ডেস্ক রিপোর্টঃ
নোভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (CMSME) প্রতিষ্ঠানসমূহকে পূনরুজ্জীবিত করতে ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে বিশেষ ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে ঋণ আবেদন গ্রহণ থেকে বিতরণ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে যথাসাধ্য সহজ পদ্ধতি অবলম্বন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঋণ বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আহ্বানও জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আরও নির্দেশনা দেয় যে, সকল প্রকার ঋণ/ বিনিয়োগের ওপর ০১ এপ্রিল ২০২০ থেকে ৩১ মে ২০২০ পর্যন্ত সময়ে আরোপিত/আরোপযোগ্য সুদ/মুনাফা ‘সুদবিহীন ব্লকড হিসেবে’ স্থানান্তর করতে হবে।
পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ব্লকড হিসেবে স্থানান্তরিত সুদ/মুনাফা সংশ্লিষ্ট ঋণ/বিনিয়োগ গ্রহীতার নিকট হতে আদায় করা যাবে না এবং এরূপ সুদ/মুনাফা ব্যাংকের আয়খাতে স্থানান্তর করা যাবে না।
এই নির্দেশনার ফলে ব্যবসায়ীমহল বিশেষভাবে উপকৃত হবে বলে মনে করে এফবিসিসিআই। করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধা প্রদানের প্রক্রিয়া সহজীকরণ সম্পর্কিত এফবিসিসিআইয়ের (ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি) প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতে এই বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ অনুযায়ী উদ্যোক্তাদের সহযোগীতা করার লক্ষ্যে ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিটি শাখায় একটি স্বতন্ত্র হেল্প ডেস্ক প্রতিষ্ঠা করা হবে। যেখান থেকে উদ্যোক্তারা খুব সহজে আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ সংক্রান্ত তথ্যাদি জানতে পারবেন। আর ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ঋণ/বিনিয়োগ বিতরণ কার্যক্রম যথাযথভাবে তদারকি করার লক্ষ্যে নিজ নিজ প্রধান কার্যালয়ে একটি মনিটরিং টিম গঠন করবে। যারা উদ্যোক্তাদের নাম, ফোন নাম্বার এবং ই-মেইল এসএমই এন্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অবহিত করবেন।
এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক, সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধা পেতে জামানতের পরিবর্তে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও গ্রুপ গ্যারান্টিসহ, ঋণগ্রহীতা নির্বাচন, ঋণ বিতরণ, তদারকি আদায় কার্যক্রমে এফবিসিসিআই ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর সহায়তা নিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ।
গত ৫ এপ্রিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা ভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা অক্ষুন্ন রাখা এবং শিল্প কারখানায় জনবলকে কাজে বহাল রাখার প্রয়োজনে ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে চলতি মূলধন ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধা প্রবর্তণের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার প্রেক্ষিতে সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদেও ঋণ/বিনিয়োগ প্রদান প্রক্রিয়া যাতে সহজ ও সাবলীল হয় সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রস্তাবনা পেশ করেন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। তিনি সকল গণমাধ্যমের জন্য সহজ স্বর্তে ঋণ প্রদানের বিষয়টির ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
এছাড়া এফবিসিসিআই এই ঋণ/বিনিয়োগ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত থাকবে এবং কোন সমস্যা সৃষ্টি হলে সম্ভাব্য সার্বিক সহযোগীতা প্রদান করে অর্থনৈতিক কর্মকা- পুররুজ্জীবিত করতে সর্বদা সচেষ্ট থকবে বলেও আশ্বাস দেন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।
এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, “চলতি মূলধন ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধা যাদের জন্য প্রযোজ্য তাদের মধ্যে সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো এবং ব্যাংকারদের সাথে সম্পর্ক অন্যান্যদের তুলনায় অনেক কম। ফলে এই সমস্ত উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে যদি স্বাভাবিক অবস্থার মানদন্ড নিরীক্ষা , আর্থিক বিবরনী, আইসিআরআরএস পর্যালোচনাপূর্বক উদ্যোক্তা নির্বাচন করা হয় তাহলে অনেক উদ্যোক্তা যোগ্যতা হারাবে এবং ঋণও বিনিয়োগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হবে।
অন্যদিকে ঋণ ও বিনিয়োগের পরিমান নির্ধারণ ও চাহিদার সাথে সমন্বয় না হলে তার ফলাফলও কাঙ্খিত হবে না।”
মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারনে অর্থনৈতিক কর্মকা- পুনরুজ্জীবিতকরনের লক্ষ্যে এ পর্যন্ত ঘোষিত বিভিন্ন খাতে আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের আওতায় ঋণ/বিনিয়োগ ও অন্যান্য সুবিধাদি তফসিলি ব্যাংক কতৃক সাবলীলভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক পুনঃঅর্থয়ান হিসেবে ইতিমধ্যেই ৭০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এফবিসিসিআই সভাপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তÍফা কামালকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন
প্রস্তাবনায় সিএমএসএমই প্রতিষ্ঠানসমূহ যেমন- ট্রেড, ফ্যাক্টরি, দোকান, ডিলার, খুচরা বিক্রেতা, পরিবেশক, ফার্মাসি, রেস্টুরেন্ট, পেট্রোল পাম্প, ট্রাভেল/ট্যুরিজম/রিসোর্ট, পরিবহন, ফ্যাশন হাউস, বিউটি পার্লার, নারী উদ্যোক্তা, সেলুনসহ, ক্ষুদ্র কুটির ও মাঝারি শিল্পের সদস্য প্রতিষ্ঠানের জন্য এই ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধা জেলা চেম্বারের পরামর্শের ভিত্তিতে প্রদান করা এবং প্রয়োজনে রিকভারির সময়ও জেলা চেম্বার ও এসোসিয়েশনের সহায়তা গ্রহণ করা হবে বলে উলেখ করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ/বিনিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে যথাযথ সহযোগিতা না করলে তা এফবিসিসিআইকে অবগত করার আহ্বানও জানান তিনি। এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা সেটিও তদারকি করবে এফবিসিসিআই।
এছাড়াও মিডিয়া, সংবাদপত্র, টিভি, ট্রাক, কার্গো, লঞ্চ ইত্যাদির ক্ষেত্রে এবং ব্যাকওয়ার্ড রপ্তানীর ক্ষেত্রে শ্রমিক-কর্মচারীদে বেতনের ব্যাংক তালিকার ভিত্তিতে ও সংশ্লিষ্ট এসোসিয়েশনের পরামর্শ অনুযায়ী এই ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধা কোনো রকম জটিলতা ছাড়া প্রদানেরও দাবি জানানো হয়।
-শিশির