্র তিনটি দিন পেরিয়েছে।গত ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউস্থ ২৩-তলা ওই ভবনে অগ্নিকাণ্ডে আটকাপড়া লোকজনকে উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিটের শত শত দমকলকর্মী যখন একযোগে প্রাণপণ লড়ছেন, ত্রাণকাজে যোগ দিচ্ছিলেন সেনা নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা, ঠিক তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হাজার হাজার উৎসুক জনতার নিষ্ক্রিয় ভিড় উদ্ধারকাজে জটিলতা বাড়িয়ে তুলেছিল।
অতি উৎসাহী জনতার অনেকে ভয়াবহ আগুনকে পেছনে রেখে নানা ঢঙে সেলফি তুলছিলেন, কেউ কেউ আটকেপড়া মানুষের দুর্দশাকে উপজীব্য করে ফেসবুকে লাইভ সম্প্রচার করছিলেন।
চরমতম ওই সংকটকালে ব্যতিক্রমধর্মী অথচ বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য দেশেবিদেশে দারুণ সুখ্যাতি কুড়িয়েছে কড়াইল বস্তির শিশু নাইম!
খুদে ভলান্টিয়ার নাইম এখন মিডিয়া, বিশেষত সোশাল মিডিয়ার কল্যাণে দেশেবিদেশে রীতিমতো তারকা, সেলিব্রিটি।
এই “আগুনে বীর”-কে আর্থিক প্রণোদনা জুগিয়ে সমর্থন দিয়েছে বর্তমানে স্পেনে প্রবাসী আরেক বীর! একাত্তরের মৃত্যুঞ্জয়ী এই বীরের নাম মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজল ইমাম (বাবু)! আজ দুপুরে বনানীর মার্কেন্টাইল ব্যাংকে অনাড়ম্বর, সংক্ষিপ্ত এক আয়োজনের মধ্য দিয়ে নাইমের মায়ের হাতে এক লক্ষ টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়েছে। এসময় নাইমের ফুপু নিলুফা, তার ছোট বোন কাজল সহ পরিবারের সদস্যরা ব্যাংকটির ওই শাখার ব্যবস্থাপক ফাইজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এদিকে মুক্তিযোদ্ধা ফজল মাহমুদের পক্ষে চেক হস্তান্তর করেন তাঁর অনুজপ্রতীম সুহৃদ, আরেক মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার মোহাম্মদ শফিউল ইসলাম।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজল ইমাম (বাবু) মূলত গোপালগঞ্জ জেলার সন্তান। একাত্তরে মাত্র বিশ বছর বয়সে মুজিব বাহিনীর প্রশিক্ষিত একজন গেরিলা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রথমে নড়াইলের কালিয়ায় ও পরে ঢাকা জেলায় বীর বিক্রমে লড়েছেন। যুদ্ধশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরে পচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর কিছুটা হতাশ হয়ে জীবিকার টানে ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানীতে পাড়ি জমান তিনি। সেখানেই তাঁর ক্যাটারিং ব্যবসায় হাতেখড়ি। ১৯৮৪ সাল থেকে জার্মানির হামবুর্গে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করে প্রচুর অর্থকড়ির মালিক হন।
জার্মান যুবতী গেসাকে বিয়ে করেন ১৯৮৪ সালেই। ৩৫ বছরের বিবাহিত জীবন তাঁদের। ২০০২ সালে এই দম্পতি স্পেনের ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী আলিকানতে প্রদেশের বিগাস্ত্রো এলাকায় দশ বিঘা জমিসহ একটি খামারবাড়ী কিনে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ছাগল-মুরগী আর কুকুর পোষেন।
বিদেশ বিভুঁইয়ে থিতু হলেও দেশকে আর দেশের মানুষকে এক মুহুর্তের জন্যও ভোলেননি বীর এই মুক্তিযোদ্ধা!
আর্থিক প্রণোদনা পেয়ে অভিভূত শিশু নাইমের পরিবার। ওর মা নাজমা বেগম জানান, ছেলে নাইমের কীর্তিতে তিনি গর্বিত, আপ্লুত! প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধার উদার এই অনুদান প্রমাণ করেছে যে বাংলাদেশের বহু মানুষের মধ্যে এখনো উদারতা আছে, মানবতা আছে, এই পুরষ্কার প্রমাণ করে দিয়েছে ভালো কাজের স্বীকৃতি দেয়ার মতো মহৎপ্রাণ মানুষেরা এখনো ফুরিয়ে যাননি!
-এসএম