বেশ কয়েকটি পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা আছে রাজধানীতে, তার একটি মোহাম্মদপুর এলাকা। বৃহত্তর মোহাম্মদপুর ও শেরেবাংলা নগরের আংশিক এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৩ আসন।
গত এক দশকে ওই এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নের কথা বলা হলেও ভোটারদের মধ্যে অনেক ক্ষোভ রয়ে গেছে। রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা। অল্পস্বল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা, পরিচ্ছন্নতার অভাবে সামান্য বৃষ্টিতেই কাদা। মাদকের ভয়াবহতা- এ রকম অনেক অভিযোগ এলাকাবাসীর। এ আসনেই এবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম। আর মহাজোট থেকে প্রার্থী হয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান।
গতকাল নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা গেল, চারদিকে সাদেক খানের পোস্টারে ভরা। আবদুস সালামের পোস্টারের ছিটেফোঁটাও নেই। প্রতিদিন নির্বাচনী প্রচার চালাতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন সাদেক খান ও তার কর্মীবাহিনী। আবদুস সালাম মাঠেই নামতে পারছেন না। কর্মীবাহিনীরও দেখা নেই। নির্বাচনী এলাকা ঘুরে আরেকজন প্রার্থীর কিছু পোস্টার চোখে পড়েছে- কাস্তে প্রতীকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির আহসান হাবিবের পোস্টার।
এলাকাবাসী জানান, ক’দিন আগে ধানের শীষের প্রার্থী আবদুস সালাম নির্বাচনে সমতল মাঠ না থাকার অভিযোগ দিতে যান নির্বাচন কমিশন ভবনে। তার সঙ্গে ছিলেন মোহাম্মদপুর থানা বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। অভিযোগ দিয়ে ফেরার পথেই আগারগাঁও থেকে মোহাম্মদপুর থানা বিএনপির সভাপতি ওসমান গনিকে সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করে তার পরিবার ও বিএনপি। এর পর থেকে ওসমান গনির কোনো সন্ধান মেলেনি। অবশ্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিষয়টি অস্বীকার করেছে। এর পর থেকে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও আর মাঠে নেই ধানের শীষের প্রচারে। এ জন্য বাহ্যিকভাবে অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাদেক খান। তিনি প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থানে জনসংযোগ করছেন। পথসভা করছেন। দলীয় নেতাকর্মীরাও সরব। তবে এ আসনে দু’বারের এমপি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক মনোনয়ন না পাওয়ায় তার অনুসারীদের খুব একটা তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
বাবর রোডের বাসিন্দা অভিজিৎ পোদ্দার জানান, ‘এ আসনে আওয়ামী লীগের অবস্থা বাইরে থেকে অনেকটাই ভালো বলে মনে হচ্ছে; কিন্তু ক’জন নেতার কারণে যন্ত্রণায় পড়েছেন এলাকায়। ওইসব উঠতি নেতা এলাকায় অনেক বেপরোয়া। এ জন্য তাদের ওপর এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ। এ ছাড়া এখানে বিএনপিরও একটি বড় ভোটব্যাংক রয়েছে।’
অবশ্য মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের দোকানীরা বলছেন, ‘নানক সাহেব প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই এলাকার চেহারা বদলাতে শুরু করে। আদাবর এলাকার চেহারাও এখন অনেক পাল্টে গেছে। এখন মোহাম্মদপুর এলাকাকে উন্নত এলাকা বলে মনে হয়। যদিও কল্যাণপুর খালের চেহারা পাল্টায়নি। তার পরও এলাকাবাসী উন্নয়নের কথা চিন্তা করে ভোট দিলে আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবে।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবদুস সালাম মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা নন। এ আসনে প্রার্থী হওয়ার আশা নিয়ে বছর খানেক ধরে মোহাম্মদপুর এলাকায় যোগাযোগ রাখছেন; কিন্তু এলাকাবাসীর সঙ্গে তার অত যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাদেক খান মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা। দীর্ঘদিন কমিশনার থাকার সুবাদে এলাকাবাসী চেনেন তাকে। এ জন্যই জাহাঙ্গীর কবির নানকের মতো দু’বারের এমপিকে বাদ দিয়ে এবার তাকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এলাকায় তার শক্ত ভিত্তিও রয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মোহাম্মদপুর থানার ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩ ও ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড, আদাবর থানার ২৯ নম্বর ওয়ার্ড এবং শেরেবাংলা নগর থানার ২৮ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে এ আসন।
এ ছাড়া এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবেক এমপি মকবুল হোসেনও মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তিনিও মনোনয়ন পাননি। এ কারণে মকবুল হোসেনের অনুসারীরাও সাদেক খানের পক্ষে মাঠ পর্যায়ে সরব কম। সাদেক খান বলেন, ‘মানুষের জন্যই রাজনীতি করি আমি। তিন দফায় দীর্ঘ ৩৫ বছর কমিশনার ও এক দফায় ভারপ্রাপ্ত মেয়র থাকাকালে এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছি। এলাকাবাসী ও নেতাকর্মীদের সমর্থন আমার প্রতি রয়েছে। নির্বাচনে তাই আমিই জয়ী হব বলে আমার বিশ্বাস।’
অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালামকে সবাই সজ্জন হিসেবে জানেন। তিনি অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের ডেপুটি মেয়র হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেইসঙ্গে ঢাকা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পরে সদস্য সচিব হিসেবেও দীর্ঘ কয়েক বছর দায়িত্বে ছিলেন। এসব দায়িত্ব পালনের কারণে তিনি অনেকটাই সুপরিচিত। কর্মীবান্ধব হিসেবেও তার খ্যাতি রয়েছে। তাকে নিয়েও কোনো নেতিবাচক আলোচনা নেই। এদিক থেকে তিনি অনেকটাই ভালো অবস্থানে আছেন। এ ছাড়া দলীয় কোনো গ্রুপিংও তাকে নিয়ে নেই। আবদুস সালাম বলেন, ‘এ আসনে নির্বাচন করার জন্য অনেক আগে থেকেই আমি মোহাম্মদপুর এলাকায় বাসা ও অফিস করেছি। কিন্তু সরকারের অরাজনৈতিক কার্যকলাপের কারণে কোনো নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারছি না।
-ডিকে