স্টাফ রিপোর্টার: অনেক নাটকীয় ঘটনার মধ্যে দিয়ে গত (৮ অক্টোবর) রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) অফিস থেকে ঠিকাদারদের নিকট সিডিউল বিক্রি করা হয়।
গত (৯ অক্টোবর) বালুমহালের টেন্ডারের দরপত্র বিক্রির শেষ দিন ছিল। আজ বুধবার দুপুর ১ টায় সিডিউল জমা দেওয়ার শেষ সময় নির্ধারন ছিল। সব মিলিয়ে নিয়ম মেনেই ঠিকাদারগণ সিডিউল ড্রপ করেন, এবং পূর্ব ঘোষিত সময় অনুযায়ী দুপুর ২টার সময় টেন্ডার বাক্স খোলার সময় থাকলেও তা বিকাল ৪টায় ওপেন করার ঘোষনা দেন। পরে বাক্স ওপেন না করে ঠিকাদারদের জানানো হয়, হাইকোট থেকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছে। আর সেই কারনে টেন্ডার স্থগিত করা হচ্ছে।
এ সময় উপস্থিত ঠিকাদাররা উকিল নোটিশ ও স্থগিত আদেশের কপি দেখতে চাইলে ঠিকাদারদের তা দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসক এস এম আব্দুল কাদের, এমনি অভিযোগ ঠিকদারদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম আব্দুল কাদের জানান, হাইকোর্ট থেকে উকিল নোটিশ ও স্থগিত আদেশ আমাদের নিকট এসে পৌঁছেছে। আর সেই কারনেই ঠিকাদারদের করা সকল ড্রপিং সিডিউল সিল করে রাখা হয়েছে। আমরা স্থগিত আদেশ ভ্যাকেট করার জন্য হাইকোটে আবেদন করবো। সেটা ভ্যাকেট হলে তবেই আমারা যে ঠিকাদার ঘাট পাবে তাকে জানাবো।
এদিকে সুজন শেখ নামের এক ঠিকাদার জেলা প্রশাসকের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বলেন, জেলা প্রশাসক স্যারের নতুন নাটক ছাড়া অন্য কিছু নয়। নিদৃষ্ট কোন ব্যক্তি বা সিন্ডিকেটের প্ররোচনায় এমটি বলছেন তিনি। এর আগেও তিনি মামলার দোহাই দিয়ে সিডিউল স্থগিত করেছিলেন। পরে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ঘটনাটি লিখালিখি ও সরকার দলীয় নেতা ও কাটাখালি পৌর মেয়র মোঃ আব্বাস আলী যোগাযোগ করার পর গত (৮ অক্টোবর) সিডিউল বিক্রির নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।
আজ বুধবার জেলা প্রসাশক তিনি আবার বলছেন নোটিশ এসেছে তাই স্থগিত করা হলো। তিনি আরো বলেন, শিঘ্রই আমার ঠিকাদারগণ মিলে সাংবাদিক সম্মেলন করবো। কারন টেন্ডরের নামে আমাদের মতো সাধারন ঠিকাদারদের হয়রানী করা হচ্ছে। এছাড়াও আর মানুষের আশা ভরসার সর্বোচ্চ জায়গা জেলা প্রশাসক কার্যালয়কে বিতর্কিত করা হচ্ছে।
এ নিয়ে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মাননীয় ভূমি মন্ত্রীর গিয়ে অভিযোগ জানাবো। জনগনের টাকার বেতন খেয়ে জনগণকেই হয়রানী তা কোনভাবেই মেনে নেব না।
মোঃ মুক্তা ও সিরাজুল নামের ঠিকাদার ক্ষেভের সাথে বলেন, গত অনুমানিক ৬ মাস যাবত বিনা টেন্ডারে অবৈধভাবে গোদাগাড়ী, মুক্তারপুর, শারদা, চারঘাটও বাঘায় পদ্মানদী থেকে সমান তালে উত্তোলন হচ্ছে বালি। আর ব্যবসা হচ্ছে রমরমা। পাশাপাশি কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। আর বৈধ ব্যবসায়ীরা বেকার অবস্থায় মানবেতর জিবন যাপন করছেন। তারা আরো বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একটি চক্রের কারসাজিতে আটকে আছে শত কোটি টাকা মূল্যের ১৮টি বালুমহালের টেন্ডারের দরপত্র (সিডিউল)। কিন্তু টেন্ডার আটকে থাকলে ব্যবসা থেমে নেই, অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা অবৈধ ভাবে উপরিউক্ত ঘাটগুলিতে চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও তাদের বালু উত্তোলন কার্যক্রম ও ব্যবসা অব্যাহত রয়েছে। এ সময় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে উপস্থিত অন্যান্য ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, চলতি ১৪২৫ বাংলা সনে জেলার চারঘাট, বাঘা ও গোদাগাড়ীতে পদ্মা নদীর ১৪২ হেক্টর আয়তনের মোট ১৮টি বালুমহালের ইজারা হয়নি উচ্চ আদালতে মামলা চলার কারণে।
সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট মামলাটি উচ্চ আদালতে নিস্পত্তি হওয়ায় রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ১৪২৫ বাংলা সনের অবশিষ্ট ৬ মাসের জন্য গত ২৪ সেপ্টেম্বর টেন্ডার আহ্বান করা হয়।
মোঃ সিরাজুল ইসলাম নামের এক ঠিকাদার বলেন, নানা ধরনের সমস্যার কথা বলে আমাদেরকে বৈধ ব্যবসা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আর অসাধু ব্যবসায়ীরা উক্ত ঘাটগুলিতে অবৈধভাবে বালু ব্যবসা চালালেও তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
তারা আরো বলেন, সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে আর কতৃপক্ষ মুখে কুলুপ এটে বসে আছেন, এটা কোন সৎ কর্মকর্তার কাজ হতে পারেনা। অচিরেই সকল অবৈধ ঘাট গুলি বন্ধকরাসহ দ্রুত বৈধ প্রক্রিয়ায় টেন্ডারের মাধ্যমে ঘাটগুলি পুনরায় চালুর দাবি করেন ঠিকাদারগণ।
-আরবি