অর্থনীতিঃ
ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েটস (আইডিয়া) ফাউন্ডেশন’ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের উপর ফোকাসসহ উন্নয়ন সহযোগীদের একটি সংস্থা, যারা স্বাধীন গবেষণা, নীতি বিশ্লেষণ, অ্যাডভোকেসি, উপদেষ্টা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নমূলক কাজে নিযুক্ত।

আইডিয়া ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বাংলাদেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ত্বরান্বিত করতে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস-এর (এমএফএস) গুরুত্ব ও ভূমিকা প্রসঙ্গে “রোল অব এমএফএস এনহ্যানসিং ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক এক সেমিনার আয়োজিত হয়েছে।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো: মেজবাউল হক; বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ড. লিলা রশিদ; বিকাশ-এর সিইও কামাল কাদির; পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান মনসুর; এবং আইডিয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)’র সাবেক চেয়ারম্যান কাজী এম. আমিনুল ইসলাম।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইডিয়া ফাউন্ডেশন-এর সেক্রেটারি ও সাবেক সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক; এবং মুক্ত আলোচনা সঞ্চালনা করেন আইডিয়া ফাউন্ডেশন-এর সহ-সভাপতি ও প্রাক্তন মুখ্য সচিব ও মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) মো: আবুল কালাম আজাদ।

এছাড়া, বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে পরিচালিত আইডিয়া ফাউন্ডেশনের একটি গবেষণা সম্পর্কে আলোচনা করেন আইডিয়া ফাউন্ডেশন-এর সভাপতি কাজী এম. আমিনুল ইসলাম এবং আইডিয়া ফাউন্ডেশন-এর ডেপুটি সেক্রেটারী ও প্রধান গবেষক হোসাইন এ. সামাদ।

স্বাগত বক্তব্যে আইডিয়া ফাউন্ডেশন-এর সেক্রেটারি মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, “আইডিয়া একটি অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সংস্থা এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।

এমএফএস ত্বরান্বিত হলে আমাদের এসডিজি’র ১৭টি লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে এবং ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ আশানুরূপ সফলতা অর্জন করবে।

এই সেমিনারের মধ্য দিয়ে দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধিতে মোবাইল ফাইন্যান্সিং-এর অসামান্য গুরুত্ব ও ভূমিকা সম্পর্কে সকলে ধারণা লাভ করবেন বলে আশা করি।”

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, “বাংলাদেশ প্রযুক্তিগত দিক থেকে ব্যাপক উন্নতি সাধন করে যাচ্ছে। আমরা পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর একটি থেকে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলা দেশগুলোর একটি হিসেবে বিশ্বব্যাপি পরিচিতি লাভ করেছি।

টেলিকম ইন্ডাস্ট্রিই আমাদের জন্য আধুনিক সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করবে। বাংলাদেশ সরকার দেশের প্রায় ৯৮ শতাংশ এলাকা ৪জি সুবিধার আওতায় আনতে পেরেছে, যার জন্য দেশের টেলি-কোম্পানিগুলো প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।

একই সাথে আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী করার জন্য কাজ করছি। দেশের এমএফএস বিভাগে যেই বিপ্লব সাধন হচ্ছে তার পিছে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে দেশের সাধারণ জনগণ। তাই তাদের কল্যাণে এই বিভাগটি আরও উন্নত, সহজতর ও নিরাপদ করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

বিশেষ করে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় অর্থ-সঞ্চয় সুবিধা আনা যায় কিনা সে বিষয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে দেশবাসী একত্রে কাজ করবো বলে আমি আশাবাদী।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, “মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় বাংলাদেশকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়।

সর্বস্তরের মানুষকে আর্থিক লেনদেনের আওতায় আনা এই সেবার সবচেয়ে বড় সাফল্য, বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের যেসব মানুষ ব্যাংকিং সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এটি নিঃসন্দেহে দেশের অর্থনৈতিক খাতকে আরও শক্তিশালী ও সহজলভ্য করেছে।”

আইডিয়া ফাউন্ডেশন-এর ডেপুটি সেক্রেটারী ও প্রধান গবেষক হোসাইন এ. সামাদ বলেন, “ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন বলতে শুধু ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাক্সেস নয়, এখানে অর্থের ব্যবহার কতটা উপকারে আসছে বা সাশ্রয় হচ্ছে ও টেকসই হচ্ছে কিনা ইত্যাদি বিষয়গুলোও দেখতে হবে। বিশ্বব্যাপি ৫৯% এবং বাংলাদেশে ৪৩% প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। আবার প্রত্যন্ত অঞ্চলে হত-দরিদ্র মানুষগুলোও ব্যাংকিং সেবার অ্যাক্সেস পাচ্ছেন না।

কিন্তু এমএফএস-এর মাধ্যমে এই মানুষগুলো খুব সহজেই আর্থিক সুবিধার অ্যাক্সেস পাচ্ছেন। আর সর্বস্তরের মানুষ যখন আর্থিক লেনদেন সুবিধার আওতায় থাকবেন, তখনই দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ত্বরান্বিত হবে।”

সহ-সভাপতি মো: আবুল কালাম আজাদ বলেন, আজকের এই আলোচনা প্রসঙ্গে সকলের পরামর্শ, মতামত ও সহযোগিতা আমাদের একান্ত কাম্য।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ধারণা তুলনামূলক নতুন হলেও, ইতোমধ্যেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে এটি যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। গ্রামীণ বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকিং সেবার তুলনায় মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারকারী বেশি।

আমরা আশা করি, এই সেক্টরটি আরও উন্নত হবে এবং দেশবাসীর ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ করবে।”

আইডিয়া ফাউন্ডেশন-এর সভাপতি কাজী এম. আমিনুল ইসলাম বলেন, “সাশ্রয়ী আর্থিক সেবা কীভাবে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাধনে ব্যপক ভূমিকা রাখছে।

এই পরিবর্তনের মাধ্যমে যেসব মূখ্য সম্ভাবনাসমূহ উঠে আসবে তার মধ্যে রয়েছে; আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে লিঙ্গ-বৈষম্য দূরীকরণ, শিশু কল্যাণমূলক কর্মসূচী বৃদ্ধি, সঞ্চয় বৃদ্ধি ও আর্থিক ঝুঁকি কমানো এবং নতুন ব্যবসায়িক সুযোগ সৃষ্টি।”

-শিশির

FacebookTwitter

About Bangla Daily

একটি পরিপূর্ণ বাংলা অনলাইন পত্রিকা। মাতৃভাষার দেশ বাংলাদেশ থেকে সরাসরি সস্প্রচারিত হচ্ছে।

View all posts by Bangla Daily