মিলি সুলতানা, কুইন্স, নিউইয়র্ক থেকেঃ
আমি যখন প্রথম মা হই খুবই হালকা পাতলা ছিলাম। আমার গাইনি বলতেন, মিলি খাওয়া যে আরও দাওয়া বাড়াতে হবে। নইলে বাচ্চা পুষ্টি পাবে কিভাবে?  আপা বাচ্চা কি জন্মের আগে পুষ্টি পায়? — আমার বেকুবসুলভ মন্তব্যে ডাক্তার নাজমা আপা হেসে কুটি কুটি। টেবিলে রাখা প্যাডে ( প্রেসক্রিপশন বুক) কপাল ঠেকিয়ে কিছুক্ষণ হেড ডাউন করে রাখলেন। আমি বুঝতে পারলাম না সামান্য এই কথায় উনি এতো হাসির উপাদান কিভাবে পেলেন? পুনরায় বললাম, আপা বাচ্চা ডেলিভারির আগে আসলেই কি পুষ্টি পায়? আমি তো ভাবতাম জন্মের পর পুষ্টির বিষয় আসবে। নাজমা আপা সিরিয়াস মুড নিলেন, হাসি মুহূর্তে ভ্যানিশ তার চেহারা থেকে। বললেন, তুমি খুব বেশি সিম্পল। তোমার মত এমন ইজি গোয়িং মেয়ে আমি কম দেখেছি মিলি। ডাক্তার আপা আমাকে কিছু প্রিন্ট করা নোট পড়তে দিলেন। প্রেগন্যান্সি কি? প্রেগন্যান্সির আগে পরে কি করতে হয় বিশদভাবে লেখা প্রতিবেদন। আমি পড়লাম। অনেক নতুন নতুন ধারণা অর্জন করলাম, যেগুলো আমার জানাই ছিলো না। অথচ তখন আমি প্রেগন্যান্ট। প্রেগন্যান্সিতে অবুঝ নাদান থাকাটা খুবই বিপদজনক। বুঝতে হয় অনেক কিছু। 
প্রেগন্যান্সির সময় আমার ওজন ছিলো মাত্র ৪৬ কেজি। যাইহোক আমার সিজারিয়ান বেবী হল। আমার মা বোনেরা আমার এবং বাচ্চার খুব যত্ন নিতে লাগলো। বাচ্চা খুবই ফুটফুটে আর সুস্থ। মনে মনে ভাবতাম, আমার মত হ্যাংলা পাতলা মেয়েটি কবে গুডুশ গাটুশ মোটু হবে? কেন জানিনা আমার ইচ্ছা করতো মোটা হতে। ছোটবোনের বান্ধবীদের মুখে প্রায় একটা কথা লেগেই থাকতো– “ও আল্লাহ মিলি আপাকে একটুও বাচ্চার মা মনে হচ্ছেনা। কিভাবে??” আমার শরীরের কোথাও বাড়তি চর্বি ছিলো না। আজ অবশ্য সেই হ্যাংলা পাতলা ফিগারটা ফিরে পেতে ইচ্ছা করে। আমার ছেলেটা একটু একটু করে বড় হতে লাগলো। নাহ বাড়তি চর্বি ফিগারের ত্রিসীমানাতেও নেই। কারণ তখনও আমি চৌত্রিশ  সাইজের কামিজ পরতাম। মাঝে মাঝে সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে গেলে খানিকটা বিব্রত হতাম যখন কেউ বলতো, আরে বাচ্চার মা মনেই হচ্ছেনা। মনে হচ্ছে আনম্যারেড মেয়ে। আমি খুবই বিরক্ত হতাম এসব কথায়। বাচ্চার মা মনে হচ্ছেনা মানে কি? কি কি করলে মনে হবে বাচ্চার মা? যত্তসব। আমার খুব চাইতাম সবাই আমাকে দেখেই যেন ভাবে আমি একজন মা। সাংবাদিক বন্ধু বান্ধবরা রসিকতা করে বলতো, “কুমারী মা”! এসব কেমন রসিকতা? আমার বিয়ে হয়েছে। আমি মা হয়েছি, তবুও বলে যতসব ঢংয়ের কথা…….। কন্যা পেটে আসার আগে ধীরে ধীরে মোটু হতে লাগলাম। জামার সাইজ মাশাআল্লাহ করে বড় হতে  লাগলো।  
ছেলের শিশুকালে আমার চুল এখনকার মত ছোট ছিলো না। নানান কিসিমের ক্লিপ রাবার ব্যান্ড দিয়ে চুল বাঁধতাম। প্রায়ই শাড়ি পরতাম। ছেলে এখন তরুণ। একটা কথা তার মুখে খুব বেশি শুনি। তা হলো আমার চুল। তার মতে, যখন চুল বড় ছিলো তখন নাকি খুব বেশি বিউটিফুল লাগতো। চুলে ক্লিপ রাবার ব্যান্ড দেখলে তার মনে নাকি খুব আনন্দ হতো। আগে আমাকে সুইট এন্ড লাভিং আম্মু মনে হতো তার। এখন নাকি মনে হয় স্মার্ট এন্ড কনশাস (Conscious) আম্মু। এই দুইটার মধ্যে পার্থক্য নিরূপনে আমি ব্যর্থ হলাম।
শিশির
FacebookTwitter

About Bangla Daily

একটি পরিপূর্ণ বাংলা অনলাইন পত্রিকা। মাতৃভাষার দেশ বাংলাদেশ থেকে সরাসরি সস্প্রচারিত হচ্ছে।

View all posts by Bangla Daily