রাবি প্রতিনিধিঃ
শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী আবেদনের নির্ধারিত যোগ্যতা না থাকলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নূর নুসরাত সুলতানা নিয়োগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন একই পদে নিয়োগপ্রার্থী নুরুল হুদা।
শনিবার সকাল ১১টায় রাজশাহী নগরীর টিএফসি রেস্টুরেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন তিনি।
এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর নুরুল হুদার স্ত্রীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়ার শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দর-কষাকষির একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। এরপর প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন নুরুল হুদা।
সংবাদ সম্মেলনে নুরুল হুদা অভিযোগ করেন, যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে নূর নুসরাত সুুলতানা আইন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সেই বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী স্নাতক বা স্নাককোত্তরের যেকোনো একটিতে প্রথম শ্রেণী থাকা বাধ্যতামূলক ছিলো। কিন্তু নুসরাত সুলতানা স্নাতকে দ্বিতীয় শ্রেণী ও স্নাতকোত্তরে ৬৩.৩৩ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন যা দ্বিতীয় শ্রেণীর সমমানের।
নুরুল হুদা উল্লেখ করেন, নুসরাত স্নাতক ও স্নাতকত্তোর সম্পন্ন করেছেন লন্ডনের বিপিপি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি স্নাতকোত্তারে ৬৩.৩৩ শতাংশ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন যা বিশ্ববিদ্যালয়টির গ্রেডিং পলিসি অনুযায়ী দ্বিতীয় শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেডিং পলিসি অনুযায়ী নুসরাতের প্রাপ্ত নম্বর বি-গ্রেড অর্থাৎ ৩.০০ হয়। নুরুল হুদার অভিযোগ, নুসরাত সুলতানার স্নাতকোত্তরে প্রাপ্ত নম্বরকে ১ম শ্রেণী বা ৩.৫০ বিবেচনা করে তাকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগে নানা অনিয়মের অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রীর সাথে উপ-উপাচার্যের ফোনালাপ ফাঁসের পর তিনি (উপ-উপাচার্য) আমাকে চাকরির প্রস্তাব দেন। একই সঙ্গে তিনি আমাকে এর জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়ারও প্রস্তাব দেন এবং বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে বলেন।’
এছাড়া নিজের কন্যা ও জামাতাকে নিয়োগ দিতে উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তন করেছেন বলে অভিযোগ করেন নুরুল হুদা।
তিনি বলেন, অধ্যাপক আব্দুস সোবহান দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য হওয়ার পর পূর্বের শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা বাতিল করে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করেন। কারণ, পূর্বের নীতিমালা অনুযায়ী বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ফলাফলে প্রথম থেকে পঞ্চম পজিশনে থকা বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু উপাচার্যের জামাতা বিভাগে ৬৭তম ও মেয়ে ২২তম ছিল।’
এদিকে নুরুল হুদার স্ত্রীর সঙ্গে উপ-উপাচার্যের ফাঁস হওয়া ফোনালাপটি অর্থ লেনদেন বিষয়ক ছিল বলে স্বীকার করেছেন তিনি। উপ-উপাচার্য তাকে নিয়োগ দেয়ার জন্য অর্থ দাবি করেছেন বলেও জানান তিনি। সেই সঙ্গে, নিয়োগ বাণিজ্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জড়িত আছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। তবে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি কোনও তথ্য প্রমাণ হাজির করেননি।
নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে নুরুল হুদা বলেন, ‘তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে তাদের কাছে আমি নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ হাজির করব।’
-শিশির