কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর, না মানলে জেল জরিমানা

কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর, না মানলে জেল জরিমানা
কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর, না মানলে জেল জরিমানা

আইন আদালতঃ
দেশে ওমিক্রনের সংক্রমণ রোধ করতে আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে বিধিনিষেধ কার্যকর হবে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক কর্মক্ষেত্রে মাস্ক পরতে হবে। বন্ধ থাকবে সভা-সমাবেশ।

এ ছাড়া অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস-ট্রেন-লঞ্চ চলবে। প্রত্যেকে মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক। এসব নির্দেশনা অমান্য করলে জেল-জরিমানার মুখে পড়তে হবে।

আর পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিধিনিষেধ কার্যকর থাকবে।

জানা গেছে, সব অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কারখানা খোলা রেখে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচলে যাত্রীদের দুর্ভোগ ও সঙ্কট দেখা দেবে। অর্ধেক আসনে যাত্রী নিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায়ের ঝামেলা যাত্রীদেরকেই মোকাবেলা করতে হবে।

গত বছর করোনা সংক্রমণ কমাতে বিধিনিষেধের সময় সঙ্কটকালে বাসে ভাড়া বাড়ানোর অজুহাতে লেগুনা, টেম্পু, অটোরিক্সা ও রিক্সায়ও ভাড়া বহুগুণ বাড়তি আদায় করা হয়েছিল। যা আয় কমে যাওয়া সাধারণ মানুষের সঙ্কটককে আরও ঘনীভূত করে। সম্প্রতি সময়ে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ায় গণপরিবহনে ভাড়া ইতিমধ্যেই বাড়িয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনাভাইরাস জনিত রোগ (কোভিড-১৯) এর নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব ও দেশে এ রোগের সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ১৩ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো। ১৩ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই ১১ দফা মেনে চলতে হবে।

গত ১০ জানুয়ারি সোমবার বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ১১ দফা নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। নির্দেশনাগুলো হলো- ১. দোকান, শপিং মল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলক সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। অন্যথায় তাকে আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।

২. অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ব্যত্যয় রোধে সারা দেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে।

৩. রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনার টিকা সনদ দেখাতে হবে।

৪. ১২ বছরের বেশি বয়সী সব শিক্ষার্থীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্ধারিত তারিখের পরে টিকা সনদ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।

৫. স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পোর্টগুলোতে ক্রুদের জাহাজের বাইরে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করতে হবে।

স্থলবন্দরগুলোতেও আগত ট্রাকের সঙ্গে শুধু ড্রাইভার থাকতে পারবে। কোনও সহকারী আসতে পারবে না। বিদেশগামীদের সঙ্গে আসা দর্শনার্থীদের বিমানবন্দরে প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।

৬. ট্রেন, বাস এবং লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নেওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকারিতার তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। সব ধরনের যানের চালক ও সহকারীদের আবশ্যিকভাবে কোভিড-১৯ টিকা সনদধারী হতে হবে।

৭. বিদেশ থেকে আসা যাত্রীসহ সবাইকে বাধ্যতামূলক কোভিড-১৯ টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে।

৮. স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরার বিষয়ে সব মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

৯. সর্বসাধারণের করোনার টিকা এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রচার এবং উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে তারা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সহায়তা গ্রহণ করবে।

১০. উন্মুক্ত স্থানে সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সমাবেশ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে।

১১. কোনো এলাকার ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে পারবে।

প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনা বাস্তবায়নে গতকাল বুধবার (১২ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা বৈঠক করেন।

বৈঠকে শেষে (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, পরিবহন মালিক এবং শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বিধিনিষেধ বাস ও মিনিবাসে শতভাগ যাত্রী নিয়ে চলাচলের প্রস্তাত দিয়েছ। বাস মালিকরা বলছেন- ৫০% যাত্রী পরিবহন করা হলে পরিবহন সংকট চরম আকার ধারণ করবে ও যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়বে। পরিবহন মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের এ প্রস্তাব সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের কাছে পাঠানো হবে। তারপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

নূর মোহাম্মদ মজুমদার আরও বলেন, এখন বাস ভাড়া বাড়ানো যৌক্তিক হবে না। কারণ গত নভেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বাসে যাত্রী পরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন বাস মালিক সমিতির সভাপতি মশিউর রহমান রাঙা বলেন, বিমান যেভাবে সব সিটে যাত্রী নেয়, সেভাবে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব সিটে যাত্রী বহনের দাবি জানিয়েছি। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চালক-শ্রমিকদের ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য দাবি করছি। আমরা কোনোভাবেই ভাড়া বৃদ্ধি করতে চাই না।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন, অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গাড়ি চললে সংকট হবে। হঠাৎ করে বাসের সংখ্যাও বাড়ানো সম্ভব হবে না।

আরেক প্রশ্নের জবাবে রাঙ্গা বলেন, আমার গাড়ি আমি নিয়ন্ত্রণ করি। এনায়েত নিয়ন্ত্রণ করেন না। সেক্রিফাইস অনেক করেছি। আমরা অগ্রিম ট্যাক্স দেই। আগামী বছরের ট্যাক্স আগেই দিয়ে দেই। যখন তিন মাস বাস চলেনি, সে সময়কার ট্যাক্স ফেরত পাইনি। এরপরও আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। ভাড়া বৃদ্ধি ছাড়াই পরিবহন চলবে। শতভাগ যাত্রী নিয়ে চলাচলের আবেদন করেছি, প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যদি ব্যবস্থা করেন ভালো। না করলেও, শ্রমিকদের যেন শতভাগ টিকার ব্যবস্থা করেন। আমরা কোনো ধর্মঘটের মধ্যে যাব না।

-টিপু

FacebookTwitter