ডেস্ক রিপোর্টঃ
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিশ্ব। স্থবির হয়ে পড়েছে অর্থনীতি, বদলে গেছে মানুষের দৈনন্দিন জীবন।
শুধু তাই নয়, করোনা মানব সভ্যতায় আমূল পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। বিশেষ করে পাবলিক প্লেসে। সেখানে আমরা আগে যে সব জিনিস ব্যবহার করে অভ্যস্ত ছিলাম। হয়তো তা আর থাকবে না।
করোনাভাইরাসের আগে পাবলিক প্লেসে অনেক জিনিস ব্যবহারে আমরা অভ্যস্ত ছিলাম। লকডাউন একবার উঠে গেলেই করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে উঠে যাবে সেগুলোও। এমন খবর প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম এই সময়।
এমনটাই জানিয়েছে দ্য ইউনিভার্সিটি অফ টলেডোর ডিপার্টমেন্ট অফ সিভিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার। বিভাগটির অধ্যাপক ডেফনে আপুল বলেন, ‘ডিজিটাল পরিকাঠামো এখন আমাদের প্রত্যেকের জীবনের অঙ্গ। এই মহামারী যাওয়ার পর আরো নিখুঁত হতে যাচ্ছে এই পরিকাঠামো।’
একনজরে দেখে নেয়া যাক লকডাউন পরবর্তী পরিবর্তন গুলো…….
লিফটের বোতাম :
দরজার হাতল বা ফ্রিজ-আলমারির হাত থেকেও করোনার সংক্রমণ ঘটতে পারে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এবার থেকে হাসপাতাল বা অফিসের বিল্ডিংয়ের দরজায় আর হাতল থাকবে না। আর যদি হাতল থাকেও, তা ব্যবহার করা যাবে না। তাহলে কীভাবে খুলবে দরজা?
বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা, মোশন অপারেটড দরজা বা গতি নির্ভর দরজাই আপাতত ভবিষ্যত। অর্থাৎ যে দরজা হাতের কনুই দিয়ে ঠেললেই খুলে যাবে। যদিও অনেকেই মনে করছেন, অফিস বা হাসপাতালগুলো এরপর থেকে স্বয়ংক্রিয় দরজার ব্যবস্থা রাখতে পারে।
ক্যাশ রেজিস্টার :
দোকানে বা শপিং মলে কেনাকাটি করতে গিয়ে কার্ডের থেকেও বেশি পরিমাণে নগদ টাকাই দিয়ে থাকেন বহু মানুষ। আর মানুষের হাত থেকে নগদ টাকা লেনদেন করেতে গিয়েও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাই শপিং মলসহ অন্য স্থানগুলোতেও নগদ টাকা নেয়ার ব্যবস্থা চিরতরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ বিষয়ে গবেষক মাইকেল সাইরাকিউজ বলেন, ‘ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড এবং টাচ-ফ্রি ইলেকট্রনিক পেমেন্টের দিকেই যাবে সব সংস্থা।’
স্টাইলাস পেন :
নানা প্রয়োজনে আমাদের সই করতে হয়। অনলাইন অর্ডার, এমনকি কুরিয়ার এলেও স্বাক্ষর করতে হয়। আর সেই স্বাক্ষরের জন্য একটি বিশেষ কলম (Stylus Pens) ব্যবহার করা হয়। এই কলম বহু মানুষ ব্যবহার করে থাকেন। যা এই মুহূর্তে ব্যবহার করা অত্যন্ত ভয়ংকর। গবেষক সাইরাকিউজ বলেন, ‘এরপর থেকে এই স্টাইলাস পেনের ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাবে। আর সেই জায়গায় ব্যবহৃত হতে পারে ইলেকট্রনিক অথেনটিকেশন। ফেস অথবা ভয়েস শনাক্ত করার জন্য বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহৃত হতে পারে।’
সোয়াইপ কার্ড মেশিন :
নগদের থেকে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে সংক্রমণের ভয় থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকা যায়। কিন্তু সেই কার্ড সোয়াইপ করার মেশিন নিয়ে ঝুঁকি রয়েছে। আর্কিটেক্ট কলিন হায়েনজেন্টস বলেন, ‘একটা কার্ড সোয়াইপ করার মেশিনে সারাদিনে বহু মানুষ হাত দিচ্ছেন। তাই করোনা পরবর্তী সময়ে এই মেশিন আর ব্যবহৃত হবে না বলেই মনে হচ্ছে।’
এর বিকল্প হিসেবে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, কন্ট্যাক্টলেস কার্ড বা ট্যাপ-এনাবেলড কার্ড রিডারের ব্যবহারই বাড়বে। এই পদ্ধতিতে আপনার কার্ড একটি কোডিংয়ের মাধ্যমে ট্রানজাকশন সম্পন্ন করে।
ম্যানুয়াল সুইচ :
লাইট হোক বা ফ্যানের সুইচ অনেক মানুষ অসংখ্য বার ব্যবহার করে থাকেন। সেখানেও ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস থাকে। ২০১২ সালে আমেরিকান সোসাইটি ফর মাইক্রোবাইলোজির গবেষণায় দেখা গেছে, ৯টি হোটেল রুমের লাইটের সুইচে সবথেকে বেশি পরিমাণে ভাইরাস রয়েছে। আর্কিটেক্ট গাই গেইয়ার বলেন, ‘এই ঝুঁকি এড়াতে ম্যানুয়াল সুইচ বন্ধ করে দেয়াই উচিত। সেই জায়গায় ভয়েস বা গতিকে কাজে লাগিয়ে সুইচ অন করার চিন্তাভাবনা করতে হবে।’
এটিএম বোতাম :
ভবিষ্যতে ক্যাশলেস ট্রানজাকশনের দিকেই এগোচ্ছে গোটা পৃথিবী। কিন্তু জরুরি ভিত্তিতে আমাদের নগদ টাকার প্রয়োজন পড়তেই পারে। আর সে ক্ষেত্রে আমাদের ভরসা এটিএম। তবে এই এটিএমের বোতামের মাধ্যমেও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কারণ প্রতিনিয়ত সেই বোতাম চাপছেন অনেক মানুষ। আর্কিটেক্ট গাই গেইয়ারও এই বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান। তিনি বলেন, ‘বোতাম প্রেস করে টাকা তোলার ব্যবস্থা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়া উচিত। সেই জায়গায় ভয়েস অ্যাক্টিভেটেড এটিএম আসবে। অর্থাৎ আপনার গলার স্বরের মাধ্যমেই টাকা তুলতে পারবেন আপনি।’
সেল্ফ সার্ভিস পেট্রল পাম্প :
বিদেশের বহু জায়গাতেই এমনকি ভারতেও বেশ কিছু জায়গায় সেল্ফ সার্ভিস পেট্রল পাম্পের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, আবার সেই আগের মতোই ফুল সার্ভিস পেট্রল বা গ্যাস পাম্পের ব্যবস্থা ফিরে আসবে। অর্থাৎ পেট্রল পাম্পের কোনো কর্মীই আপনার গাড়িতে পেট্রল ভরে দেবেন। নিউজার্সিতে ইতোমধ্যেই পুরনো সেই ব্যবস্থা ফিরেও এসেছে। আর্কিটেক্ট গাই গেইয়ারও একই কথাই বলছেন।
কফি মেশিন :
অফিসে বা অনেক জায়গাতেই কফি মেশিন থাকে। সেই মেশিনের বোতাম টিপলেই বেরিয়ে আসে কফি। কিন্তু এই করোনা পরিস্থিতিতে কফি মেশিন ব্যবহার করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ ওই মেশিন বহু মানুষ ব্যবহার করে থাকেন। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মানুষ আগে যেভাবে ঘরোয়া উপায়ে চা-কফি বাড়িতে বানাতো, সেভাবেই আবার চা-কফি বানানো হবে।
বোতাম টিপে সাবান জল :
অফিস, শপিং মল, নার্সিংহোমসহ বেশ কিছু জায়গায় আমরা বাথরুমে একটি বিশেষ বোতাম টিপলেই সাবান-পানি পেয়ে যাই। করোনা পবিস্থিতিতে যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ বহু নোংরা হাত ওই বোতামে চাপ দিয়ে সাবান নিচ্ছে। এর উপায় হিসেবে এমবিবিএস, এমপিএইচ, ক্লিনিকাল রিসার্চার এবং মেডিক্যাল অ্যাডভাইজার উর্বিশ কে প্যাটেল বলেন, ‘এবার সেন্সর এমবেডেড হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং লিকুইড সাবান সব জায়গায় চলে আসবে।’
-ডিকে