কূটনৈতিকঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনেস্কোকে রিমোট লার্নিং এবং অনলাইন শিক্ষাকে বৈশ্বিক জনসম্পদ হিসেবে ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
কারণ অনলাইন শিক্ষা কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন একটি “নতুন স্বাভাবিক” হিসেবে বিকশিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহামারী চলাকালীন, সংস্থান এবং প্রযুক্তির অভাব স্কুলে ভর্তির সাক্ষরতার হার এবং যুব ও প্রাপ্তবয়স্কদের শেখার ক্ষেত্রে আমাদের কয়েক দশকের অর্জনকে বিপন্ন করে তুলেছে।
রিমোট লার্নিং এবং অনলাইন এডুকেশনকে বিশ্বজনীন সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করার জন্য আমি এই অগাস্ট বডিকে (ইউনেস্কো) আহ্বান জানাই।’
আজ এখানে ইউনেস্কোর ৪১তম সাধারণ সম্মেলনে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
তিনি ইউনেস্কোকে সরকার, বেসরকারী খাত এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে অংশীদারিত্ব এবং সম্পদের সমাবেশ করার জন্য অগ্রাধিকারের বিষয় হিসাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
মহামারী কষ্টার্জিত অর্জনগুলিকে ক্ষুণœ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি বড় ত্রুটি প্রকাশ করেছে।’
ইউনেস্কোর মতে, বিশ্বের প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী আংশিক বা সম্পূর্ণ স্কুল বন্ধের দ্বারা প্রভাবিত হয়। “অনলাইন শিক্ষা মহামারী চলাকালীন একটি “নতুন স্বাভাবিক” হিসাবে বিকশিত হয়েছিল,” তিনি বলেন, “তবুও, এটি একটি নতুন বিভাজনও প্রকাশ করেছে।”
শেখ হাসিনা অবশ্য বলেছেন, ডিজিটালাইজেশন, উন্নত পরিসেবা এবং তথ্যের অবাধ প্রবাহ বাড়িয়েছে, তবে ক্ষতিকারক বিষয়বস্তু এবং ঘৃণাত্মক বক্তব্য ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ডিজিটাল সরঞ্জাম এবং প্ল্যাটফর্মের অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
“ইউনেস্কোর মতো বিশ্ব সংস্থাগুলিকে এই সমস্যাটির সমাধানের কাজ করা উচিত,” উল্লেখ করে বলেন, এটি সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতার উপর উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বিশ্বের আরও অনেক দেশের জন্যই একটি প্রাণঘাতী বাস্তবতা।
তিনি বলেন, “জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর নেতৃস্থানীয় কণ্ঠস্বর হিসাবে, আমরা উচ্চাভিলাষী জলবায়ু অঙ্গীকার গ্রহন করেছি।
আমরা ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের বিদেশী বিনিয়োগের ১০টি কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিল করেছি এবং আমরা আশা করি যে দেশগুলো বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য বেশি দায়ী তারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে।”
তিনি ইউনেস্কোকে জলবায়ু শিক্ষার উপর আরও বেশি জোর দেয়ার এবং জলবায়ু চ্যালেঞ্জের বিষয়ে বৃহত্তর সচেতনতা ও সংবেদনশীলতা বাড়াতে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা করার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, “বৈশি^ক উষ্ণতা বৃদ্ধির দ্রুত গতি আমাদের সমুদ্রের পরিবেশকে প্রভাবিত করেছে। এটি জরুরি বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং জ্ঞানের জন্য আহ্বান জানায়।”
তিনি বলেন, ইউনেস্কো আন্তঃসরকারি সমুদ্রবিজ্ঞান কমিশনের (আইওসি) মধ্যে একটি উপকূলীয় এবং সামনের সারির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। “আমরা আমাদের অঞ্চলে আইওসি’র একটি শক্তিশালী উপস্থিতি দেখতে চাই।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউনেস্কোর সাফল্য মূলত জনগণের জীবনযাত্রার উন্নয়নের প্রভাবের ওপর নির্ভর করে।
“যেহেতু আমরা একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, একটি শক্তিশালী, গতিশীল, উদ্ভাবনী বহুপাক্ষিক সংস্থার প্রয়োজনীয়তা আগের চেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘শান্তির প্রতিরক্ষা গঠনের’ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ইউনেস্কোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে প্রস্তুত।
তিনি ইউনেস্কোকে বাংলাদেশের সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার মহান আত্মত্যাগকে চিহ্নিত করে ২১শে ফেব্রুয়ারি ‘শহীদ দিবস’ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
তিনি বলেন, “জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিশ্বব্যাপী, আমরা শান্তির সংস্কৃতির ধারণাকে প্রচার করি- এমন একটি ধারণা যা সহনশীলতা, সম্মান এবং সহানুভূতির মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত।”
শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষা একটি মৌলিক মানবাধিকার এবং এটি মানব সমাজের উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।
সরকার প্রধান বলেন, “অতএব, বাংলাদেশে আমরা শিক্ষা নিয়ে একটি টার্গেটেড পন্থা তৈরি করেছি। সুনির্দিষ্ট নীতিগত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় তালিকাভুক্তি, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় লিঙ্গ সমতা এবং বালিকা শিক্ষায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছি।”
“অনুরূপভাবে, আমরা ভবিষ্যত কর্ম-জগতের জন্য ব্যবহারিক প্রয়োজনকে মোকাবেলা করে বিশ্বাস-ভিত্তিক শিক্ষাকে আধুনিক করেছি। আমরা জাতিগোষ্ঠীর নাগরিকদের জন্য মাতৃভাষা ভিত্তিক শিক্ষা প্রদান করছি,” তিনি বলেন।
তিনি আরো বলেন, দেশের প্রায় ৮৩ হাজার স্কুলে আইসিটি ডিভাইস সরবরাহ করা হয়েছে। প্রায় ৩ লাখ ২৭ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ২০১০ সাল থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করে আসছে। এ বছর সরকার প্রায় ৪শ’ মিলিয়ন পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শিক্ষকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেয়া হয়েছে। যেহেতু আমরা কোভিড পরিস্থিতির উন্নতির সাথে আমাদের স্কুল খুলেছি, আমরা ১২ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দিচ্ছি,”।
-কেএম/বাসস