অনলাইনঃ
অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়ন, দখলদারিত্ব, ভরাটের কারণে আমাদের জলাভূমিগুলো সংকুচিত হয়ে পড়ছে। যার ফলে বিরূপ প্রভাব পড়ছে আমাদের জীবন-জীবিকা, খাদ্য ব্যবস্থা, পরিবেশের উপর।

বাড়ছে সুপেয় পানির সংকট। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরো সংকটাপন্ন হয়ে পড়বে। পানিকে কেন্দ্র করে ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ গ্রহণ করা হয়েছে এবং এসডিজিতেও জলাভূমি রক্ষায় গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

জনকল্যাণ নিশ্চিতে এবং জীবন-জীবিকা রক্ষায় জলাভূমি রক্ষার বিকল্প নেই।

আজ ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সকাল ১১.০০ টায় বিশ্ব জলাভূমি দিবস উপলক্ষ্যে রিভার ডেলটা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি) এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘জনকল্যাণ নিশ্চিতে সকল জলাভূমি দখল ও দূষণমুক্ত করা হোক’ শীর্ষক কর্মসূচি থেকে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

কর্মসূচি থেকে বসিলা ব্রিজ থেকে গুদারাঘাট কলাতিয়া পর্যন্ত পরিদর্শন করা হয়।

উক্ত আয়োজনে বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন রিভার ডেলটা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি) এর চেয়ারম্যান মোঃ এজাজ, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট-এর পরিচালক গাউস পিয়ারী, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি আমির হাসান মাসুদ, স্বপ্নের সিঁড়ি সমাজ কল্যাণ সংগঠনের উম্মে সালমা, শিশুদের মুক্ত বায়ু সংস্থা’র সদস্য সচিব মোঃ সেলিম, এবং মোঃ মানিক। আরো উপস্থিত ছিলেন আরডিআরসি ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর কর্মকর্তাবৃন্দ।

পরিদর্শন কর্মসূচি থেকে দেখা যায় বসিলা ব্রিজ থেকে গুদারাঘাট কলাতিয়া পর্যন্ত অঞ্চলে একাধিক ইটের ভাটা রয়েছে এবং বুড়িগঙ্গা নদীর পানি শিল্প দূষণের প্রভাবে কালো হয়ে গেছে। প্লাস্টিক বর্জ্য, গৃহস্থালী বর্জে ্যর কারণে নদীটি পর্যুদস্ত অবস্থায় রয়েছে।

বিভিন্ন প্রাইভেট হাউজিং কোম্পানিও আবাসন তৈরির জন্য নদীটি দখল করে নিচ্ছে। কর্মসূচি থেকে বক্তারা বলেন, সদিচ্ছা থাকলে এখনো নদীটি উদ্ধার করা সম্ভব। ঢাকার ঐতিহ্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নদীটি রক্ষার আহ্বান জানাই।

পরির্দশন পরবর্তী সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্বে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ জলাভূমিতে বছরের অর্ধেক সময় শস্য উৎপাদন হয় এবং বাকি সময় মাছ চাষ হয়ে থাকে। জলাভূমিতে চাষ হওয়া মাছ আমাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রোটিনের উৎস।

বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের নামে আমাদের নদী-জলাভূমিগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, যার ফলে আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, খাদ্য নিরাপত্তা- সবই হুমকির সম্মুখীন।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের ১৪ টি লক্ষ্যমাত্রার সাথেই জলাভূমির সম্পৃক্ততা রয়েছে। কাজেই এসডিজি অর্জনের লক্ষ্যে সরকারকে জলাভূমি রক্ষায় সচেষ্ট হতে হবে।

বক্তারা আরো বলেন, ১৯৭১ সালে ইরানের রামসারে ‘রামসার কনভেনশন’ চুক্তি স্বাক্ষর করার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জলাভূমি রক্ষার অঙ্গীকার করে।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওড় রামসার সাইট বলে স্বীকৃত। অবৈধ কারেন্ট জাল ও প্লাস্টিক চাঁই এর ব্যবহার, ইঞ্জিনচালিত নৌকার অবাধ চলাচল, পর্যটকদের ব্যবহার করা প্লাস্টিক বর্জে ্যর কারণে হাওরে দূষণের মাত্রা বেড়ে গেছে বহুগুণে।

যথেচ্ছ প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ ও বাঁধ নির্মাণ বন্ধ, পর্যটকদের ভ্রমণের স্থান নির্ধারিত করে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ ও কঠোর বাস্তবায়ন করা না হলে হাওড়টি বাঁচানো সম্ভব নয়।

সম্প্রতি নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করা হয়েছে। একইভাবে জলাভূমিগুলোকেও জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করা সময়ের দাবি।

বক্তারা বলেন, জলবায়ু বিপর্যয়ে সেভাবে ভূমিকা না থাকা স্বত্বেও আমাদের দেশে জলবায়ু বিপর্যয়ের ক্ষতিকর প্রভাব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ভবিষ্যতে আমাদের অধিকাংশ জলাভূমি বিলুপ্তির আশঙ্কা রয়েছে।

ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর রক্ষা, ঝড়ের সময় সুরক্ষা, ভূমিক্ষয় নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা জলাভূমি পালন করে। উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু বিপর্যয় মোকাবেলায় জলাভূমি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

ডেলটা প্ল্যান-২১০০ এর মূল স্তম্ভ বন্যা, নদীভাঙন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা।

এ ধরণের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জনসাধারণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা আবশ্যক।

-শিশির

FacebookTwitter

About Bangla Daily

একটি পরিপূর্ণ বাংলা অনলাইন পত্রিকা। মাতৃভাষার দেশ বাংলাদেশ থেকে সরাসরি সস্প্রচারিত হচ্ছে।

View all posts by Bangla Daily