তাসনিম জারাঃ

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন যে অনুমোদন পেল, তার কার্যকারিতা আসলে কত শতাংশ? ৬২, ৭০, ৯০ নাকি অন্য কোন সংখ্যা?​

৬২ শতাংশ কার্যকারিতা পাওয়া গেছে যাদেরকে পূর্ণ দুই ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে তাদের মাঝে। ৯০ শতাংশ কার্যকারিতা দেখা গিয়েছিল যাদেরকে প্রথমে হাফ ডোজ আর পরে ফুল ডোজ দেয়া হয়েছে তাদের মাঝে। আর ৭০.৪ শতাংশ সংখ্যাটা এসেছে এই দুইটি সংখ্যা একত্র করার পর। এই সংখ্যাগুলো ছিল নভেম্বরের ৪ তারিখ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুসারে।​

গতকাল MHRA অনুমোদন দিয়েছে পূর্ণ দুই ডোজের রেজিমেন। সুতরাং নভেম্বরের ৪ তারিখ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুসারে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা হওয়ার কথা ৬২ শতাংশ। কিন্তু যুক্তরাজ্যের রেগুলেটর ডিসেম্বরের ৩০ তারিখে জানিয়েছে ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা ৭০ শতাংশ হয় পূর্ণ এক ডোজ দেয়ার ৩-১২ সপ্তাহের মধ্যে। আবার কয়েকদিন আগেই অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রধান বলেছে তারা একটি উইনিং ফর্মুলা পেয়েছে, যার মাধ্যমে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ফাইজার বা মডার্নার কার্যকারিতার সমকক্ষ হবে। তবে তিনি এ বিষয়ে আর কোন তথ্য দেন নি। ​

এত কথার মধ্যে কোনটা সত্য? সবগুলো সংখ্যাই কি সঠিক হতে পারে?​

এ বিষয়ে তথ্য এখনো অপ্রতুল। MHRA বলেছে নতুন তথ্য কিছুদিনের মধ্যে প্রকাশ করা হবে। আমি যেটুকু তথ্য বিভিন্ন সূত্র থেকে পেয়েছি সেটা দিয়ে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা মূলত কত সেটা বোঝানোর চেষ্টা করবো। ​

প্রথমে ধারণা করা হচ্ছিলো ডোজের পার্থক্যের কারণে কার্যকারিতা বেশি বা কম হচ্ছে। অর্থাৎ প্রথমে হাফ ডোজ দিলে ও পরে ফুল ডোজ দিলে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বেড়ে যায়।



কিন্তু নতুন ডাটা আসার পরে সে ধারণা পাল্টে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে যে কার্যকারিতা বাড়ার কারণ হচ্ছে এক ডোজ ভ্যাকসিন দেয়ার পরে পরবর্তী ডোজ দেয়ার মধ্যবর্তীকালীন সময়ের ব্যবধান। যুক্তরাজ্যের রেগুলেটর দেখেছে যে এক মাসের পরিবর্তে তিন মাসের ব্যবধানে পূর্ণ দুই ডোজ দিলে কার্যকারিতা ৬২ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। তবে এই ডাটা অল্প সংখ্যক মানুষের থেকে নেয়া। ​

গতকাল ভ্যাকসিনটি অনুমোদন দেয়ার পরে যুক্তরাজ্যের ডাক্তারদের জন্য কিছু তথ্য দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে একটা স্ক্রিনশট দিয়ে দিচ্ছি। এখানে দেখতে পাচ্ছেন দুই ডোজের মধ্যবর্তীকালীন সময় যখন ৬-৮ সপ্তাহ থেকে বাড়িয়ে ৯-১২ সপ্তাহ বা তার বেশি করা হয়, তখন শরীরে S-binding antibody-র পরিমাণ অনেক অনেক বেড়ে যায়। S-binding antibody ছাড়াও neutralising antibody একই ভাবে বেড়েছে যখন দুই ডোজের মাঝের সময়ের ব্যবধান বাড়ানো হয়েছে।​

তবে কতটুকু অ্যান্টিবডি তৈরি হলে কতটুকু সুরক্ষা পাওয়া যাবে, সেই ব্যাপারে এখনো তথ্য অপ্রতুল, তাই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।​


আমার ধারণা অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রধান এই সময়ের ব্যবধানের কথা চিন্তা করেই হয়তো উইনিং ফর্মুলার কথা বলেছেন। যুক্তরাজ্যে এক থেকে তিন মাসের ব্যবধানে ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ দেয়ার অনুমোদন দিয়েছে সেদেশের রেগুলেটর। আমরা শীঘ্রই এই থিওরি কতটুকু ভুল আর কতটুকু সত্য হয় সেটা বুঝে যাবো। ​

আশা করি এই লেখা থেকে পরিষ্কার হয়েছেন যে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ঠিক কত, সে বিষয়ে আমরা এখনো চূড়ান্ত কিছু বলতে পারবো না। কতদিনের ব্যবধানে ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে সেটার উপরে নির্ভর করে কার্যকারিতা সম্ভবত বেড়ে যায়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী প্রথম পূর্ণ ডোজ দেয়ার ৩-১২ সপ্তাহের মধ্যে ৭০ শতাংশ, আর ৩ মাসের ব্যবধানে পূর্ণ দুই ডোজ দিলে ৮০ শতাংশ কার্যকারিতা দেখা গেছে।​

তবে কার্যকারিতার বিষয়ে একটা বিষয় না উল্লেখ করলেই নয় – অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন যারা পেয়েছে, তাদের মধ্যে কেউ করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় নি।

সূত্রঃ লেখকের ফেসবুক

FacebookTwitter

About Bangla Daily

একটি পরিপূর্ণ বাংলা অনলাইন পত্রিকা। মাতৃভাষার দেশ বাংলাদেশ থেকে সরাসরি সস্প্রচারিত হচ্ছে।

View all posts by Bangla Daily