বিনোদনঃ
সে বছর কোরবানির ঈদের সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বিরুনী হলের বেশিরভাগ ছাত্রই বাড়িতে চলে গেছেন। পুরো জাহাঙ্গীরনগর ফাঁকা বলতে গেলে। ঈদের পরেই পরীক্ষা শুরু হবে বলে অল্প কয়েকজন ছাত্র হলে থেকে গেছেন।
হলের ছাত্ররা দলবেঁধে গেলেন হলের প্রভোস্ট, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কলিমুল্লাহ স্যারের বাসায়। তাঁদের দলনেতা আবার হুমায়ুন ফরীদি।
হরতাল দেখেই জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছো? কোন বিশেষ দরকার কি?
ফরীদি বললেন- ‘জ্বী স্যার।
স্যার আমরা কয়েকজন ছাত্র হলে আছি, পরীক্ষার কারনে বাড়ি যেতে পারিনি। দেখছেনই তো কোরবানির ঈদ স্যার, আমাদের জন্য যদি একটা গরুর ব্যবস্থা করে দিতেন কোরবান উপলক্ষে। আমরা হলে ছাত্ররা খাবো!’
স্যার জিজ্ঞেস করলেন- তোমরা কয়জন?
ফরীদি বললেন, আমরা ২০- ২২ জনের মত আছি স্যার- বললেন ফরীদি।
স্যার জবাবে বললেন “তাহলে তোমাদের গরু লাগবে না, এক কাজ করো, আমি একটা খাসির ব্যবস্থা করছি তোমাদের জন্য। খাসির টাকাটা নিয়ে যেও।
ছাত্ররা ব্যর্থ মনোরথে স্যারের বাসা থেকে বেরিয়ে আসতেই চোখ পড়লো স্যারের প্রভোস্ট বাংলোর আঙ্গিনায় রাখা কোরবানির জন্য কিনে এনে আনা কালো গরুটার উপর। চোখের ইশারায় সবাই জেনে নিলো কি করতে হবে।
সেদিন গভীর রাতে স্যারের রু চুরি করে নিয়ে আসলেন ফরীদির দল, সকালে সাভার থেকে কসাই নিয়ে আসলেন একজন। ৬০ কেজির মতো মাংস হলো, ফরীদি বললেন ১৫ কেজি রান্না হবে বাকিটা স্যারের বাসায় যাবে।
আর অন্যদিকে কলিমুল্লাহ স্যার হন্যে হয়ে গরু খুঁজছেন, এক রাতের মধ্যেই গোটা গরু হাওয়া! কোরবানি দিবেন কিভাবে।
নিতান্তই বখধ্য হয়ে ঈদের দিন সকালে স্যার নয়ারহাট বাজার থেকে গরু কিনে আনলেন কোরবানির জন্য।
স্যারের গরু চুরি গেছে একথা প্রচার হয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক, কর্মচারীদের বাসায়, বাকি হলগুলোর ছাত্ররাও জেনে গেছে ততোক্ষণে।
অন্যদিকে , হলের ছাত্রদের কাছে স্যার খবর পাঠালেন আমার বাসায় সেমাই খেয়ে যাও আপাতত। দুপুরে মাংস খেতে পারবে। গরু চুরি গেছে।
সেমাই খেতে যাওয়া ছাত্ররা অবশ্য খালি হাতে গেলেন না, বাকি ৪৫ কেজি মাংস নিয়ে গেলেন।
মাংস দেখে স্যার বললেন এগুলো কিসের মাংস, এতো মাংস এলো কোথা থেকে?
ফরীদি মুচকি হেসে বললেন, আমরা স্যার একটা গরু কিনেছিলাম, আমাদের খাওয়াদাওয়া শেষ, তাই ভাবলাম বাকিটা আপনার জন্য নিয়ে আসি।
স্যার বুঝে গেলেন কারা তাঁর গরু চুরি করেছে। বিরহ বদনে বললেন, ঠিক আছে। এবার খেতে বসো। কাজটা যে তোমাদের কর্ম তা এখনই বুঝলাম।
এরপর কতো ঈদ চলে গেল, আবার এলো কিন্তু সেই দুরন্ত ফরীদি তো আর এলেন না। ফরীদি থাকবেন আমাদের মনের মনিকোঠায়।
-ফেসবুক থেকে