অনলাইনঃ
বাসদ (মার্কসবাদী)-এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলেন–
“গত ৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিনা নোটিসে অযৌক্তিকভাবে ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে পাটকলগুলো বছরের পর বছর লোকসান গুনে যাচ্ছিলো। সরকার আর লোকসান দিতে পারবে না। এবং এর দায় যথারীতি চাপানো হয় শ্রমিকদের ওপর।
কিন্তু সত্য হলো, এর জন্য দায়ী সরকারের দুর্নীতি-ভুলনীতি, বিজেএমসি’র ( বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন) কর্মকর্তাদের অবাধ লুটপাট। আওয়ামী সরকার পাবলিক -প্রাইভেট পার্টনারশিপের কথা বলে পাটকল বন্ধ ঘোষণা করলো। এর মূল কথা হলো জনগণের প্রতিষ্ঠান পাটশিল্পকে বেসরকারি পুঁজিপতিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া। এর মধ্য দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে পাটকলের সঙ্গে যুক্ত ৫২ হাজার শ্রমিক, তাদের পরিবার। এছাড়া উৎপাদন -বিপণনসহ পাট সম্পর্কিত বিভিন্ন কাজের সাথে যুক্ত প্রায় ৪ কোটি মানুষ।
করোনা মহামারীতে বিপর্যস্ত মানুষের জীবন- জীবিকা । এসময় দরকার ছিলো শ্রমজীবী মানুষের জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে অধিক কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। তা না করে উল্টো পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
বলা হচ্ছে, শ্রমিক ছাঁটাই হবে না। ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’-এর মাধ্যমে শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এতে খরচ হবে ৫ হাজার কোটি টাকা। আমাদের প্রশ্ন, সরকার ১২০০ কোটি টাকা ব্যায় করে পুরনো যন্ত্রগুলো মেরামত করে উৎপাদনে যেতে পারতো। এতে পাটকলগুলো রক্ষা পেতো, শ্রমিকদের কর্মসংস্থান কিছুটা হলেও নিশ্চিত হতো। তা না করে যে ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’-এর কথা বলার মানে হলো- শ্রমিকদের ঠকানোর জন্য, আন্দোলন যেন গড়ে না ওঠে তা সামাল দেওয়ার বুর্জোয়া চালাকি মাত্র।
গোটা পৃথিবীতে কৃত্রিম তন্তুর চাহিদা কমছে, বিপরীতে বাড়ছে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা। দেশের বেসরকারি পাটশিল্পগুলোও লাভজনক অবস্থানে আছে। আমরা দেখেছি- কোন পাবলিক খাতকে বেসরকারিকরণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রথমে খাতগুলোকে লোকসান দেখানো হয়। এরপর বলা হয় এভাবে তো চালানো যায় না এবং সবশেষে বন্ধ করা হয় বা ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুরো প্রক্রিয়ার পেছনে কাজ করে গভীর চক্রান্ত।
দেশের স্বাধীনতার পর বিজেএমসি’র নিয়ন্ত্রণে মোট পাটকল ছিলো ৭৬টি। কমতে কমতে সর্বশেষ ছিলো ২৫টি। তাও বেসরকারি মালিকানায় তুলে দেওয়া হচ্ছে। বিগত বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার বন্ধ করে আদমজী জুট মিল। বর্তমান আওয়ামী সরকারও এ ধরনের গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভিন্ন দল,ভিন্ন সময় কিন্তু শাসকশ্রেণির চরিত্র অভিন্ন।”
পাটকল বন্ধের যে গণবিরোধী সিদ্ধান্ত তা বাতিলের দাবিতে পাটকলের শ্রমিক, শ্রমজীবী মানুষ ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
-শিশির