অনলাইন ডেস্কঃ
শিক্ষার্থীদের অসৌজন্যমূলক আচরণে টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৪৮ জন শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন।
আজ সোমবার (৮ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ছাত্রলীগের শিক্ষার্থীদের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদ ও শাস্তির দাবিতে রেজিস্ট্রার বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন তারা।
পদত্যাগপত্র জমা দেয়া ৪৮ জন শিক্ষকদের মধ্যে ২ জন রিজেন্ট বোর্ড সদস্য, ৪ জন ডিন, ৪ জন প্রভোস্ট, ১৪ জন বিভাগীয় চেয়ারম্যান, সকল হাউস টিউটর ও সকল সহকারী প্রক্টরও রয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অভিযোগে জানা যায়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষ ২য় সেমিস্টারের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা হয় শনিবার। এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী এক ছাত্রী অকৃতকার্য হয়েছেন। তার ফলাফল ৪ এর মধ্যে ১.৯৮। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী সর্বনিম্ন ২.২৫ পেলে পরবর্তী সেমিস্টারে উন্নীত হতে পারবে।
এ কারণে ওই ছাত্রীকে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের পক্ষ থেকে রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় অনুষ্ঠিত কোয়ান্টাম মেকানিক্স-১ পরীক্ষায় অংশ নেয়ার অনুমোদন দেয়া হয়নি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অমান্য করে তাকে ৩য় বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার। পরীক্ষা চলাকালে ওই ছাত্রলীগ নেতা তার সহযোগীদের নিয়ে জোরপূর্বক ওই ছাত্রীকে পরীক্ষা কেন্দ্রে সিটে বসিয়ে দেন।
এতে বাধা দেন বিভাগের চেয়ারম্যান ও শিক্ষক ড. মো. আনোয়ার হোসেন ও মো. মহিউদ্দিন তাসনিন। এ বাধা দেয়ার ঘটনায় ছাত্রলীগ সভাপতি সজীব তালুকদার দায়িত্বরত শিক্ষকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করাসহ মারধরের চেষ্টা করেন। নেতাকর্মীদের পাহারায় পরীক্ষা শেষ করেন ওই ছাত্রী।
পরীক্ষা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ডেকে অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের আন্দোলন করেন ওই নেতারা। এ সময় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা বন্ধও করেন ছাত্রলীগ নেতারা।
এদিকে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় বিকেল ৪টায় জরুরি সভা ডাকেন শিক্ষক সমিতির নেতারা। সভায় ছাত্রলীগ সভাপতি সজীব তালুকদার, সহ-সভাপতি মো. ইমরান মিয়া, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাবির ইকবাল ও সহ-সভাপতি আদ্রিতা পান্নার বিচারের দাবি জানানো হয়।
উপাচার্য বরাবর মাভাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি ও ১৫ জন শিক্ষক স্বাক্ষরিত দুটি আবেদনে ওই চার ছাত্রলীগ নেতার বিচারের দাবি জানানো হয়।
পরে সন্ধ্যা ৭টায় উপাচার্যের কক্ষে ছাত্রলীগ নেতা ও শিক্ষকদের নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতারা সভা ত্যাগ করে প্রতিটি হল থেকে ছাত্র-ছাত্রী বের করে অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের আন্দোলন শুরু করেন। এ আন্দোলন রাত ৯টা ৩০ মিনিট থেকে ৩টা পর্যন্ত চলে।
এদিকে উপাচার্যের কনফারেন্স রুমে শিক্ষক লাঞ্ছিতের বিচার না পাওয়ার কারণে সকল শিক্ষক একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
অপরদিকে আন্দোলনে জোরপূর্বক নেয়ার অভিযোগ তুলেছেন সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা। তাদের দাবি যেতে না চাইলেও তাদের জোর করে আন্দোলনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসসহ একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
-আরবি