আইন আদালতঃ
মুখ খুলতে শুরু করেছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিস্কৃত সভাপতি, ক্যাসিনো মাফিয়া ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট।
তিনি রাজধানীর ক্যাসিনো ব্যবসা নিয়ে এমন বিস্ময়কর তথ্য দিচ্ছেন, যা পুলিশ কর্মকর্তাদের কল্পনারও বাইরে।
ইতোমধ্যে বেশ কিছু প্রভাবশালী রাজনীতিকের নাম ফাঁস করেছেন সম্রাট, যাদের তিনি নিয়মিত মোটা অঙ্কের টাকা দিতেন। এক প্রতিবেদনে এমনই জানিয়েছে আমাদের সময়।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, সম্রাটের ফাঁস করা ব্যক্তিদের তালিকায় যুবলীগের শীর্ষপর্যায়ের এক নেতাও রয়েছেন। তবে তাদের নামধাম এ মুহূর্তে গণমাধ্যমে প্রকাশ করা যাবে না বলে জানিয়েছেন সম্রাটকে জিজ্ঞাসাবাদকারী পুলিশ কর্মকর্তারা।
এদিকে সম্রাটের বিরুদ্ধে করা মাদক ও অস্ত্র মামলা তদন্তের ভার র্যাবের হাতে ন্যস্ত করা হচ্ছে। গতকাল ১৬ অক্টোবর, বুধবার পুলিশকে এ আদেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই ধারাবাহিকতায় আজ মামলার নথিপত্র ও সম্রাটকে আনুষ্ঠানিকভাবে র্যাবের কাছে হস্তান্তরের কথা রয়েছে। সম্রাটের সহযোগী আরেক বহিস্কৃত যুবলীগ নেতা এনামুল হক আরমানের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্তভারও র্যাবকে দেয়া হচ্ছে।
সম্রাটের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অস্ত্র ও মাদক মামলায় গত মঙ্গলবার ৫ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন সংশ্লিষ্ট আদালত। একই সঙ্গে তার সহযোগী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহসভাপতি এনামুল হক আরমানেরও ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
প্রথম দিন গতকাল সম্রাটকে কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে রমনা থানা পুলিশ। রাজধানীর ক্যাসিনো ব্যবসায়ের শুরু, বিস্তার, মাসোহারা কারা পেতেন- ইত্যাদি প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের প্রথম দিনই সম্রাট চমকে যাওয়ার মতো তথ্য দিয়েছেন। বেশকিছু প্রভাবশালী রাজনীতিকের নামও বলেছেন সম্রাট, যারা তার কাছ থেকে প্রতিমাসে মোটা অংকের বখরা নিতেন। এর মধ্যে যুবলীগের একজন প্রভাবশালী নেতাও রয়েছেন। তবে পুলিশ তদন্তের স্বার্থে এখনই তাদের নাম গণমাধ্যমে বলবে না বলে জানিয়েছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘সম্রাট ও আরমানের মামলার তদন্তভার পেয়েছে র্যা ব। এখন পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।’
এর আগে গত ৭ অক্টোবর অস্ত্র আইনের মামলায় সম্রাটের রমনা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় সম্রাট ও আরমানের একই থানার পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মাহফুজুল হক ভূঞা তাদের গ্রেপ্তার দেখানোসহ ১০ দিন করে ২০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন।
ওইদিন শুনানির জন্য ৯ অক্টোবর ধার্য করা হয়। কিন্তু এর আগেই কারা কর্তৃপক্ষ সম্রাটকে অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করায় সেদিনের শুনানি পিছিয়ে ১৫ অক্টোবর ধার্য করেছিলেন আদালত।
১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় র্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো চলার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরই আত্মগোপনে চলে যান যুবলীগের দাপুটে নেতা সম্রাট। নানা গুঞ্জনের পর ৭ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ভারত সীমান্তের কাছাকাছি এলাকা থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী আরমানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
সেদিন বিকালে সম্রাটকে সাথে নিয়েই কাকরাইলের ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে তার কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অভিযান শেষে গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ১ হাজার ১৬০টি ইয়াবা, ১৯ বোতল বিদেশি মদ, দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া এবং টর্চারের কাজে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পাওয়ার কথা জানানো হয় র্যাবের পক্ষ থেকে।
এরপর রাজধানীর রমনা থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে সম্রাট ও আরমানের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করে র্যাব।
-কেএম