একযুগের অপেক্ষা কি শেষ হবে ব্রাজিলের!

স্পোর্টসঃ
যে পেরু ব্রাজিলের কান্নার কারণ হয়েছিল, বাংলাদেশ সময় আজ রাত ২টায় কোপা আমেরিকার ফাইনালে শিরোপার লড়াইয়ে তাদেরই বিপক্ষে মাঠে নামবে ব্রাজিল।

বলা যায়, পেরুর কারণেই ব্রাজিলের ডাগআউটে জায়গা পেয়েছেন তিতে।
২০১৬ কোপা আমেরিকায় পেরুর কাছে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়েছিল কার্লোস দুঙ্গার ব্রাজিল। এরপরই ব্রাজিল দলের ম্যানেজার হন তিতে।

মহাদেশীয় এই শিরোপা ব্রাজিল সর্বশেষ জিতেছিল ২০০৭ সালে। তারপর একযুগ ধরে ব্রাজিলকে অপেক্ষায় রেখে কোপা আমেরিকার শিরোপা।

২০১৬ সালের পর ব্রাজিলের ফুটবল দারুণ তিনটি বছর কাটিয়েছে, তাতে বেদনা কম, আনন্দই বেশি। কিন্তু নামটা তো ব্রাজিল, শিরোপা না জিতলে তাদের মন ভরবে কেন! বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে বাদ পড়েছে, এবার কোপা আমেরিকার শুরু থেকেই তাই গুঞ্জন—এই টুর্নামেন্ট না জিতলে তিতেকে বিদায় করে দিতে পারে ব্রাজিল! ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন (সিবিএফ) অবশ্য বিবৃতি দিয়ে সেসব গুঞ্জন নাকচ করে দিয়েছে, কিন্তু ফেডারেশনের বিবৃতি দেওয়াই বোঝায়, গুঞ্জনের জোর কতটা ছিল।

২০১৪ সালে যে মারাকানা স্টেডিয়ামে ৭ গোলের কলঙ্ক লেগেছিল ব্রাজিলের গায়ে সেখানে আজ শেষ পর্যন্ত ব্রাজিল শিরোপার উচ্ছ্বাসে ভাসবে কি? তিতে কি নিজের চাকরি নিয়ে সব গুঞ্জনেও পানি ঢেলে দিতে পারবেন?

সহজভাবে ভাবলে ব্রাজিলের তা না পারার কোনো কারণই চোখে পড়বে না। এমনিতে পরিসংখ্যান তাদের পক্ষে, এর আগে যে চারবার নিজেদের মাটিতে কোপা আমেরিকা আয়োজন করেছিল ব্রাজিল, প্রতিবারই টুর্নামেন্ট শেষ হয়েছে নীল-হলুদের শিরোপা উচ্ছ্বাসে। কি আক্রমণে, কি রক্ষণে, কি মাঝমাঠে—দুই দলের প্রতিভার পার্থক্যও ব্রাজিলকে নিরঙ্কূশ ফেবারিট বানিয়ে দেয়, সেটি নেইমার না থাকার পরও। এবার টুর্নামেন্টেও এখন পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচে একটা গোলও খায়নি ব্রাজিল। গোল খাওয়া কী, শুধু আর্জেন্টিনার বিপক্ষে সেমিফাইনালে দুই অর্ধে কিছু সময় ছাড়া ব্রাজিলকে ভয়ও ধরাতে পারেনি কেউ। এই গর্বটা নিয়েই শেষ করার ইচ্ছা ব্যক্ত হলো মিডফিল্ডার কাসেমিরোর কণ্ঠেও, ‘কোনো গোল না খেয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করাও আমাদের একটা লক্ষ্য।’

সেখানে পেরু! গ্রুপ এই ব্রাজিলের কাছেই তো হজম করেছে ৫ গোল, সেমিফাইনালের আগ পর্যন্ত চার ম্যাচের মধ্যে গোল পেয়েছিলও মাত্র এক ম্যাচে! কিন্তু ব্রাজিলের কাছে ওই হারের পরই যেন বদলে গেছে পেরু। কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারেচ উরুগুয়েকে হারিয়ে সেমিফাইনালে কিছুটা বুড়িয়ে যাওয়া চিলিকে উড়িয়ে দিয়েছে ৩-০ গোলে। নামটা পেরু বলেই হয়তো সেটিও চমক নয়।

২০১৬ কোপায় সেমিফাইনালে উঠেছে পেরু। ১৯৮২-এর পর ২০১৮ বিশ্বকাপ দিয়েই জানিয়েছে বিশ্বমঞ্চে তাদের উপস্থিতি। কোচ রিকার্দো গারেকার অধীনে ধীরে ধীরে উন্নতির প্রমাণ দেয় র‍্যাঙ্কিংয়ে ২১-এ উঠে আসাও। কিন্তু নিজের দল কতটা অধারাবাহিক, তা বোঝাতে গত মার্চেই গারেকা বলেছিলেন, ‘আমাদের দিনে আমরা যে কাউকে হারাতে পারি, তবে অন্য দিনে যেকোনো দলও আমাদের হারিয়ে দিতে পারে।’ সে কারণেই আজ ফাইনালে কোন পেরু দেখা দেয়, তার ওপর নির্ভর করছে ব্রাজিলের শিরোপার পথে বাধাটা কঠিন হবে কি না।

ব্রাজিলও কি একটু সহজই ভাবছে ম্যাচটাকে—এমন প্রশ্নও অবশ্য উঠছে। উঠছে দানি আলভেজের এক টুইটের কারণেই। সেমিফাইনালে পেরুর হাতে চিলির বিদায়ের পর ব্রাজিল অধিনায়ক টুইট করেছিলেন, ‘দ্যাটস ইট!’ সবাই সেটির অর্থ বের করে নিয়েছে, পেরু ফাইনালে ওঠায় আলভেজ বুঝি শিরোপা জিতছেন ধরেই নিয়েছেন! এ নিয়ে চারদিকে সমালোচনার মধ্যে আলভেজ অবশ্য পেরুকে অসম্মান করেননি বলেই জানিয়েছেন। কাসেমিরোও প্রতিপক্ষকে দিচ্ছেন পূর্ণ সম্মান, ‘দারুণ একটা ফাইনালই হবে। কঠিন ম্যাচ। আমরা এরই মধ্যে জিতে গেছি ধরে নিতে পারি না। আমাদের মাঠে নেমে খেলতে হবে। ওরা উরুগুয়ে-চিলির মতো অসাধারণ দলকে বিদায় করে দিয়েছে। ওদের পূর্ণ সম্মানই করছি আমরা।’

ফাইনালের আগে কোনো দলকে ছোট করে দেখা অবশ্য ব্রাজিলের ইতিহাসও সমর্থন করবে না। ঘরের মাটিতে ১৯৫০ বিশ্বকাপের ‘মারাকানাজো’র স্মৃতি নিশ্চয়ই ব্রাজিল ভুলে যায়নি। সেবার উরুগুয়ে আর আলসিদেস ঘিঘিয়া কাঁদিয়েছিল শিরোপা নিশ্চিত ধরে রাখা ব্রাজিলকে। সেই মারাকানায় একই ভুল নিশ্চয়ই করতে দেবেন না তিতে!
‘মারাকানা’ বলেই হয়তো বলতে হচ্ছে অপেক্ষার অবসান কি হবে ব্রাজিলের!

-এইচএম

FacebookTwitter