শিক্ষাঃ
আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় দায় নিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলামকে পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়েছে। ৯ অক্টোবর, বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০০ জন শিক্ষক এ আহ্বান জানান।
রবিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের নিচতলা থেকে আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের এই শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করে বলে দাবি সহপাঠীদের।
এ ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পর গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার পরে প্রকাশ্যে আসেন অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। তবে আবরারের লাশ দেখা, তার স্বজনের খোঁজ খবর নেওয়া বা দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া- এমন কোনো পদক্ষেপই নেননি তিনি। এতে গতকাল বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। সে সময় ভিসিকে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
ছাত্র হত্যার পর ভিসির আচরণে শুরু থেকেই সন্তুষ্ট ছিলেন না শিক্ষকরাও। এর পরিপ্রেক্ষিতেই আজ তার পদত্যাগের আহ্বান জানালেন ৩০০ শিক্ষক।
এদিকে ছাত্রলীগের হাতে আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে ১০ দফা দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলন করছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে আবরার হত্যার ঘটনায় বুয়েটের ভিসিকে আলটিমেটাম দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
বুধবার সকালে বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের ১০ দফা দাবি পড়ে শোনান।
আন্দোলনকারীরা বলেন, দাবি না মানা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন তারা। এ সময় শেরে বাংলা হলের প্রভোস্টকে প্রত্যাহারের দাবি জানান আন্দোলনকারীরা।
বক্তারা বলেন, দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ১১ অক্টোবর বিকেল ৫টার মধ্যে সিসিটিভিতে শনাক্তদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করতে হবে।
আন্দোলনকারীরা আরো জানান, মামলার সব খরচ ও আবরারের পরিবারের ক্ষতিপূরণ বিশ্ববিদ্যালয়কে বহন করতে হবে। মামলাটি দ্রুততম ট্রাইব্যুনালে অধীনে দ্রুত নিষ্পত্তি করার ব্যবস্থা করতে হবে।
দাবিতে আরো বলা হয়, র্যাগের নামে শারীরিক ও মানসিক হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে।
ছাত্ররা আরো দাবি করেন, পূর্বে ঘটা এ ধরনের নির্যাতন ও পরে ঘটা নির্যাতন প্রকাশের জন্য একটি কমন প্ল্যাটফরম তৈরি করতে হবে। তা রিভিউ করে দ্রুততম বিচারের ব্যবস্থা করা।
এ সময় সন্ধ্যা ৭টায় মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচির ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ কর্মসূচি পালন করার আহ্বান জানান তারা।
প্রসঙ্গত, ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে শনিবার বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরে রোববার রাতে শেরে বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে তার লাশ সিঁড়িতে ফেলে রাখা হয়।
এ ঘটনায় আবরারের বাবা ১৯ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের ১১ জনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় কমিটি।