অর্থনীতিঃ
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত লবণাক্ততা, মরুকরণ, জলোচ্ছাস, সাইক্লোনের পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা ও তামাক চাষের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা রোধে জাতীয় বাজেটে বিশেষভাবে বরাদ্দ না করা হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশেষত খুলনা, যশোর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া ও নড়াইল জেলায় অদূরভবিষ্যতে মানবিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
জাতীয় বাজেটে বিশাল একটি জনগোষ্ঠীর ভোগান্তি ও অনুন্নয়নের ধারা জিইয়ে রেখে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কখনোই টেকসই করা সম্ভব না।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির “বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২২-২৩ প্রস্তুতি আলোচনা: খুলনা অঞ্চলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়” শীর্ষক জুম মাধ্যমে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল আয়োজনে আজ শুক্রবার (৪ মার্চ, ২০২১) বক্তারা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের সভাপতিত্বে বাজেট প্রণয়নবিষয়ক এই মতবিনিময় সভায় স্থানীয় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ, আইনজ্ঞ, কৃষকনেতা, মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ, উন্নয়ন ও সাংস্কৃৃতিক কর্মী, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিক প্রতিনিধি আঞ্চলিক সমস্যা ও সম্ভাবনার আলোকে জাতীয় বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য তাদের আকাক্সক্ষার কথা তুলে ধরেন।
সভায় অধ্যাপক আবুল বারকাত বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন ‘সংবিধান’-এর মৌলিক চেতনার অধিকাংশই এখন আর ধারণ করে না।
সে অর্থে সরকারের ঘোষিত জাতীয় বাজেট অনেকাংশেই অসাংবিধানিক। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ‘বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা’র সংস্কৃতি প্রকৃত অর্থে সংবিধানকে শ্রদ্ধা ও মান্য করার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের পথরেখা।
তিনি বলেন, “আমাদের সংবিধানে আঞ্চলিক উন্নয়ন সমতা নিশ্চিতকরণের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও তা মানা হয় না।
অথচ সুষম আঞ্চলিক উন্নয়ন যেকোনো দেশের টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত।”
অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোঃ আইনুল ইসলাম বলেন, জাতীয় বাজেট বরাদ্দে আঞ্চলিক বৈষম্যের চিত্রের বিপরীতে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট অনেক বেশি জনবান্ধব ও বৈষম্যহীন।
খুলনার সরকারি ফুলতলা মহিলা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জনাব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দেশে দারিদ্র্য হ্রাস পেলেও আঞ্চলিকপর্যায়ে দারিদ্র্য নিরসনের গতি সব অঞ্চলে সমান নয়, যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা যশোর-খুলনা-সাতক্ষীরার সংযোগস্থলের ভবদহ অঞ্চলসহ ছোট-বড় ৫২টি বিল, ১২০টি গ্রাম এবং কেশবপুর, মনিরামপুর, অভয়নগর উপজেলাসহ অন্যান্য উপজেলায় দীর্ঘদিনের ভয়াবহ জলাবদ্ধতা নিরসনে টিআরএম পদ্ধতি বাস্তবায়নসহ স্থানীয় নদ-নদী, খাল-বিল খনন ও সংস্কার, বন্ধ পাটকল চালু, তামাক চাষ বন্ধ করা, কৃষক বীমা চালু করা, রেলযোগাযোগ নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা, পদ্মা সেতু ও মোংলা-পায়রা-ভোমরা-বেনাপোল-নোওয়াপাড়া বন্দর নিয়ে সমন্বিত কর্মসূচি, শিল্পোন্নয়নের জন্য গ্যাস সরবারাহ, সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটন শিল্প, উপক‚লজুড়ে মিঠাপানির জলের প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম জলাধার নির্মাণ, লবণসহিঞ্চু কৃষি ফসলের জাত উদ্ভাবন করাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দাবি করেন।
তাঁরা বলেন, ব্যাপক সম্ভাবনা ও সুযোগ থাকা সত্তে¡য় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর প্রতি স্বাধীনতাপরবর্তী সব সরকারের অবহেলা দুর্ভাগ্যজনক।
মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভা-সভাপতি ড. জামালউদ্দিন আহমেদ, সহসম্পাদক শেখ আলী আহমেদ টুটুল ছাড়াও ড. শেখ বাহারুল আলম, অধ্যাপক সাব্বির হোসেন ও সুকুমার ঘোষ, অ্যাড. কুদরত-ই-খুদা ও আবু বক্কর সিদ্দিক, রবীন্দ্রনাথ দেবনাথ, সাইফুল ইসলাম সাইফ, ইকবাল কবীর জাহিদ, হাফিজুর রহমান, খলিলুর রহমান, গৌরাঙ্গ প্রসাদ রায়, রনজিৎ কুমার বাওয়ালী, মাহফুজুর রহমান, এনামুল হক বাবুল, শাহ্জালাল হোসনে, কৃঞ্চপদ মুন্ডা, অসীত কুমার মুন্ডা, মেরিনা যুথি, রিজিয়া পারভীন, মোঃ শাহীনুল আলম, মোঃ আব্দুর রশিদসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই সংবাদটি আপনার বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক/ইলেকট্রনিক মাধ্যম/নিউ মিডিয়ায় প্রচার করে শোভন-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির নিরলস প্রয়াসকে বেগবান করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
-শিশির