লাইফস্টাইল ডেস্কঃ

ঋতুস্রাব, একজন নারীর জীবনে খুবই স্বাভাবিক ও নিয়মিত বিষয়। কিন্তু এই স্বাভাবিক নিয়মটিই সামাজিক রক্ষণশীলতার কারণে হয়ে ওঠে সংকোচের, লজ্জার।

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে পিরিয়ড নিয়ে জনসম্মুখে কথা বলাটাও যেন মহাবিব্রতকর। এই স্বাভাবিক বিষয়টিকে সমাজে ট্যাবু করে রাখা হয়েছে যার ফলে তৈরি হয় নানান ভুল ধারণা।

পিরিয়ড চলাকালীন একজন নারী হরমোনজনিত কারণে একদিকে যেমন শারীরিক ও মানসিক ব্যাপক এক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যান। আবার তেমনি বাংলাদেশের মতো রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থায় তাকে পোহাতে হয় নানান ঝক্কি-ঝামেলাও।

রাস্তাঘাটে চলাফেরা থেকে শুরু করে বাড়িতে পর্যন্তও সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় তাকে। ঘরে হোক বা বাইরে, কোনো পুরুষ যেন বুঝতে না পারে মেয়েটি তার জীবনের একটি খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্যে মাসের কয়েকটি দিন অতিবাহিত করছে। এসব নিয়ে এক মানসিক প্রেশার একইভাবে যেভাবে থেকে যায়, সঙ্গে থাকে শারীরিক কিছু সমস্যাও।

পিরিয়ডের দিনগুলোতে তীব্র পেট, পিঠ, কোমর ব্যথা আর সঙ্গে অনেকসময় থাকে বমি বমি ভাব।

এভাবেই মেয়েদেরকে চালিয়ে যেতে হয় দৈনন্দিন সকল কাজকর্ম। শারীরিক এসব প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি এ সময় দেখা দেয় মানসিক নানান সমস্যা। হরমোনজনিত কারণে খুবই সংবেদনশীল মানসিক অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এছাড়াও বিষণ্নতা, রাগ হওয়া, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকা, খিটখিটেভাব অনুভব করেন। এ সময়ে প্রয়োজন সঠিক যত্নের পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন থাকা, ভিজে যাওয়া স্যানিটারি ন্যাপকিন পড়ে না থাকা, আর ঠিকমতো পুষ্টিকর খাবার চালিয়ে যাওয়া। যত বেশি সম্ভব আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

এবার আসা যাক সামাজিক কিছু বাস্তব উদাহরণে। ‘আচ্ছা তোদের প্রতি মাসে কি যেন হয়? ‘কিরে কোন দিক দিয়ে অসুস্থ তুই, চলে নাকি এখন? বন্ধুদের এসব বিব্রতকর কথাবার্তার সম্মুখীন হতে হয়েছে বেশির ভাগ মেয়েকেই।

মেয়েদের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করা তো দূরের কথা, প্রকৃতির এই স্বাভাবিক নিয়মকে হাস্যরসাত্মক, ব্যঙ্গাত্মক বিষয় বানিয়ে দেয়া হয় অনেকসময়। এক্ষেত্রে সামাজিক অবস্থা যেমনভাবে দায়ী একইভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে পিরিয়ড সংক্রান্ত কোনো শিক্ষামূলক বিষয় বইয়ের অন্তর্ভুক্ত না করাও অনেকাংশেই দায়ী। মেয়েদের যেমন পিরিয়ড সংক্রান্ত শিক্ষার প্রয়োজন, একইভাবে একটি ছেলেরও সামাজিক মূল্যবোধ জাগ্রত, নারীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং পিরিয়ডের বিষয়ে সঠিক ধারণা দেয়ার জন্য এ সংক্রান্ত শিক্ষার প্রয়োজন। প্রকৃতিক নিয়মে পিরিয়ড এলেও এ সময় নারীদের অংশগ্রহণ করতে দেয়া হয় না কোনো ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে। আর এসব বিষয়কে কেন্দ্র করেও অনেক সময় বিব্রতকর প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।

স্যানিটারি ন্যাপকিন। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও আমাদের সমাজ ব্যবস্থা নারীদের এমন অবস্থায় দাঁড় করিয়ে রেখেছে যে, স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে যাওটাও নারীদের জন্য অত্যন্ত সংকোচের বিষয়। কোনো নারী স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে গেছেন আর তার দিকে দোকানে থাকা কেউ বা বিক্রেতা আড়চোখে তাকাননি, এমন ঘটনা খুব কমই পাওয়া যাবে। সেজন্য চক্ষুলজ্জার খাতিরে অনেকেই নিজে থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে দোকানে যেতে রাজি হন না। এক্ষেত্রেও সমাজের রক্ষণশীলতাই প্রধানত দায়ী। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমন অনেক নারী আছেন যারা স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করলেও, নিজেরা কখনও দোকান থেকে কেনেননি। আর গ্রামের বেশির ভাগ নারীই এ সময়টাতে স্যানিটারি ন্যাপকিনের বদলে কাপড় ব্যবহার করেন। স্পর্শকাতর এই দিনগুলোতে পরিচ্ছন্ন না থাকলে কতখানি স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারেন সে বিষয়েও তাদের কোনো ধারণা নেই।

চিকিৎসকরা বলেন, পিরিয়ডের দিনগুলোতে অপরিচ্ছন্ন থাকলে বা কাপড় ব্যবহার করলে জরায়ুতে ও মুত্রাশয়ে ইনফেকশন, পিরিয়ড অনিয়মিত হওয়া এবং অতি মাত্রায় পেট ব্যথা হয়ে থাকে।

পিরিয়ড সংক্রান্ত অজ্ঞতা আমাদেরকে এমন অবস্থানে নিয়ে গেছে, যেখানে বেশির ভাগ নারীরই প্রজননস্বাস্থ্য সম্বন্ধে কোনো শিক্ষা নেই। আর এই অজ্ঞতা আসে খোলামেলা আলোচনার অভাবে। কিন্তু আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপট আমাদেরকে পিরিয়ড নিয়ে মুক্ত আলোচনার কোনো সুযোগ দেয় না। মেয়েলি বিষয় বলে আগেই মুখ চেপে ধরা হয়। বাইরে আলোচনা তো অনেক দূরের কথা, নিজের বাড়িতে বাবা-ভাইয়ের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলার যেন অনুমতি নেই। এমন মেয়ে হাতে গোনা কয়েকজনই পাওয়া যাবে, যারা নিজে মুখে বাবাকে বা ভাইকে বলেছেন বাইরে থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনে এনে দিতে।

চুপ থাকা সমাধান নয়। আসুন মুক্ত আলোচনা করি। কেননা আলোচনার মাধ্যমেই আসে সমাধান।

-বিকে

FacebookTwitter

About Bangla Daily

একটি পরিপূর্ণ বাংলা অনলাইন পত্রিকা। মাতৃভাষার দেশ বাংলাদেশ থেকে সরাসরি সস্প্রচারিত হচ্ছে।

View all posts by Bangla Daily