অনলাইনঃ
রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরাতেে গত দুই বছর যাবত গবেষণা করে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির কাছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অবশেষে সমীক্ষা রিপোর্ট পেশ করেছে।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে বর্তমানের ২৯১ রুটের পরিবর্তে ৪২টি রুটে ২২টি কোম্পানির মাধ্যমে গণপরিবহন পরিচালনার সুপারিশ করা হয়েছে।
এছাড়া ৪২ রুটে ছয় রঙের বাস চলাচল করার বিষয়টিও রিপোর্টে উঠে এসেছে। এতে ঢাকার বাহিরের বাস রাজধানীতে প্রবেশের ক্ষেত্রে থাকবে নিষেধাজ্ঞা। এজন্য রাজধানীর আশপাশে গড়ে তোলা হবে ১০টি টার্মিনাল।
এ বিষয়ে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির বর্তমান আহ্বায়ক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির কাছে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে, সেই রিপোর্ট আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করেছি। বর্তমানে ঢাকা শহরে ২৯১টি রুটে ২ হাজার ৫০০ মালিকের বাস চলাচল করছে। সেগুলোকে সন্নিবেশ করে ৪২টি রুট ও ২২টি কোম্পানি করার প্রাথমিক প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে বর্তমান বাসমালিকেরা কোম্পানিগুলোর শেয়ারহোল্ডার হবেন।’
তিনি আরো বলেন, টার্মিনালগুলোতে বাসগুলোর সংকুলান হয় না, ফলে বাসগুলোকে বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার ওপর রাখা হয়। এ কারণে বড় ধরনের যানজটের সৃষ্টি হয়। ডিটিসিএ কর্তৃক নিযুক্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আন্তঃজেলা বাসটার্মিনাল স্থাপনের জন্য যে জায়গা প্রস্তাব করেছে, তার সম্পূর্ণ একটি সমীক্ষা আগামী মার্চ মাসের মধ্যে শেষ হবে। তারপর আমরা পরবর্তী ধাপে আমাদের কার্যক্রম নিয়ে যেতে পারব।’ আগামী বছরের মধ্যেই আশা করা যাচ্ছে বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রম দৃশ্যমান হবে।’
পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সুপারিশে বর্তমানে চলাচলকারী ২ হাজার ৫০০ কোম্পানির পরিবর্তে ২২টি কোম্পানির মাধ্যমে ৯ হাজার ২৭টি বাস পরিচালিত হওয়ার কথা বলা হয়। এর মধ্যে ৬ হাজার ৪৫৭টি বাস ও দুই হাজার ২৭০টি মিনিবাস থাকবে। ৩ হাজার ৭৬১টি সম্পূর্ণ নতুন বাস রাখা হবে। এসব কোম্পানিতে গণপরিবহন মালিকরা শেয়ারহোল্ডার হিসেবে থাকবেন।
সঠিকভাবে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিটি কোম্পানিতে ৫০০টিরও কম গণপরিবহন রাখা হবে। কোম্পানিগুলোকে আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের জন্য কর্তৃপক্ষ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। ৫ বছরের বেশি পুরোনো বাস রাখা হবে না। এছাড়া বাস রুট রেশনালাইজেশনের জন্য জেলা পর্যায়ের কোনো বাস রাজধানীতে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এজন্য রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে পর্যাপ্ত টার্মিনাল ও নিরাপদ পরিবহনব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
রাজধানীর তিনটি টার্মিনালে ১ হাজার ৫০০ বাসের ধারণক্ষমতা থাকলেও তাতে প্রতিদিন ৯ হাজার ২৯৮টি বাস রাখা হয়। বাকি বাসগুলো নগরীর বিভিন্ন সড়কেই পার্কিং করা হয়। এজন্য যানজটের সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় নতুন করে ১০টি টার্মিনালের প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে কেরানীগঞ্জের বাঘৈর, হেমায়েতপুর, উত্তরার বিরুলিয়া, গাজীপুর, নবীনগর-চন্দ্রা রোডের বাইপাইল, কাঞ্চন এলাকা, কাঁচপুর উত্তর, কাঁচপুর দক্ষিণ মদন, আটিবাজারের ভাওয়াল এবং ভুলতা। প্রস্তাবে ৪২ রুটকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে, আরবান, সাব-আরবান ও ঢাকা চাকা ক্লাস্টার।
আরবান ক্লাস্টার (গোলাপি) : এ রঙের ৮৮৩টি বাস এক থেকে চার নম্বর রুটে চলাচল করবে। ২৩টি রুটকে ভেঙে এই চারটি রুট করা হয়েছে। নীল : এই রঙের ১ হাজার ৪৩৩টি বাস পাঁচ থেকে আট নম্বর রুটে চলাচল করবে। পুরোনো ২১টি রুট ভেঙে এই চারটি রুট করা হয়েছে। মেরুন : এ রঙের ১ হাজার ১০৮টি বাস ৯ থেকে ১৩ নম্বর রুটে চলবে। পুরোনো ৩৫টি রুট ভেঙে এই পাঁচটি রুট করা হয়েছে। কমলা : এ রঙের ১ হাজার ১২২টি বাস ১৪ থেকে ২০ নম্বর রুটে চলবে। পুরোনো ৪৭টি রুট ভেঙে সাতটি রুট করা হয়েছে। সবুজ : এ রঙের ১ হাজার ৪৩৩টি বাস ২১ থেকে ২৮ নম্বর রুটে চলবে। পুরোনো ৫৪টি রুট ভেঙে এই আটটি রুট করা হয়েছে। বেগুনি : এ রঙের ১ হাজার ৮৯টি বাস ২৯ থেকে ৩৪ নম্বর রুটে চলবে। পুরোনো ৩৩টি রুট ভেঙে এই ছয়টি রুট করা হয়েছে।
সাব আরবান ক্লাস্টার : নর্থ : এই অংশের ১ হাজার ৮৯টি বাস ৩৫-৩৭ নম্বর রুটে চলবে। পুরোনো ৪০টি রুট ভেঙে এই তিনটি রুট করা হয়েছে। নর্থ-ওয়েস্ট : এই অংশে ৯৯২টি বাস ৩৮ থেকে ৪০ নম্বর রুটে চলাচল করবে। পুরোনো ৩০টি রুট ভেঙে এই তিনটি রুট করা হয়েছে। সাউথ : এই পরিবহনটি ৪১ ও ৪২ নম্বর রুটে চলবে। এতে পরিবহনের সংখ্যা থাকবে ৯৯টি। পুরোনো পাঁচটি রুট ভেঙে এই দুটি রুট করা হয়েছে। ঢাকা চাকা ক্লাস্টার : এতে ৫২টি বাস চলবে। রুট হবে নতুন বাজার-পুলিশ প্লাজা। এই বাসগুলো এখন এই রুটেই চলছে।
-ডিকে