নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
পুঁজিবাজারে আসছে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওকে সামনে রেখে রোড শো করলো ওয়ালটন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জমকালো রোডশো’তে অংশ নেন দেশের শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ এবং বিনিয়োগকারীগণ। খোলামেলা পরিবেশে ওয়ালটনের ব্যতিক্রমী আয়োজনের প্রসংশা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি ২০১৯) সন্ধ্যায় রাজধানীর বসুন্ধরায় ওয়ালটনের করপোরেট অফিসে অনুষ্ঠিত রোড শো’তে বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানির পরিচিতি, আর্থিক অবস্থা, ভবিষ্যত পরিকল্পনা এবং আইপিও সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এসএম নুরুল আলম রেজভী, ম্যানেজিং ডিরেক্টর এসএম আশরাফুল আলম, পরিচালক এসএম মাহবুবুল আলম, ইন্ডিপেডেন্ট ডিরেক্টর এম ফরহাদ হোসেইন এফসিএ, ওয়ালটনের আন্তর্জাতিক বিজনেস ইউনিট (আইবিউ) প্রেসিডেন্ট এডওয়ার্ড কিম, ‘ট্রিপল এ’ ফাইনান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান খাজা আরিফ এবং প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মোহম্মদ তাবারক হোসেইন ভুঁইয়া বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই – সেপ্টেম্বর ২০১৮) হিসাব অনুযায়ী কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১০ টাকা ৫৯ পয়সা এবং নীট পরিসম্পদ মূল্য ২০৮ টাকা। পুঞ্জিভূত মুনাফা ২,৭৯৮.১৩ কোটি টাকা এবং শেয়ার প্রতি নেট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো ১৭.২০ টাকা।
প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদিত মূলধন ৬০০ কোটি, পরিশোধিত মূলধন ৩০০ কোটি টাকা। পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলনের লক্ষ্য ওয়ালটনের। উত্তোলিত এ অর্থ থেকে কারখানার সম্প্রসারণ, আধুনিকায়ন, গবেষণা ও মানউন্নয়নে ৬২.৫ কোটি টাকা, ব্যাংক লোনের আংশিক দায় পরিশোধে ৩৩ কোটি টাকা এবং আইপিও খরচ সংকুলানে ৪.৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।
স্বাগত বক্তব্যে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এসএম নুরুল আলম রেজভী বলেন, দেশের চাহিদা মিটিয়ে ওয়ালটন পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ওয়ালটনের এই আকাশচুম্বী সফলতার অংশীদার দেশের প্রতিটি মানুষ। তার তাই জনসাধারণকে ওয়ালটন তথা দেশের উন্নয়নের অংশীদার করতেই শেয়ারবাজারে আসা।
ম্যানেজিং ডিরেক্টর এসএম আশরাফুল আলম বলেন, ফ্রিজ, এসি, টেলিভিশন, কম্প্রেসরের মতো উচ্চ প্রযুক্তিপণ্য বাংলাদেশে তৈরি হবে, এটা যেন ছিল রূপকথার আষাঢ়ে গল্পের মতো। কিন্তু খুব অল্প সময়ে ওয়ালটন সেটা করে দেখিয়েছে। এ বছর দেশের বাজারে ২০ লাখ ফ্রিজ বিক্রির টার্গেট নেয়া হয়েছে। ওয়ালটনের লক্ষ্য এখন বিশ্বের অন্যতম গ্লোবাল ব্র্যান্ড হওয়া। ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেখা পণ্য দিয়ে উন্নত বিশ্বের বাজার দখল করা। ওয়ালটন কোনো প্রাইভেট প্লেসমেন্ট দিচ্ছে না জানিয়ে তিনি আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করেন, পুঁজিবাজারের নিয়ম-কানুন মেনেই তারা ব্যবসা পরিচালনা করবেন।
পরিচালক এসএম মাহবুবুল আলম বলেন, ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনে বিশ্বের সেরা ব্র্যান্ড হতে ইতোমধ্যেই রোডম্যাপ তৈরি করেছে ওয়ালটন। ওয়ালটনকে আন্তর্জাতিক পরিম-লে আরো ব্যাপকভাবে নিয়ে যাওয়ার এই অগ্রযাত্রায় পুঁজিবাজারে ওয়ালটনে বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের জনগণ সামিল হবে বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেন।
পুঁজিবাজারে ট্রিপল এ ফাইনান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ওয়ালটনের ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে এবং প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড রেজিস্ট্রার টু দ্যা ইস্যু হিসেবে কাজ করছে।
রোড শো অনুষ্ঠানে যোগ্য বিনিয়োগকারী (ইলিজিবল ইনভেস্টর) হিসেবে বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যান্ড পোর্টফোলিও ম্যানেজার, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, মিউট্যুয়াল ফান্ড, স্টক ডিলার, ব্যাংক, ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি, বীমা কোম্পানি, অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ম্যানেজার, অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড, রিকগনাইজড পেনশন অ্যান্ড প্রভিডেন্ড ফান্ড, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ওয়ালটনের এই আয়োজনের প্রসংশা করেছেন বিনিয়োগকারীরা। ওয়ালটন কর্পোরেট অফিসের পরিবেশ এবং সামগ্রিক আয়োজনে তারা মুগ্ধ। নিজস্ব ভবনের বিশাল খোলামেলা পরিবেশে রোডশো আয়োজনকে তারা ব্যতিক্রমী বলে মন্তব্য করেছেন। বিশেষ করে মৌসুমী ফল, পিঠা, যাকস ও দেশীয় খাবারের কর্নারগুলো ছিলো আকর্ষণীয়। ছিলো গল্প করার মতো স্পেশাল কর্নার এবং খেলাধুলার ব্যবস্থাও। সাড়ে ৭ শতাধিক বিনিয়োগকারীর উপস্থিতিতে এ আয়োজন উপস্থাপনা করেন চিত্রনায়ক আমিন খান ও মডেল লাবণ্য।
লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ লিঃ এর এস এম বেলাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, নিজস্ব ভবনে বিশাল খোলামেলা পরিবেশে এ ধরনের আয়োজন সত্যিই ব্যতিক্রমী। এর আগে যত রোডশো’ হয়েছে তার মধ্যে এটিকে তিনি সেরা বলেছেন। ভবিষ্যতে যারা এ ধরনের রোড শো করবেন তাদের জন্য এটা অনুকরণীয় বলে উল্লেখ করেন।
আইল্যান্ড সিকিউরিটিজ লিমিটেড এর মহিউদ্দিন আহমেদ এবং ইউনিক্যাপ সিকিউরিটিজ এর আল মামুন চৌধুরী বলেছেন, রোড শো’র অন্তরঙ্গ পরিবেশ তাদের মুগ্ধ করেছে।
-এসএম