জাতীয় সম্পদঃ
বাংলাদেশ রেলওয়ের বহরে যুক্ত হতে যাচ্ছে আরও ৭০টি মিটার গেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন)। এটি বাংলাদেশ রেলওয়ের ইতিহাসে নতুন ইঞ্জিন ক্রয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রকল্প।
ইতোপূর্বে একসাথে এতগুলো ইঞ্জিন ক্রয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়নি কখনো। দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম কোম্পানি থেকে ২ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকায় উচ্চ গতিসম্পন্ন এসব মিটার গেজ ইঞ্জিন আমদানি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
ঋণ চুক্তির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়ার পর কাজ শুরু হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।
বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে মিটার গেজ ইঞ্জিন সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। পূর্বাঞ্চল রেলওয়েতে মোট ১৫০টি ইঞ্জিন রয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বিকল ইঞ্জিনের সংখ্যা ৪৫টি।
এসব ইঞ্জিনের মধ্যে ২৫টি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও পার্বতীপুর শপে (কারখানা) রয়েছে। অন্য ২০টি বিকল ইঞ্জিন শপে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম কোম্পানি থেকে উচ্চ গতির ক্ষমতা সম্পন্ন ১০টি মিটার গেজ ইঞ্জিন আমদানি করা হয়েছে।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ২৯৭ কোটি ৬৩ লাখ ৩০ হাজার ৫৬০ টাকা ব্যয়ে কেনা হয়েছে ইঞ্জিনগুলো।
এগুলোর ট্রায়াল রান শেষ হয়েছে। এখন রেলের বহরে যুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
এদিকে নতুন ৭০টি মিটার গেজ ইঞ্জিন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বহরে যুক্ত হলে পূর্বাঞ্চলে আর ইঞ্জিন সংকট থাকবে না বলে জানিয়েছেন রেল কর্মকর্তারা। উচ্চ গতির এসব ইঞ্জিন যুক্ত হলে রেল পরিবহনে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে বলেও জানান তারা।
এই ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের ৭০টি মিটার গেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ সংগ্রহ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী আহমেদ মাহবুব চৌধুরী জানান, দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম কোম্পানি সাথে চুক্তির প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঋণ চুক্তির অনুমোদন দিলেই ঋণদানকারী ব্যাংকগুলোর সাথে চুক্তি হয়ে যাবে। এই ধরনের বড় প্রকল্পের ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন প্রয়োজন হয়। এরপর লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি হবে। এই প্রকল্পের সব টাকাই বিদেশি প্রাইভেট ব্যাংকের। ২৮০ মিলিয়ন ডলারের (২ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা) প্রকল্প এটি।
ইঞ্জিন ক্রয়ের ক্ষেত্রে আমাদের লাগবে ২৪০ মিলিয়ন ডলার (২ হাজার ৩৪ কোটি টাকা)। এসব ইঞ্জিন আসার পর বাংলাদেশ রেলওয়েতে আর ইঞ্জিন সংকট থাকবে না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পূর্বাঞ্চলে রেলের ১৫০টি ইঞ্জিনের মধ্যে ১০৩টির মেয়াদ অতিক্রম হয়েছে অনেক আগেই। ইঞ্জিনের ইকোনমিক লাইফ ২০ বছর। ১০৩টি ইঞ্জিনের ওই সময় পেরিয়ে গেছে। ৪৭টি ইঞ্জিনের মেয়াদ ২০ বছরের কাছাকাছি।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন বিভাগ থেকে জানা গেছে, ডেমু ছাড়া অন্য সব ধরনের ট্রেন পরিচালনার জন্য প্রতিদিন গড়ে ১১১টি ইঞ্জিন প্রয়োজন। কিন্তু এর বিপরীতে যান্ত্রিক প্রকৌশল বিভাগ থেকে পরিবহন বিভাগকে মাস হিসেবে প্রতিদিন গড়ে ১০৩টি ইঞ্জিন সরবরাহ করা হচ্ছে।
এ অবস্থা চলছে প্রায় দুই বছর ধরে। অর্থাৎ প্রতিদিনই গড়ে সাত-আটটি ইঞ্জিনের সংকট থাকছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে ইঞ্জিন সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অতিরিক্ত ইঞ্জিন নেই।
বরং নিয়মিত যেসব ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেনগুলো চলছে, সেখান থেকেও ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাচ্ছে। এ সংকট সমাধান না হলে সামনে ট্রেন চলাচল দুরূহ হয়ে পড়বে।
-কেএম