কৃষি সংবাদঃ
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। কৃষি প্রধান দেশ হলেও কৃষকরাই এদেশে সবচেয়ে অবহেলিত। বর্তমান বাজার ব্যবস্থায় মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাবের কারণে কৃষকরা খুবই নিম্ন মূল্যে পণ্য বিক্রি করেন।

অথচ ভোক্তারা পণ্যটি কয়েকগুণ বেশি দামে খুচরা বাজারে ক্রয় করে। কয়েকটি হাত ঘোরার ফলে অনেকটা সময় ব্যয় হয়। এ সময়ে পণ্য তাজা রাখতে গিয়ে প্রচুর রাসায়সিক ব্যবহার হয়, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

ভোক্তার জন্য নিরাপদ খাদ্য ও কৃষকের জন্য পণ্যের সঠিক মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিতে কৃষকের বাজার একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ।

আজ ৭ অক্টোবর ২০২২ সকাল ৮.০০টায় নেদারল্যান্ডস সরকারের সহায়তায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউ উবিবি) ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩৯ নং ওয়ার্ডে টিকাটুলিতে কৃষকের বাজারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন।

এলাকাবাসীর জন্য স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ খাদ্যের যোগান দিতে প্রতি শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সাভারের তেুঁতলঝোড়া থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক যাচাইকৃত ১০ জন নিরাপদ চাষী তাদের উৎপাদিত সবজি এবং ফলমূল এ বাজারে বিক্রি করবেন।

কৃষকের বাজারটি উদ্বোধন করেন আয়োজনের প্রধান অতিথি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জনাব রোকন উদ্দিন আহমেদ।

ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমানের সঞ্চালনায় আয়োজনে বক্তব্য রাখেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-৫ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জয়, সাভার উপজেলার উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন ভূইয়া, পেদ্রো আন্দ্রেস গার্জন ডেলভো, ফুড সিস্টেম পলিসি ইকনোমিস্ট, ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রজেক্ট, এফএও বাংলাদেশ, গাউস পিয়ারী, পরিচালক, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রোকন উদ্দিন আহমেদ বলেন, গত ৫০ বছরে দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়লেও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। উৎপাদন থেকে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে রাসায়নিক মিশানো হয়। কৃষকের বাজারে সরাসরি কৃষক তার উৎপাদিত নিরাপদ খাদ্য ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেবেন।

কার্যক্রমটি আরো বিস্তৃত আকারে গ্রহণ করার মাধ্যমে এলাকাবাসীর নিরাপদ খাদ্যের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। বাজারটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সকল সহযোগিতা কাউন্সিলর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হবে।

ডিএসসিসি-র অঞ্চল-৫ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জয় বলেন, যেকোন বাজার আয়োজিত হলে বর্জ্য তৈরি হয়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিক না হলে এলাকাবাসী ও পথচারীগণ অসুবিধার শিকার হবেন। কার্যক্রমটি টেকসই করার লক্ষ্যে কৃষকের বাজারগুলোকে সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান বাজারেন সাথে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।

সাভার উপজেলার উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বছরব্যাপী নিরাপদ সবজি উৎপাদন নিশ্চিতের লক্ষ্যে চাষীদের উত্তম কৃষি চর্চা, জৈব কৃষিতে প্রশিক্ষণ ও সহায়ক উপকরণ প্রদানের পাশাপাশি নিয়মিত মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কার্যক্রম মনিটরিং করে থাকে।

কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের লাভ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এখনো পিছিয়ে আছে। কৃষকের বাজারের মত কার্যক্রমের মাধ্যমে পণ্যের লাভ পেলে তারা নিরাপদ চাষে আরো আগ্রহী হবে। কার্যক্রমটি টেকসই করার লক্ষ্যে কৃষকের বাজারগুলোকে সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান বাজারেন সাথে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রজেক্টের ফুড সিস্টেম পলিসি ইকনোমিস্ট পেদ্রো আন্দ্রেস গার্জন ডেলভো বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বিশ্বব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কৃষকের বাজার কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হলো ভোক্তাদের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা এবং কৃষকদের জীবনমান উন্নয়ন।

ঢাকা মহানগরে ১৬টি কৃষকের বাজার স্থাপিত হচ্ছে। টিকাটুলির কৃষকের বাজারে ১০ জন কৃষক তাদের উৎপাদিত নিরাপদ সবজি বিক্রি করবেন। বাজারটি এলাকাবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য রাখতে হলে নিরাপদ খাদ্যের সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করা আবশ্যক।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের কারণে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগব্যাধি বাসা বাঁধে। নিরাপদ খাদ্য গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি।

বর্তমানে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, বীজ, জৈবসারসহ বিভিন্ন সহায়ক উপকরণ প্রদান করা হচ্ছে। বিপণন ও ব্যবসার ক্ষেত্রে কৃষকদের দুর্বলতা রয়েছে।

এক্ষেত্রে কৃষকের বাজারের মত কার্যক্রম, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হলে কৃষকগণ উপকৃত হবেন।

-শিশির

FacebookTwitter

About Bangla Daily

একটি পরিপূর্ণ বাংলা অনলাইন পত্রিকা। মাতৃভাষার দেশ বাংলাদেশ থেকে সরাসরি সস্প্রচারিত হচ্ছে।

View all posts by Bangla Daily